প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনা রে‍াধে কঠোর সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২০, ১১:১০ পিএম
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় করোনা রে‍াধে কঠোর সরকার

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে কঠোর অবস্থানে সরকার। ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার সবশেষ ভাষণের পর থেকে ভাইরাসটি রোধে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের নানা কঠোর ও কার্যকর উদ্যোগ দেশজুড়ে দৃশ্যমান।

রোগটির চিকিৎসাব্যবস্থা সম্প্রসারণ, রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষার আওতা বাড়ানো, ঢাকার বাইরে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা ও পর্যায়ক্রমে তা সারা দেশে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ভাইরাস রোধে সতর্কতা হিসেবে ‘সামাজিক দূরত্ব’ (সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং) রক্ষা ও সন্দেহভাজনদের ‘কোয়ারেন্টাইনে’ থাকতে বাধ্য  করা ও তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য মাঠে নেমেছে প্রশাসন। সরকারের নীতিনির্ধারক সূত্র বাংলাদেশের খবরকে এসব তথ্য জানায়।

দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও বিশেষ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। দল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য (এমপি), মন্ত্রিসভার সদস্যসহ শীর্ষ নেতাদের এলাকার জনগণের পাশে দাঁড়াতেও নির্দেশনা দেন দলীয়প্রধান।

কোনো সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিজের সংসদীয় এলাকার জনগণের পাশে এ মুহূর্তে না থাকলে তাদের তালিকা করতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়কে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।

নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে। দলের সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনগণের পাশে দলীয় সহায়তা কার্যক্রম নিয়ে নেতাকর্মীরা এখন আছেন বলে দাবি দলটির শীর্ষ নেতাদের।

সূত্র বলছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার আগে ও পরে কয়েক মন্ত্রীর এ বিষয়ে ‘অগোছালো বক্তব্য’ থেকে দেশের মানুষ রোগটির প্রতিরোধে সরকারের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছিলেন না।

তখন থেকেই তারা প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া শেখ হাসিনার কাছ থেকে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ ও বক্তব্য প্রত্যাশা করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এতে তিনি এ মুহূর্তে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে মানুষকে প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা জানান।

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণে বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা যেমন বলেছেন, তেমনি তিনি এ দুর্যোগ মোকাবিলায় জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। করোনা দুর্যোগের কারণে যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটি নিয়েও সরকারের প্রস্তুতির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে ও জাতিকে আশ্বস্ত করেছে। বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য দেশবাসীকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের পক্ষ থেকে দশ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জনগণ তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কার্যত ঘরেই অবস্থান করছে। সরকার ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করোনা মোকাবিলায় যা যা করার প্রয়োজন, তারা তাই করছে।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ ও বিভিন্ন দিকনির্দেশনার পর করোনা মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রম আরো গতি পেয়েছে। ভাইরাসটি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এ মুহূর্তে করণীয় যে ছয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে, বাংলাদেশও এখন এসব বিষয়ে যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে কিছু কাজ বাংলাদেশ আগেই শুরু করতে পারত বলে মনে করেন তারা। এ ছাড়া বৈশ্বিক রোগ করোনায় গোটা পৃথিবী আক্রান্ত হওয়ায় এক দেশ অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল রোগটির পরীক্ষার যন্ত্র, চিকিৎসাসামগ্রী, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা উপকরণ, বিশেষজ্ঞ সেবা ও অন্যান্য সহায়তার জন্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ কূটনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে করোনার মতো স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতেও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও চীন বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। রোগ শনাক্তকরণ কিটের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়কে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত শনাক্তকরণ কিটের ব্যাপারে তাই কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। করোনা ঠেকাতে সার্কভুক্ত দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলোর প্রস্তাবিত সুপারিশমালা বাস্তবায়নে  একযোগে কাজ করছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠিত যৌথ তহবিলে সরকার ১৫ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, করোনার উপস্থিতি শনাক্তের পরীক্ষার আওতা বাড়ানো হচ্ছে। কোনো ব্যক্তির প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহের কাজ এখন থেকে ভিন্নভাবে করা হবে। প্রথমদিকে শুধু বিদেশফেরত ও রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলেও এখন আরো মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন যারা, তাদের নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি ও যাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে কোভিড-১৯-এর লক্ষ্মণ, উপসর্গ দেখা গেলে তাদেরও আইইডিসিআর পরীক্ষা করছে। সামাজিকভাবে বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে আইইডিসিআর। দশ দিনের ছুটিতে যারা ঢাকার বাইরে চলে গেছেন, জেলা পর্যায়ের হটলাইনগুলোতে যোগাযোগ করে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরীক্ষাকেন্দ্রে আনা হবে বলে গতকাল বাংলাদেশের খবরকে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি কেন্দ্রে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এত দিন শুধু রাজধানীর আইইডিসিআরে এ পরীক্ষা হতো। ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল চিকিৎসা ও আইসোলেশনের জন্য পুরোপুরি তৈরি। ঢাকায় ৮টি পরীক্ষার যন্ত্র রয়েছে। দেশের অন্য ৭টি বিভাগে করোনার পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ চলছে।

ঢাকায় ১০ হাজার ৫০টিসহ সারা দেশে ১৪ হাজার ৫৬৫টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ২৯০টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে মোট ১৬ হাজার ৭৪১ জনকে সেবা দেওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে, যারা জনগণকে সেবা দেবেন।

করোনা প্রতিরোধে সারা দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ভাইরাসটি রোধে সতর্কতা হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কাজের ক্ষেত্র বন্ধ থাকায় অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাদের ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ টাকা দিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে গ্রাম পর্যায়ে সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহে যারা কাজ করবেন, তাদের মধ্যে সবার প্রশিক্ষণ দেওয়া এখনো শুরু হয়নি। হাসপাতালে সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও প্রশাসনের লোকদের এখনো পুরোপুরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘দেশের ৬৪ জেলা পর্যায়ের এবং ১০০টি উপজেলার কর্মীদের ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ইপিআইয়ের মাঠকর্মীদের নমুনা সংগ্রহের কাজে লাগানো হবে। জেলা সদর হাসপাতালগুলোকে করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসায় ব্যবহারের চেষ্টা চলছে।’

করোনা রোধে বিভিন্ন জেলায় জীবাণুনাশক ছিটানোর পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে তৎপর রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। বৃত্ত এঁকে নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে কেনাকাটা ও নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় রাখতে টহল দিচ্ছেন তারা। হোম কোয়ারেন্টাইন মানতেও বাধ্য করা হচ্ছে। বিদেশফেরতরা ১৪ দিন বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারান্টাইন না মানলে পাসপোর্ট জব্দের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!