প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি না ষড়যন্ত্র?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০১৬, ০১:০৭ এএম
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি না ষড়যন্ত্র?

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরি যাত্রাপথে তাঁকে বহনকারী বিমানের ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’র ঘটনায় সরকারের মধ্যে তোলপাড় চলছে। ঘটনার পর তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে ঘটনাটি নেহাত ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’ নাকি ষড়যন্ত্র তা নিয়েই সরগরম সরকারের বিভিন্ন মহল।

গঠিত কমিটিগুলোর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ‌‘যান্ত্রিক ত্রুটি’ দেখা দিয়েছিল। এ জন্য এরই মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

তবে নেহাত গাফিলতি বা যান্ত্রিক ত্রুটি হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না সরকারের অনেকেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন। হাঙ্গেরি সফরের সার্বিক বিষয় দেশবাসীকে জানাতে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এ সময় ‘বিমানের ত্রুটি’ বিষয়ে তার মন্তব্য পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।     

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাঙ্গেরি সফরে তাকে বহনকারী বিমানে যে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটেছিল, সেটি দুর্ঘটনা নাকি অবহেলা নাকি ইচ্ছাকৃত, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। 

তবে প্রাথমিক তদন্তে উদাসীনতার পরিচয় পাওয়া গেছে। এ জন্য বিমানের পাঁচ কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। রিপোর্ট প্রকাশের পর এ সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে। এখন মন্তব্য করলে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ রহমত, আমাদের নেত্রীকে হেফাজত করেছেন। সেদিনের সেই যান্ত্রিক ত্রুটিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। আমাদের জীবনে কালো ছায়া নেমে আসতে পারত। আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া।

অন্যদিকে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের গাফিলতির বিষয়টি উঠে আসে। এরপর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় বিমানের প্রকৌশল শাখার ছয়জনকে। তবে এই ছয়জন যাদের অধীনে কাজ করতেন, তাদের কারো বিরুদ্ধেই এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ছাড়া তদন্ত কমিটিতেও রয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একজন কর্মকর্তা।

তবে বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলছেন, ‘পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন এলে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। যেহেতু সরকারপ্রধানের জীবনের প্রশ্ন জড়িত ছিল, সেহেতু কোনোভাবেই বিষয়টি হালকা করে দেখার অবকাশ নেই। এ দায়দায়িত্ব যারই হোক, তাকে তা নিতে হবে।’ 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বুধবার (৩০ নভেম্বর) ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন ইঞ্জিনিয়ার অফিসার এস এম রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস ও জাকির হোসেন এবং টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার অফিসাররা কাজ করেন বিমানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। টেকনিশিয়ানরা কাজ করেন বিমানের চিফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। সার্বিক তদারকির দায়িত্বে বিমানের পরিচালক (প্রকৌশল ও ম্যাটারিয়াল ম্যানেজমেন্ট) উইং কমান্ডার (অব.) আসাদুজ্জামান। 

এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরীসহ চারজন গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই ফ্লাইটে। যারা আশখাবাদ বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের পর বিমানটির ত্রুটি অনুসন্ধান করে মেরামত করেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় সোমবার (২৮ নভেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 

বিমানের চিফ অব টেকনিক্যাল ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন সোয়েব চৌধুরী, ডেপুটি চিফ অব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হানিফ ও ম্যানেজার (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) নিরঞ্জন রায়।

সূত্র জানায়, যাদের দায়িত্ব ছিল ইঞ্জিনিয়ার অফিসার ও টেকনিশিয়ান তদারকি করে বিমান উড্ডয়নের আগে সার্বিক যান্ত্রিক পরীক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তারাই রয়েছেন বিমানের তদন্ত কমিটিতে। সেই কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বহাল রয়েছেন বিমানের প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরিচালক। ফলে বিমানের তদন্ত ও প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মন্ত্রণালয়ে বিমান ও সিভিল এভিয়েশন উইংয়ের দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হলেও সেখানে নেই জিয়াউল হক। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও পর্যটন) স্বপন কুমার সরকারকে আহবায়ক করে চার সদস্যের  কমিটিতে আরো রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রতিনিধি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন) চৌধুরী এম জিয়াউল কবির, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট)। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটির ত্রুটির কারণ খতিয়ে দেখে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতামূলক সুপারিশও দিতে বলা হয়েছে।  

২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তার গতিপথ পরিবর্তন করে সেটিকে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করানো হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/জেডআরসি

Link copied!