যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ০৭:৩৯ পিএম
যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ

ফাইল ছবি

ঢাকা: ‘যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, এরা শক্তিশালী দেশ। আমাদের এমনভাবে চলতে হবে, যাতে তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক উন্নত হয়। এই ভারসাম্য রক্ষা খুব সহজ নয়। তারপরও ভূ-কৌশলগত অবস্থানের গুরুত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখবে।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক অর্জন, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট (বিএসটি) এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসটির চেয়ারম্যান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ।

ড. মোমেন বলেন, যে কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সেই দেশের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য প্রণয়ন করা হয়। আমাদের দেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত আমাদের জানতে হবে। রাজনৈতিক যে দিক-দর্শন সেটাও আমাদের জানতে হবে। 

তিনি বলেন, আমরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল একটি বিশ্বে বাস করছি। কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার প্রভাব অন্য দেশের ওপর পড়ে। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনটি বড় দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ। এরা শক্তিশালী দেশ। এর মধ্যে দু’টি দেশ আমাদের প্রতিবেশী। এদের সাথে আমাদের এমনভাবে চলতে হবে, যাতে সম্পর্কটা উন্নত করতে পারি।

ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার। সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগও আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। এটি বজায় রাখতে হবে। বন্ধু দেশ বলে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কিছু বলে, সুপারিশ দেয়। বন্ধু না হলে কিছু বলত না, তখন আক্রমণ করত। সুপারিশ ভালো হলে সেগুলো অবশ্যই আমরা গ্রহণ করি। 

তিনি বলেন, সবকিছুতে আমরা যে নিখুঁত, এটা ভাবা ঠিক হবে না। আমাদের যদি কোনো দুর্বলতা থাকে বন্ধুরা তা তুলে ধরবে। সেটা আমরা দেখব।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের ঐতিহাসিকভাবে বড় বন্ধু। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটা অপূর্ব সম্পর্ক। বাংলাদেশ ও ভারত বড় সমস্যাগুলোর সমাধান করেছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যেও বিনা বুলেটে এ ধরনের অর্জন কেউ করতে পারেনি। 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘সোনালী অধ্যায়’ সৃষ্টি হয়েছে। খুব সুন্দর সম্পর্ক। ভারত এ বছর জি-২০’র সভাপতি হিসাবে শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে কেবলমাত্র বাংলাদেশকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই যে সম্মানটা তারা আমাদের দিয়েছে, এটা সম্ভব হয়েছে সুসম্পর্কের কারণে।

ড. মোমেন বলেন, চীন আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সাথে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেশি। তারা বাণিজ্য আরো বাড়াতে চাচ্ছে। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশ ভাল।

তিনটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই যে ব্যালেন্স, এটা সহজ নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব বাস্তববাদী নেতা। আর এ কারণেই এই ব্যালেন্সটা সম্ভব হয়েছে। বড় দেশগুলো ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও সৌদি আরবের সাথে সম্পর্কে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রাশিয়া আমাদের ঐতিহাসিক বন্ধু। তারা আমাদের দেশে প্রথম পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কাজ করছে। এই কাজ যথাসময়ে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। সৌদি আরবে ২৬ লাখ বাংলাদেশী কাজ করছে। সৌদির সাথে আমাদের বিভিন্ন রকম ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ রয়েছে। জাপানও বড় উন্নয়ন সহযোগী। জাপান থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশী ঋণ নিয়েছে। আমিরাতে আমাদের কয়েক লাখ লোক কাজ করেন। কাতারে কয়েক লাখ লোক কাজ করেন। সবগুলো দেশের সাথে আমার সুসম্পর্ক রাখা প্রয়োজন।

ড. মোমেন বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান আগামীতে আরো শক্তিশালী হচ্ছে। আসিয়ানের সাথে সম্পর্ক আমরা ধরে রাখতে চাই। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের দরকার আছে। 

‘ভূ-কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাশেই রয়েছে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। আমরা রয়েছি কেন্দ্রে। আমাদের এই অঞ্চলের দিকে অনেকের নজর রয়েছে। কেননা আগামী বিশ্ব হবে এশিয়ার বিশ্ব।

সোনালীনিউজ/এসআই/আইএ

Link copied!