ঢাকা : বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং গুমের ঘটনায় ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে চিহ্নিত করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। একইসঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার ও পরবর্তী সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতেও এই সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
এছাড়া এইচআরডব্লিউ আরও বলেছে, বাংলাদেশে দ্রুত ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের কষ্টার্জিত অগ্রগতি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। আর বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যই সংস্কার প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ‘আফটার দ্য মুনসুন রেভল্যুশন: আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ দাবি জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের উচিত জাতীয় তদন্ত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া। এই ইউনিট পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত এবং বহুবার তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং গুমের ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছে।
এছাড়া র্যাব বিলুপ্তি করা হবে শুধু এই শর্তেই যে, র্যাবের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা যাতে অন্য ইউনিটে গিয়ে একই অপকর্মের চর্চা করতে না পারেন, সে জন্য তাদের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ বলছে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সাধারণ মানুষকে যেভাবে অকারণে হয়রানি করতো এখনও তাতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। সেই বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা বিদ্যমান আপৎকালীন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিবেদনে সমালোচকদের দমনের জন্য ব্যবহৃত আটকাদেশ ও আইন বাতিলের অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাঠামোগত সংস্কারেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাঠামোগত সংস্কার না করা হলে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের কষ্টার্জিত অর্জনকে বৃথা করে ফেলতে পারে।
প্রতিবেদনে টেকসই সংস্কারের সুপারিশের মধ্যে আরও বলা হয়েছে, গণগ্রেপ্তার ও অজ্ঞাতনামা মামলা বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। আটককৃত ব্যক্তিদের যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারকের সামনে হাজির করা যায়। আটকে রাখার স্থান যাতে পরিদর্শন করা যায়। সেই সঙ্গে রিমান্ডের প্রচলনে নিষেধাজ্ঞা আনতে হবে। এ ছাড়া যেসব আইন জবাবদিহির পথে বাধা, এসব আইন সংশোধন বা বাতিল করার পরামর্শ অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে এইচআরডব্লিউ।
প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেরও (আইসিটি) সমালোচনা করা হয়েছে। অতীতে এটিকে ব্যবহার করে অস্বচ্ছ বিচার করা হয়েছে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :