চলছে বাক-বিতণ্ডা

ভাড়া দ্বিগুণ সিটও সিঙ্গেল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১, ১১:০৩ পিএম
ভাড়া দ্বিগুণ সিটও সিঙ্গেল

ঢাকা : ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। এ ঘোষণা আসার পর ইতোমধ্যেই ঘরমুখী মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে সরকার বিধিনিষেধ শিথিলের যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সব শিথিলতা বজায় থাকবে।

তবে ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আগের কঠোর বিধিনিষেধগুলো আবারও কার্যকর হবে। আর এতে ঘটেছে বিপত্তি। যারা বাড়ি যাবেন তাদের আটকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এছাড়া দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি শতভাগ আসন পূর্ণ করে বাস ঢাকা ছাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়ি গেলে লকডাউনের আগেই ফিরে আসতে পারবেন কি না, সেটা নিশ্চিত না করে ঢাকা ছাড়তে চাচ্ছেন না যাত্রীরা। আর যারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই ঢাকা ছাড়ছেন একেবারেই।

সকাল থেকে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে দেখা যায়, তুলনামূলক কম ভিড় বাসগুলোর টিকিট কাউন্টারের সামনে। যে গাড়িগুলো ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে সেগুলোতেই যাত্রী কম। যারা যাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগের চিন্তা আবার ঈদের পরদিন ফিরবেন কীভাবে। ঢাকায় থেকেই ভাবছেন ফেরার উপায় নিয়ে।

বাড়ি যাওয়ার জন্য সায়েদাবাদ টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মনির হোসেন। তিনি জানান, শুরুতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাড়ি যাবেন না। এখন মত পাল্টেছেন।

তার ভাষ্য, ২২ তারিখের মধ্যে ঢাকায় ফিরতে হবে। বাড়ি গিয়ে আটকে পড়লে ঝামেলা। ঢাকায় ফিরতেই হবে। তাই যাওয়া-আসার দুইটা টিকিট লাগবে। এটা নিশ্চিত না হলে যেতে পারব না।

দিগন্ত পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সোহেল মিয়া জানান, এখনই রিটার্ন টিকিট দেয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে রিটার্ন টিকিট দেয়া হবে।

রাজধানীর মহাখালী টার্মিনালেও রিটার্ন টিকিটের জন্য হাহাকার দেখা গেছে। বাস কাউন্টারগুলোর সামনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বেশির ভাগই এসেছেন বাড়ি থেকে ফেরার অগ্রিম টিকিট নিতে। দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও টিকিট না পেয়ে যাত্রীর হট্টগোল দেখা যায়।

এনা বাস কাউন্টারের এজিএম মইন উদ্দিন স্বপন বলেন, তুলনামূলক যাত্রী কম। বাড়ি গেলে ফিরতে পারবে কি না, এই ভয়ে অনেকেই বাড়ি যাচ্ছে না। আর যারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই আর ঢাকায় ফিরবেন না।

অন্যদিকে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি শতভাগ আসন পূর্ণ করে বাস ঢাকা ছাড়ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

তাদের ভাষ্য, অধিকাংশ বাসে আগের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা হচ্ছে, ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক নিয়ে চলতে হবে বলে ভাড়া ৬০ শতাংশ বেশি নেয়া যাবে।

সায়েদাবাদ টার্মিনালে একজন ভুক্তভোগী বলেন, সরকারের নির্দেশনা না মেনে প্রতিটি সিট তারা বিক্রি করছে। আবার ভাড়া দ্বিগুণ। এই অনিয়ম দেখার কি কেউ নেই?

চট্টগ্রাম রুটের ইউনিক পরিবহনের সায়দাবাদ জনপদ মোড়ের কাউন্টার মাস্টার জসিম উদ্দিন বলেন, শুধু আমরা না, অনেক পরিবহনই গোপনে গোপনে দ্বিগুণ ভাড়া এবং শতভাগ সিট বিক্রি করছে। যাত্রী যেহেতু অর্ধেক নিয়ে যাচ্ছি, ভাড়া তো বেশি হবেই। তাছাড়া গাড়ি একেবারেই কম।

তবে অনিয়ম ঠেকাতে ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে মনিটরিং করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের নেতৃত্বে ৬টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ঈদের আগে ও পরের ৬ দিন  সব ধরনের মনিটরিং করবে।

কমিটিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ),বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ, সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিগুলো দুই শিফটে কাজ করবে।

বিআরটিএ থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ১৮ জুলাই হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সকাল ৭টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত দুই শিফটে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের টেলিফোন নম্বর হচ্ছে ৫৫০৪০৭৩৭, মোবাইল নম্বর- ০১৫৫০০৫১৬০৬।

ঈদে বাড়ি গেলে যে তারিখে অবশ্যই ফিরতে হবে : আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত চলমান কঠোর লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এই সময়ে চলবে গণপরিবহণ। ফলে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাওয়া যাবে। তবে ফিরতে হবে ঈদের পরদিনই।  

আগামী ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা। পরের দিন ২২ জুলাই পর্যন্ত গণপরিবহন চালু থাকবে। এরপরদিন ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আবার কঠোর লকডাউন শুরু হবে। তখন বন্ধ থাকবে সব ধরনের গণপরিবহণ।

চলমান লকডাউন শিথিল ও ঈদের পর থেকে আবার লকডাউন ঘোষণা করে মঙ্গলবার সকালে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এর আগে সোমবার কঠোর লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার। কোরবানি ঈদের মানুষের চলাচল ও পশুরহাটে কেনাবেচার বিবেচনায় লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে গণপরিবহণ। খোলা থাকবে শপিংমল ও দোকানপাট। তবে বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। আর সরকারি অফিসের কার্যক্রম ভার্চুয়ালি চলবে।   

করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন আরোপ করে সরকার। পরে সময়সীমা বাড়িয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!