চলছে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটিতে ভোট গ্রহণ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৪, ০৯:৩৬ এএম
চলছে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটিতে ভোট গ্রহণ

ঢাকা : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই মাস বাদে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ছয়টি পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের দুই শতাধিক পদে ভোটগ্রহণ চলছে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনি এলাকাগুলোতে শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৮টায় নির্ধারিত সময়েই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, একটানা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত কোথাও গোলযোগের খবর তারা পাননি।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয় নির্বাচন হচ্ছে এটি, আর কুমিল্লা সিটিতে হচ্ছে মেয়র পদের উপ নির্বাচন।

এর বাইরে পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী পৌরসভা, জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ পৌরসভা এবং বরগুনা জেলার আমতলী পৌরসভায় হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন।

ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল পৌরসভা, মুন্সিগঞ্জ জেলার মুন্সিগঞ্জ পৌরসভা এবং বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র পদে হচ্ছে উপনির্বাচন।

সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সব মিলিয়ে স্থানীয় সরকারে বিভিন্ন পর্যায়ের ২৩৩টি নির্বাচন হচ্ছে এদিন।

ইসির জনসংযোগ পরিচালক শরীফুল আলম জানান, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে। বাকি নির্বাচনগুলো ব্যালট পেপারের মাধ্যমে হচ্ছে।

ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচনি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। যানবাহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।

দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ দলের বর্জনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচন কমিশনের হিসাবে ভোট পড়ে প্রায় ৪২ শতাংশ।

জাতীয় নির্বাচনের পর শনিবারই বড় পরিসরে স্থানীয় সরকারের প্রথম ভোট হচ্ছে। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিত কেমন হয়, সে দিকে নজর রয়েছে পর্যবেক্ষকদের।  

তারা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন বা দলীয় প্রতীক দেয়নি, এটাই এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। সহিংসতা রোধ করে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার আনতে এই কৌশল কতটা ফলদায়ক হবে, সেই পরীক্ষাও এদিন ভোটের মাঠে হয়ে যাবে।

এক নজরে

ময়মনসিংহ সিটি

# ১২৮টি ভোটকেন্দ্র

# ভোটার ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন

# প্রার্থী: মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু (দেয়াল ঘড়ি), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম (ঘোড়া প্রতীক), শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু (হাতি প্রতীক), কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক (হরিণ প্রতীক) এবং জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম স্বপন মণ্ডল (লাঙ্গল প্রতীক)

# ২০১৯ সালে ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী কেবল একজন হওয়ায় ভোট করতে হয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ সদর আসনে ভোটের হার ছিল ৪৪%  

কুমিল্লা সিটি

# ১০৫টি ভোটকেন্দ্র

# ভোটার দুই লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন

# প্রার্থী: কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা (বাস) এবং কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম (হাতি)

# এই সিটিতে ২০১২ সালের নির্বাচনে ৭৫%, ২০১৭ সালে ৬৪% এবং ২০২২ সালে ৫৯% ভোট পড়ে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে ভোট পড়ে ৩৯%

কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্র

আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় ময়মনসিংহে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজনই আওয়ামী লীগের। এর বাইরে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী, কেবল তিনিই দলীয় প্রতীকে লড়ছেন।

কুমিল্লায় চার প্রার্থীর মধ্যে দুজনই আওয়ামী লীগের। ভোট বর্জন করা বিএনপির দুই বহিষ্কৃত নেতাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে আছেন। এই সিটিতে দলীয় প্রতীকে কারো প্রার্থী নেই।

দুই সিটি নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর ১৬ জনের ফোর্স এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জনের ফোর্স মোতায়েন থাকছে। পৌরসভাগুলোতে ১২ থেকে ১৪ জনের এবং ইউপি নির্বাচনগুলোতে ২২ জনের ফোর্স নিয়োজিত করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। যেসব জায়গা থেকে চাহিদা এসেছে, সেখানে বেশি ফোর্স দিয়েছি। অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটও দেওয়া হয়েছে।

মাঠের চিত্র : কুমিল্লা সিটির ২০২২ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হকের কাছে শ তিনেক ভোটে হেরেছিলেন দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। আরফানুল হকের মৃত্যুতে এখন সেখানে মেয়র পদে উপ নির্বাচন হচ্ছে।

গত নির্বাচনে সাক্কুর হারের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারের। প্রথমবার এসেই ২৯ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। ফলে বিএনপির ভোট ভাগ হয়ে সুবিধা পায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সাক্কু-কায়সারের জন্য এবারও সেই সংকট রয়েছে।

আবার আওয়ামী লীগের ভোটও কিছুটা হলেও ভাগ হবে, কারণ কুমিল্লা সদরের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মেয়ে তাহসীন বাহার সূচনা সঙ্গে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, যিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি।

সাক্কু দুইবার মেয়র হয়েছিলেন কুমিল্লা আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান এবং তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে হারিয়ে।

প্রয়াত আফজল খান আর বাহাউদ্দিন বাহারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কুমিল্লার রাজনীতিতে বহুল চর্চিত বিষয়। এই দুই নেতার দ্বন্দ্বের সুবিধা নির্বাচনে সবসময় বিরোধী পক্ষ পেয়েছে।

বলা হয়, বাহারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুফল সাক্কু দুইবার ভোটবাক্সে পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালের নির্বাচনে বাহার সমর্থন দেন আরফানুল হককে। আর এবার বাহারের নিজের মেয়েই প্রার্থী।

হিসাব বলছে, দুই ‘দলের’ চার প্রার্থীর ভোটে ‘কাটাকুটির’ নির্বাচন হতে যাচ্ছে কুমিল্লায়। আর তাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

বিএনপির দলীয়ভাবে ভোটে না থাকলেও দলটির কর্মী-সমর্থকরা দুই সাবেক নেতার পক্ষে মাঠে নেমে ঘাম ঝরিয়েছেন। ফলে বিএনপিপন্থি ভোটাররাও এবার কেন্দ্রে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

মেয়র পদে কুমিল্লার মত হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস ময়মনসিংহে নেই। ২০১৯ সালে ময়মনসিংহ সিটির প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে ভোট করতে হয়নি, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু নির্বাচিত হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। প্রায় আড়াই দশকের নির্বাচনি রাজনীতিতে তাকে কখনও পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়নি।

এবার দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকা না পাওয়ায় তিনি নির্বাচন করছেন দেয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে। তবে ভোটের সমীকরণে পরিস্থিতি খুব একটা পাল্টাচ্ছে না।

টিটুর মত এমন একজন শক্তিশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে তার বিরোধী পক্ষ সম্মিলিতভাবে একজনকে মেয়র পদে ভোটে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন; যারা মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত-উর রহমান শান্তর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দ্বিধা-বিভক্ত জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সেটি হয়নি।

টিটুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম এবং শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত-উর রহমান শান্তর সমর্থন পাবেন বলে আশা করেছিলেন, কারণ টিটুর সঙ্গে শান্তর রাজনৈতিক দ্বৈরথ পুরনো। তবে এহতেশামুল বা টজুর ভোটের প্রচারে এমপির সমর্থনের নমুনা দেখা যায়নি।

টিটুর বিরোধী হিসেবে পরিচিতরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছেন। এমপি-সমর্থকদের এই বিভক্তি টিটুকে সুবিধা দেবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

মেয়র পদে বিএনপির কেউ প্রার্থী না হলেও কাউন্সিলর পদে অন্তত সাতজন প্রার্থী আছেন। দল নির্বাচনে না থাকলেও দলের সমর্থকরা ঠিকই ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন বলে আশা করছেন তারা।

এমটিআই

Link copied!