করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট

শ্বাসনালিতে খুব দ্রুত ছড়ায় ওমিক্রন

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১, ০৩:৪১ পিএম
শ্বাসনালিতে খুব দ্রুত ছড়ায় ওমিক্রন

ঢাকা : করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়ে নতুন উৎকণ্ঠা। এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহের ফুসফুসে নয়, শ্বাসনালিতেই খুব দ্রুত বিস্তার করে নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি।

সম্প্রতি হংকং ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডা. মাইকেল চান চি-ওয়াই এর নেতৃত্বে গবেষণাটি হয়েছে। এদিকে, ওমিক্রনকে বর্তমানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেছে জি-৭। তকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে।

অধ্যাপক ডা. মাইকেল চান চি-ওয়াই গবেষণা সম্পর্কে জানিয়েছেন, ‘ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রন ৭০ গুণ বেশি মাত্রায় শ্বাসনালির কোষগুলোতে বিস্তার ঘটায়। এতে মানুষ থেকে মানুষে এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে আর ফুসফুসের ছড়ালেও এই ভ্যারিয়েন্ট খুব ধীরগতিতে ছড়ায়। এর সংক্রমণের মাত্রা করোনার অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ১০ গুণ কম। ফলে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর অবস্থা গুরুতর হয় না।’ তিনি আরো জানান, ‘বহু মানুষকে দ্রুত সংক্রমিত করার মধ্যে দিয়ে ওমিক্রনের জীবাণু অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা প্রতিরোধী টিকার কার্যকারিতা এড়িয়ে যেতে পারে ওমিক্রনের জীবাণু। তবে সব দিক বিবেচনায় দেখা গেছে, আক্রান্তের শরীরে ওমিক্রনের সার্বিক হুমকি খুবই নগণ্য।

‘ওমিক্রনের ভয়াবহতা কেবল সংক্রমণের মাত্রার ওপর নির্ভরশীল নয়। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে,’ যোগ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে সার্স কভ টু ভাইরাসের নতুন ধরনটি তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই ধরনটির মিউটেশন হয়েছে ৫০ বারের বেশি।

আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণের দেশ বতসোয়ানায় প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টের শুরুতে নাম ছিল ‘বি.১.১.৫২৯’, তবে শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর নাম দেয় ‘ওমিক্রন’। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৩০ বারের বেশি মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে সার্স কভ টু ভাইরাসের নতুন ধরনটি তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই ধরনটির মিউটেশন হয়েছে ৫০ বারের বেশি।

এদিকে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে বর্তমানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বের উন্নত ৭টি দেশের জোট জি-৭। এছাড়া ওমিক্রনের উত্থান এবং ছড়িয়ে পড়ায় অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে একে-অপরকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছে জোটটি। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। ইংল্যান্ডের লিভারপুলে গত শনিবার জি-৭ এর বৈঠকটি শুরু হয়।

জি-সেভেনের বর্তমান সভাপতি ব্রিটেন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আরো ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং তথ্য আদান-প্রদান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আর তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা উচিত বলে একমত হয়েছেন সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীরা।

এর আগে যুক্তরাজ্যের আয়োজনে একটি বৈঠকে অংশ নেন জি-৭ সদস্য দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা। সেখানে তারা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট আরো ছড়িয়ে পড়া রুখতে যথাসময়ে রোগ বা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করা, আক্রান্ত রোগীর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং, টিকা ও রোগ-চিকিৎসা বিদ্যায় সবার প্রবেশের সুযোগ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে ওমিক্রনের ধাক্কায় বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও যুক্তরাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৩৭৬ জন এবং মারা গেছেন ১৪৬ জন।

এছাড়া, চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। তবে আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। গত একদিনে সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার।

এদিকে একদিনে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া। তালিকায় এরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও মেক্সিকো। এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৭ কোটি ৩১ লাখের ঘর। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৩ লাখ ৫২ হাজার।

গতকাল সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, একদিনে সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ হাজার ৪৩৯ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে প্রায় দেড় হাজার। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৩ লাখ ৫২ হাজার ১৬১ জনে।

একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৭ হাজার ১৯৫ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার। এতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ৩১ লাখ ৯৪ হাজার ১৫৬ জনে।

এদিকে একদিনে বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ জন এবং মারা গেছেন ৯৭৩ জন। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫ কোটি ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ১৭১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৭ জন মারা গেছেন।

অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া। গত একদিনে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ১৩৩ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৮ হাজার ৪৮৬ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৪ জনের।

গত একদিনে যুক্তরাজ্যে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৩৭৬ জন এবং মারা গেছেন ১৪৬ জন। মহামারির শুরু থেকে এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৮৫১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৭ জন মারা গেছেন। একই সময়ে ফ্রান্সে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৮৬৬ জন এবং মারা গেছেন ১৮৮ জন।

লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭৩ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ৭২০ জন। অপরদিকে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ২২ লাখ ৪ হাজার ৯৪১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৫২১ জনের।

এছাড়া জার্মানিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৫৭ জন এবং মারা গেছেন ৪৭৯ জন। করোনা মহামারির শুরু থেকে ইউরোপের এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৬৭ লাখ ৯ হাজার ২১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৮ হাজার ১৫৪ জন মারা গেছেন। একই সময়ের মধ্যে ইউক্রেনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৫৯০ জন এবং মারা গেছেন ৩৫৫ জন।

এদিকে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩ কোটি ৪৭ লাখ ২১ হাজার ১৭৪ জন এবং মারা গেছেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৮ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে। এরপর ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আস্তে আস্তে আরো বড় আকারে ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্থাটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!