ফাইল ছবি
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত দুই দিনে পরপর অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় জনমনে তৈরি হয়েছে তীব্র আতঙ্ক। বাসে আগুনে পুড়ে চালকের মৃত্যুসহ একাধিক সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে নাগরিকদের মধ্যে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ ঘটনাগুলোর পেছনে একই সূত্রে গাঁথা সংগঠিত চক্র সক্রিয়। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্যরাই এসব নাশকতার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে তারা।
সোমবার ভোরে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর, ধানমন্ডি ও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার ভোরে উত্তরার জনপথ মোড়েও আরেকটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভাটারায় একটি পরিত্যক্ত প্রাইভেট কারেও আগুন লাগানো হয়।
এর আগে কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল চার্চের গেটে মোটরসাইকেল থেকে ককটেল ছোড়া হয়, পরে সেখানে আরেকটি অবিস্ফোরিত ককটেলও উদ্ধার করা হয়।
ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভালুকজান বাজারে পেট্রলপাম্পের সামনে বাসে অগ্নিসংযোগে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যান চালক জুলহাস মিয়া। এ ঘটনার পর এলাকায় শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীতে ১৪টি ঝটিকা মিছিল ও ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৫৫০ জনের বেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বেশির ভাগই ঢাকার বাইরে থেকে এসে অর্থের বিনিময়ে এসব কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় বলে জানায় পুলিশ।
র্যাবও রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট স্থাপন করেছে। সংস্থাটির পরিচালক এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, ১৩ নভেম্বর কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সহিংসতা ঠেকাতে দুই শতাধিক টহল টিম কাজ করছে।
জুলাই গণহত্যা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ১৩ নভেম্বর নির্ধারণকে কেন্দ্র করে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। ওই দিন দলটি কথিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে, যা ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোও ওই দিন রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞানী ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, সাম্প্রতিক অগ্নিসন্ত্রাস সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। মানুষকে সতর্ক থাকতে ও সংঘাতের মুখে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন জরুরি।’
দেশজুড়ে ১৩ নভেম্বরকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও, আগুন-সন্ত্রাসের এই নতুন ঢেউ সাধারণ মানুষকে আবারও সেই পুরোনো ভয়ের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :