বর্ণাঢ্য আয়োজনে বসন্তবরণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭, ১০:৪২ এএম
বর্ণাঢ্য আয়োজনে বসন্তবরণ

ঢাকা : রাজধানীর বহুতল দালানগুলোর ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সকালের সূর্য। বাসন্তী রঙের শাড়ি পরেছেন মেয়েরা। খোঁপায় তাদের নানা রঙের ফুল। প্রকৃতিতে সাজ সাজ রব। যেন বলে দিচ্ছে ‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/ কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে।’

এর ছোঁয়া লেগেছিল রাজধানীর সবখানে। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন বসন্ত বরণ উৎসবে উদ্বেল ছিল গোটা বাঙালি জাতি। তরু-পল্লবের রঙ লেগেছে সবার প্রাণে। সকালে সানাই-সারেঙ্গির সুরে দিনটি পালিত হয় চারুকলার বকুলতলায়। এতে যোগ দিয়ে অন্ধকার পেছনে ফেলে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সবাই। চারুকলা ছাড়াও দিনের শুরু থেকেই তরুণ-তরুণীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাতিয়ে রাখেন ফাল্গ–নের উৎসবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বন্ধুকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহিরা ফারজানা। তিনি বলেন, ‘বাঙালি উৎসবের জাতি। শীতকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়েই বসন্ত বরণে চলছে আয়োজন। এদিন কি ঘরে বসে থাকা সম্ভব ? তাই তো সেজেগুজে ঘুরতে এসেছি। আর একটু পরই দলবল নিয়ে অন্য বন্ধুরাও আসবে, সেই সঙ্গে সারাদিন চলবে  ঘোরাঘুরি।’

বসন্তের  ছোঁয়া লেগেছিল চ্যানেল আই ভবনের ছাতিম তলায়ও। সকালে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও সুরের ধারার শিল্পীরা সবাই মিলে গেয়ে ওঠেন ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল’।  এরপর একে একে ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’, ‘ফাগুনের শুরু হতে শুকনো পাতা গেল ঝরে’, ‘ধীরে ধীরে বও ওগো উতল হাওয়া’, ‘আকাশ আমায় ভরলো আলোয়’ গানগুলো। অনুষ্ঠানের মাঝে মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেন। উপস্থাপক মৌসুমী বড়ুয়া আমন্ত্রণ জানান তাকে। 

আফজাল হোসেন বললেন, ‘এরকম সকাল আর বন্যা যদি গায়, তাহলে কে কথা শুনতে চায়! আসুন আমরা বন্যার গান শুনি।’ কিন্তু গানের মাঝে মাঝেই কথা বলেছেন তারা। এই যেমন শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব নিয়ে বন্যার কাছে জানতে চেয়েছিলেন আফজাল হোসেন। বন্যা বললেন, ‘শান্তিনিকেতনে প্রথম বসন্ত উৎসব করেছিলেন সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাইরে ছিলেন। দোল পূর্ণিমার রাতে আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠান। সেটা ছিল দোল উৎসব। যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তা জানতে পারলেন, তিনি খুশি হলেন। এরপর বর্ষার গান নিয়ে বর্ষা মঙ্গল অনুষ্ঠান আয়োজন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই থেকে বিভিন্ন ঋতুতে উৎসব হচ্ছে শান্তিনিকেতনে।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবি নিয়েও কথা বলেছেন তারা। বন্যা বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতেই ছবি আঁকার চর্চা ছিল। ওই সময় বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা ৬ নং জোড়াসাঁকোতে আসতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবি দেখতে।’ আজকের অনুষ্ঠানে নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেছেন আফজাল হোসেন। আরো আবৃত্তি করেছেন হাসান আরিফ। তিনি বললেন, ‘আমি রবীন্দ্রনাথের গান পড়ব।’ রবীন্দ্রসংগীত ‘তুমি একটু কেবল বসতে দিও পাশে’ আবৃত্তি করেন তিনি। আবৃত্তি শেষ হতেই তা গাওয়া শুরু করেন বন্যা। এই যুগলবন্দিতে মুগ্ধ হন সবাই।

‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ গানের সঙ্গে আবার মঞ্চের সামনে আসেন নৃত্যশিল্পীরা। আবির ছড়িয়ে পুরো পরিবেশকে রাঙিয়ে দিয়ে যান তারা। অনুষ্ঠান শেষ হলেও তার রেশ রয়ে যায় সবার মধ্যে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!