‘দাবি-দাওয়া’ সম্পর্কে জানে না আশুলিয়ার শ্রমিকরা!

  • আশুলিয়া প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০১৬, ০৯:৩২ পিএম
‘দাবি-দাওয়া’ সম্পর্কে জানে না আশুলিয়ার শ্রমিকরা!

আশুলিয়া: মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ায় টানা ১০ দিন ধরে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। আন্দোলনের কারণে অশান্ত হয়ে উঠেছে এই শিল্পাঞ্চল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। দফায় দফায় বৈঠক করেছেন মন্ত্রীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপরও শ্রমিক আন্দোলন থামানো যায়নি।

আর এতকিছুর পর আন্দোলনে অংশ নেয়া শ্রমিকদের অনেকেই জানেন না আন্দোলন সম্পর্কে তেমন কিছু। শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়ে দিয়ে পেছন থেকে সরে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে আশুলিয়ার জামগড়া, বেরন, নরসিংহপুর ও নিশ্চিন্তপুরসহ আশপাশের কিছু এলাকা ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এই অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। শ্রমিকরাই কাউকে কিছু না জানিয়ে হুট করে আন্দোলনে নেমে পড়েছেন বলে অভিযোগ নেতাদের।

জামগড়া এলাকার উইন্ডি গ্রুপের শ্রমিক রাজিয়া, সেড ফ্যাশনের হাবিবুর রহমান, স্টার্লিং ক্রিয়েশন কারখানার রিপনসহ একাধিক শ্রমিক বলেন, তারা কয়েকজন শ্রমিক নেতার নির্দেশে গত ১২ ডিসেম্বর তাদের কর্মস্থলে গিয়ে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। পরে কারখানা ছুটি দিলে তারা বাড়ি চলে যান। এর পরের দিনও কারখানার গিয়ে হাজিরা দেয়ার পরপরই শ্রমিকরা বাড়ি চলে আসেন। তিন দিনের মধ্যে শ্রমিকদের এই আন্দোলন আশপাশের আরো কয়েকটি কারখানায় ছড়িয়ে দেন শ্রমিক নেতারা। উত্তাল হয়ে উঠতে শুরু করে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পুরো এলাকা।

ফিরোজ, হাসান মিয়া ও খাদিজাসহ আরো কয়েকজন শ্রমিক বলেন, তারা কাজের উদ্দেশে কারখানায় প্রবেশ করেন। তবে কারখানায় প্রবেশের পর কিছু শ্রমিক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করলে কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। এরপর থেকেই তারাও প্রতিদিন কারখানায় প্রবেশের পর আবার বাড়ি ফিরে আসেন। আন্দোলন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা নেই বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, বর্তমান বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বেতন বাড়লে তাদের জন্য ভালো হয়। তাই তারাও প্রতিদিন সবার মতো কারখানায় হাজিরা দিয়ে বের হয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন।

তবে সুমন, কাউছারসহ কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে আন্দোলনে শ্রমিকদের উৎসাহিত করেন। নেতাদের নির্দেশেই তারা মজুরি বাড়ানোর দাবি জানান। তবে কয়েকদিনের মধ্যে শ্রমিকদের আন্দোলনে শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে ওঠার পর ওই শ্রমিক নেতাদের আর দেখা পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাভার-আশুলিয়া কমিটির সভাপতি ইব্রাহিমসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের নির্দেশে তারা আন্দোলন শুরু করেন। তবে আন্দোলনের প্রথম কয়েকদিন ওই সংগঠনের কয়েকজন শ্রমিক নেতা তাদের পাশে থাকলেও পরে তাদের আর দেখা যায়নি।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সুমি আক্তার বলেন, ‘শ্রমিকরা হঠাৎ করেই কাউকে কিছু না জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছেন। নেতারা শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়ে দিয়ে সরে পড়েছেন, এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’

এ বিষয়ে আশুলিয়া মডেল থানার ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, ‘শ্রমিক আন্দোলনে পেছন থেকে কারা আসলে উসকানি দিচ্ছে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া এ ঘটনায় পাঁচ শ্রমিক নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।’ তবে আটক করা নেতাদের নাম প্রকাশ করেননি ওসি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Link copied!