ঢাকা ফোক ফেস্ট

নগরে মেঠো সুরের দোলা

  • মেহেদী হাসান, নিউজরুম এডিটর | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৬, ১০:১২ পিএম
নগরে মেঠো সুরের দোলা

ঢাকা: ইট পাথরের এই নগরের বুকে নেমে এলো মেঠো সুরের মনমাতানো অন্যরকম দোলা। হেমন্তের শিশিরসিক্ত সন্ধ্যায় বাউলের একতারা যেন ফিরিয়ে নিয়ে গেল শহর থেকে দূরে, কোনো এক পল্লী মায়ের কোলে। শান্ত হয়ে আসা ঘন সন্ধ্যা যেন সুরের দোলায় চমকে উঠলো। দোতারা, হারমোনিয়াম আর বায়ার মুগ্ধকর সুরে সুরে চিরন্তন গ্রামবাংলা ভেসে উঠলো মানসপটে।

রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের শুরুটা হলো এমন করেই। প্রথমে শুরু পাহাড়ি বাঁশির সুরের মুগ্ধতা। গানের সঙ্গে সঙ্গে পল্লবী ড্যান্স গ্রুপের শিল্পীরা দেখালেন লোকনৃত্য। ‘হেইয়া রে হেইয়া জোরে মারো টেন’ ও ‘বকুল ফুল বকুল ফুল সোনা দিয়া হাত কেন বান্ধাইলি’ গানের সঙ্গে নাচ পরিবেশন করলেন শিল্পীরা।

মেরিল নিবেদিত উৎসবের আয়োজক সান ইভেন্টস। হেমন্তের শিশিরসিক্ত সন্ধ্যায় দোতারা, হারমোনিয়াম আর বায়ার মুগ্ধকর সুরে সুরে প্রথমেই হবিগঞ্জের আবদুর রহমান বাউল ধরলেন, ‘আমি তোমার হইতে পারলাম না’। একেবারেই গ্রাম বাংলার মাটির সুবাস মাখানো সে গান। এরপর ‘তুমিও মানুষ আমিও মানুষ’। লোকগানে অন্যতম দিক দেহতত্ত্বের কথা শোনা গেল গানে গানে।

আবদুর রহমান বাউল মূলত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের প্রধান শিষ্য। দেহতত্ত্ব ও ভাবতত্ত্বের মধ্য দিয়ে জীবনের অর্থ খুঁজে ফেরা এ শিল্পীর কণ্ঠে আরও শোনা যায় শাহ আবদুল করিমের গান ‘বন্ধে মায়া লাগাইছে পিরিতি শেখাইছে’, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ছাড়াও আরো জনপ্রিয় বেশ কিছু লোকসংগীত।

এরপর মঞ্চে আসেন কুষ্টিয়ার শিল্পী টুনটুন বাউল। লালনের অনুসারী এ শিল্পীর কণ্ঠে শোনা গেল লালনের বিখ্যাত সব গান। যুক্তরাজ্যের সাইমন থ্যাকার্স সাভারা কান্তির সঙ্গে ভারতের রাজু দাস বাউল ও বাংলাদেশের ফরিদা ইয়াসমিনের পরিবশেনাটি ছিল এক কথায় অনন্য। একেবারে প্রাশ্চাত্যের লোকসংগীতের সঙ্গে প্রাচ্যের খাঁটি লোকসংগীতে অপূর্ব সংমিশ্রণ বলা যায়।

এর পর মঞ্চে আসেন পাকিস্তানের শিল্পী জাভেদ বশির। হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিকাল ঘরানার এ শিল্পী বাংলাদেশে অধিক পরিচিত লাভ করেন বলিউডের ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বাই দোবারা’ চলচ্চিত্রে ‘ইয়ে তুনে ক্যায়া কিয়া’ গানের মধ্য দিয়ে। সে সঙ্গে ইউটিউবে ‘কোক স্টুডিও পাকিস্তান’ দেখেও যে তার বড় ধরণের ভক্ত এ দেশে তৈরি হয়েছে, তার প্রমাণ মিললো তার নাম ঘোষণা হতেই।

উৎসবের প্রথম দিনের শেষ আর্কষণ ছিলেন বাংলার ফোকসম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম। গানের মঞ্চ থেকে রাজনীতির মাঠ সব জায়গায় সফল এ শিল্পীর নাম ঘোষণা হতেই হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে পুরো স্টেডিয়াম। তিনি ‘মরার কোকিলে’, ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু’ গানসহ তার জনপ্রিয় সব গান গেয়ে শোনান। আর প্রতিটি গানের শ্রোতারাও মিলিয়েছেন কণ্ঠ।

সব মিলিয়ে তিনদিনের এ উৎসবের প্রথম দিনেই সুরের কাছে সমর্পিত গান প্রেমীদের আগমনে পুরো প্রাঙ্গণ রূপ নেয় মহাসংগীতযজ্ঞে। এ উৎসবে সহযোগিতা করছে জিপি মিউজিক, ঢাকা ব্যাংক ও মাইক্রোসফট। এবারের উৎসবের বাংলাদেশসহ সাত দেশের শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন।

দ্বিতীয় দিনের আয়োজন: আগামীকাল শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিনের মূল আর্কষণ ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কৈলাশ খের। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে গাইবেন জালাল ও লতিফ সরকার। আরও থাকছে বাউল শফি মণ্ডল আর লাবিক কামাল গৌরবের যুগলবন্ধী। নিজেদের গান নিয়ে আসবেন ভারতের লোকব্যান্ডদল ইন্ডিয়ান ওশেন। লোকজ সুরের সঙ্গে ফ্লামেঙ্কো নাচের যুথবদ্ধ পরিবেশনা থাকছে স্পেনের কারেন লুগো ও রিকার্ডো মোরোর।

সোনালীনিউজ/এমএন 

Link copied!