কঠোর বিধিনিষেধ : দ্বিতীয় দিনেই পাল্টে গেছে চিত্র

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২১, ১০:৩৬ এএম
কঠোর বিধিনিষেধ : দ্বিতীয় দিনেই পাল্টে গেছে চিত্র

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : দেশে করোনা সংক্রমণরোধে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনেই পাল্টে গেছে রাজধানীর চিত্র। প্রধান সড়কগুলোতে যেমন বেড়েছে যানবাহন তেমনি পাড়া-মহল্লায় বেড়েছে জনসমাগম। আবার চাকরি বাঁচাতে নানান উপায়ে চরম ভোগান্তিকে সাথি করে এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা গুনেও ঢাকায় ঢুকেছে মানুষ। যদিও কঠোর অবস্থানে আছে পুলিশ। অকারণে বাইরে বের হওয়া মানুষদের করা হচ্ছে জরিমানা। দেওয়া হচ্ছে মামলাও।

শনিবার (২৪ জুলাই) সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী, মতিঝিল, লালবাগ, শাহবাগ, মালিবাগ, মগবাজার, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী ও মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজপথ ছিল রিকশার দখলে।

প্রাইভেটকারের চলাচল আগের দিনের তুলনায় ছিল বেশি। রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো যথারীতি খোলা দেখা গেছে অন্যদিনের মতো। তবে ক্রেতার সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। প্রধান সড়কে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে ভ্যানগাড়িতে  ফল আর সবজির পসরার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। কোনো কোনো এলাকায় লোকজনকে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। কোথাও আবার অলি-গলির রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশন করতেও দেখা গেছে।

আবার রাজধানীর রামপুরা, খিলগাঁও এবং মালিবাগের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষের জটলা ছিল কাঁচাবাজারগুলোতে। পূর্ব রামপুরা সোনালি ব্যাংকের নিচে কথা হয় জামিল হায়দারের সঙ্গে। তিনি বলেন, কেমন লকডাউন চলছে তা দেখতে এসেছি। এখানে এসে তো দেখছি বাস ছাড়া সবাই চলছে। মানুষও ঘর থেকে বের হচ্ছে। তাহলে লকডাউন দিয়ে লাভ কী? মালিবাগ হাজিপাড়া বৌবাজারে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। কেউ সবজি কিনছেন। কেউ বিনা কারণে ঘোরাঘুরি করছেন। অধিকাংশের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

রামপুরায় রিকশাচালক সিরাজ বলেন, গতকালের চেয়ে আজ রাস্তায় মানুষ বেশি। তবে আমাদের ভাড়া সেভাবে হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে দুই-একটা ভাড়া পাচ্ছি। বেশিরভাগ মানুষ রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছে।

শাহবাগে কথা হয় ফুড ডেলিভারিম্যান শিহাবের সঙ্গে। তিনি জানান, লকডাউন চলায় অর্ডার বেশি হচ্ছে। প্রথম দিকের চেয়ে রাস্তায় এখন চলাচল বেড়েছে। তবে অনেক মোড়েই চেকপোস্ট নেই বলে জানান তিনি।

শাহবাগে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শুক্রবারের চাইতে গাড়ি চলাচল যেমন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি। যারা বাইরে বের হচ্ছেন তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন। জেল-জরিমানা করেও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

এদিকে শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলী ও আমিন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। চাকরি বাঁচাতে পায়ে হেঁটে, মোটরসাইকেল কিংবা সাইকেলে চড়ে ঢাকায় ফিরছেন তারা। কষ্ট করে ঢাকায় আসার পরও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে কর্মজীবীদের। আবার গুনতে হচ্ছে জরিমানাও।

শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায়, ঢাকা ও এর আশপাশের কর্মস্থলমুখী শত শত মানুষ শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ফেরি পার হয়ে যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা দেন। এমনকি চেকপোস্ট এড়িয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে ছোট ছোট যানবাহনে করেও গন্তব্যে ছুটেন মানুষ। 

আমিনবাজার সেতু পার হয়ে শতশত মানুষকে সকালে হেঁটেই ঢাকায় ঢুকতে দেখা গেছে। পথে প্রায় সবাইকে পুলিশের মুখোমুখি হতে হয়।

নাটোর থেকে আসা একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মচারী আমিন মৃধা বলেন, নাটোর থেকে মোটর সাইকেলে করে সাভারের আমিনবাজারে নামি। এরপর হেঁটে ব্রিজ পার হই।

গতকাল শিমুলিয়া হয়ে পদ্মা পার হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে অনেকে। তাদের মধ্যে অনেকেরই আবার বিচার হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতে; এরকম বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

লৌহজং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাউসার হামিদ বলেন, আমরা জরুরি পরিষেবার যান অথবা পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া পার হতে দিচ্ছি না। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে মুভ করতে দিচ্ছি না। মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে কঠোরভাবে নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়ন করছি। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে আমরা জরিমানা করছি।

তিনি আরো বলেন, সকাল থেকে ঘাট এলাকায় মাইকিং করছি। মাস্ক না পরলে বা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করছি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭১ মামলায় ১০ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তাছাড়া একজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশ সদস্য লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে তিনি জানান।

বাস বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ মানুষই ফিরছেন ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে। তবে প্রবেশমুখে ছিল পুলিশের কড়াকড়ি। চেকপোস্টে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা গাড়ি, মোটরসাইকেল চেক করছেন। জরুরি পরিষেবা ব্যতীত অন্য কোনো গাড়িকে শহরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

দারুস সালাম জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট সৌরভ বলেন, প্রয়োজন ছাড়া কাউকে শহরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অপ্রয়োজনে যারা মোটরসাইকেল নিয়ে আসছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৬টা মামলা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শনিবার সকাল থেকেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিভিন্ন উপায়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কঠোর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কারণে যানবাহন সংকটে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা এসব যাত্রীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো যানবাহন না থাকায় দৌলতদিয়া ঘাটে অনেকটা ফাঁকা অবস্থায় ফেরিগুলোকে পন্টুনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ঢাকামুখী যাত্রীরা অটোরিকশা, থ্রি হুইলাসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছান। অনেক শ্রমজীবী মানুষ ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে ফেরি ঘাটে পৌঁছান। ফেরিগুলো ঘাটে আসা যানবাহন ও মানুষ নিয়েই ঘাট ছেড়ে যেতে দেখা যায়।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, উভয় ঘাটে ছোট-বড় মিলেই মোট ১৫টি ফেরি রয়েছে। যখন যে ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে ছাড়া প্রয়োজন সেভাবেই ছেড়ে যাচ্ছে। কঠোর বিধিনিষিধের কারণে ঘাটে আসা যানবাহন সরাসরি ফেরিতে উঠার সুযোগ পাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!