প্রতি কিলোমিটারে দেড় হাজার কোটি খরচ, তবু মেট্রোরেলে নিরাপত্তাঝুঁকি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
প্রতি কিলোমিটারে দেড় হাজার কোটি খরচ, তবু মেট্রোরেলে নিরাপত্তাঝুঁকি

রাজধানীর ব্যয়বহুল গণপরিবহন প্রকল্প মেট্রোরেল আবারও আলোচনায়। প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে—এমনই প্রশ্ন উঠেছে নতুন দুর্ঘটনার পর।

রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে, এতে আবুল কালাম (৩৫) নামের এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দিয়েছে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি কিলোমিটারে এতো বিপুল ব্যয়ের পরও এমন দুর্ঘটনা “অগ্রহণযোগ্য ও উদ্বেগজনক।”

এর ঠিক এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একই এলাকার ৪৩০ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। তখন কেউ হতাহত না হলেও, পুনরায় প্যাড বসাতে সময় লেগেছিল ১১ ঘণ্টা, এবং ট্রেন চলাচল ছিল বন্ধ।

এইবার দুর্ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পর আংশিক রুটে চলাচল চালু হলেও, পুরো লাইন কবে স্বাভাবিক হবে তা স্পষ্ট করেনি ডিএমটিসিএল।

বিয়ারিং প্যাড কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, বিয়ারিং প্যাড হলো রাবার ও ইস্পাতের মিশ্রণে তৈরি একধরনের প্যাড, যা পিলার ও উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট)-এর মাঝখানে স্থাপন করা হয়। এটি ভারসাম্য রক্ষা করে এবং মেট্রোরেল চলাচলের সময় কম্পন বা ঘর্ষণ থেকে স্থাপনাটিকে সুরক্ষা দেয়। প্রতিটি প্যাডের ওজন ১২০ থেকে ১৫০ কেজি।

কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—এতো ভারী কাঠামো কীভাবে নিচে পড়ে গেলো?

২০১৯ সালে উত্তরা–আগারগাঁও অংশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি নিম্নমানের বিয়ারিং প্যাড সরবরাহ করেছিল বলে জানা যায়। তখন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে পরীক্ষায় দেখা যায়, একাধিক প্যাড মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়নি, ফলে সেগুলো বাতিল করা হয়।

সর্বশেষ দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, ঘটনাটি তদন্তে সেতু সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নকশাগত ত্রুটি বা উপকরণের মানসংক্রান্ত সমস্যা খতিয়ে দেখবে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এ ধরনের দুর্ঘটনা কেবল জননিরাপত্তার জন্য নয়, বরং মেট্রোরেলের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্যও হুমকি।”

তাদের মতে, নকশা ও নির্মাণ পর্যায়ে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ভবিষ্যতেও এমন ঝুঁকি থেকে যাবে।

এম

Link copied!