বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০১৭, ১০:১১ এএম
শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

শীতের খরায় যেন কেটেছে পৌষ মাস। তবে বাঘ কাঁপানো ঠাণ্ডা নিয়ে এসেছে মাঘ। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে তরতর করে নামছে থার্মোমিটারের পারদ। শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। সারাদেশে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে শীতজনিত রোগ-বালাই বাড়ছে। নিম্নআয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে আছেন উত্তরাঞ্চলের দরিদ্ররা। 

প্রায় সারা দেশ জুড়েই চলছে শৈত্য প্রবাহ। শৈত্যপ্রবাহ কোথাও তীব্র, কোথাও কোথাও মাঝারি, আবার কোথাও মৃদু। ‘মাঘের শীত বাঘের গায়’ প্রবাদ যেন সত্যে পরিণত হয়েছে গতকাল শনিবার (১৪ জানুয়ারি) শীতের তীব্রতায়। মাঘের প্রথম দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুরে ত্রাণ বিভাগে বিতরণ করার মতো আর কম্বল না থাকায় তারা সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না। আগুন পোহানোই একমাত্র ভরসা দরিদ্রদের। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস, আরও অন্তত তিন দিন থাকতে পারে শীতের দাপট। তবে রাজধানীতে তাপমাত্রা তেমন কমেনি।

ভারত হয়ে গত বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করে সাইবেরীয় শীতল বায়ুপ্রবাহ। কমতে শুরু করে তাপমাত্রা। গতকাল শনিবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাতেই গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রির কম। গতকাল রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি। এর আগের দিন ছিল ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি।

উত্তরবঙ্গজুড়ে সর্বনিম্ন তাপামা ৫ ডিগ্রির কাছাকাছি হলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রির বেশি। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার এমন ব্যবধানের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। শীতে খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে নাকাল। তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

শুধু উত্তরে নয়, পারদ নিম্নমুখী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও। টাঙ্গাইলে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি। পদ্মার ওপারে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির কম। বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, খুলনার ওপর দিয়েও। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের ওপর দিয়ে।

আবহাওয়াবিদ শামীম হাসান ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, 'এবার অনেক বিলম্বে শীত এসেছে। পৌষে বলতে গেলে শীত ছিলই না।' এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'এ বছর বঙ্গোপসাগরে পৌষ মাসে শক্তিশালী লঘুচাপ ছিল না। লঘুচাপ সৃষ্টি হলে সেখানকার গরম বাতাস ওপরে উঠে যায়। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে সাইবেরিয়া থেকে ঠাণ্ডা বাতাস হিমালয়ের ওপর দিয়ে আরও ঠাণ্ডা হয়ে ছুটে আসে। লঘুচাপ শক্তিশালী না হওয়ায় এ বছর উত্তরের সাইবেরীয় বাতাস আসতে বিলম্ব হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম এলাকা দিয়ে হিমেল বাতাস এসেছে। এতেই শীতের দাপট।'

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী বুধবার নাগাদ থাকতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। তার পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে মাসের শেষে আবারও শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। তবে রাজধানীতে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব খুব একটা পড়বে না। ঢাকার চারপাশে শীত থাকলেও নগরীতে মাত্রাতিরিক্ত কংক্রিটের ভবনের কারণে তাপমাত্রা কমে না। শামীম হাসান বলেন, উঁচু ভবনের কারণে ঢাকা 'আরবান হিট আইল্যান্ডে' পরিণত হয়েছে। দিনের বেলায় ভবনগুলো তাপশোষণ করে। রাতে তাপ ছাড়ে। তাই তাপমাত্রা কমছে না। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির আশপাশে হলেও তা কেবল ভোরের দিকে থাকে।

ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, যা এ মৌসুমের সর্বনিম্ন। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা দু-এক ডিগ্রি কমতে পারে। শীতের কারণে গতকাল উপচেপড়া ভিড় ছিল গরম কাপড়ের দোকানে। রাজধানীর নিউমার্কেটের দোকানগুলোতে দাম বেড়েছে আগের দিনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Link copied!