ফাইল ছবি
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং তাদের শাসনামলের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর চূড়ান্ত করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দলগুলোর কাছে সনদটি পাঠিয়েছে। আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদে স্বাক্ষর করবে।
সনদে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব। এর মধ্যে ৪৭টি সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত এবং বাকি ৩৭টি নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য। যেসব বিষয়ে দলগুলোর একমত বা ভিন্নমত রয়েছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সনদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে সাত দফা অঙ্গীকারনামাকে দেখা হচ্ছে। তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না। শেষ দফায় বলা হয়েছে, জাতীয় সনদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো কোনো বিলম্ব ছাড়াই দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ৩০টি রাজনৈতিক দলের দুইজন করে প্রতিনিধি অংশ নেবে। ইতিমধ্যেই বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অন্যান্য দলগুলোর প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সনদের প্রথম ভাগে রয়েছে পটভূমি, দ্বিতীয় ভাগে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এবং তৃতীয় ভাগে রয়েছে সনদ বাস্তবায়নের সাত দফা অঙ্গীকারনামা। বেশ কিছু প্রস্তাবে দলগুলোর মধ্যে একমত হলেও কিছু বিষয়ে এখনও মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন, এই প্রস্তাবে ৩০টি রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে মনোনীত করার বিষয়েও ৩১টি দল ও জোট ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে ২৩টি দল ও জোট একমত হলেও বিএনপিসহ সাতটি দল ভিন্নমত দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন, বিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও রয়েছে। এছাড়া গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জাতীয় সনদ অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই গৃহীত সব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া সনদে উল্লেখ আছে, গণঅভ্যুত্থানকালে আহত ও নিহতদের সুব্যবস্থা, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০০৯ সাল পরবর্তী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দিয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ধরা হচ্ছে।সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :