পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ১৭ দিনের মাথায় ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭, ০৯:২৫ এএম
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ১৭ দিনের মাথায় ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত

ঢাকা : দেশ বিভাগের আগে লাহোর প্রস্তাবের আলোকে ভারতের  ‘উত্তর-পশ্চিম’ ও ‘পূর্বাঞ্চলে’ দুটি পৃথক স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এর পাশাপাশি সচেতন বুদ্ধিজীবী  ও সাহিত্যিকরা প্রস্তাবিত পূর্বাঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার বিকল্প নেই বলে মত প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময়ে লাহোর প্রস্তাব সংশোধন করে একক স্বাধীন  সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে কেবল বাংলার কথাই আলোচনা হয়েছে। এটাই ছিল স্বাভাবিক। কারণ অখণ্ড পাকিস্তানের ৬০ শতাংশ লোকের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। তা ছাড়া প্রস্তাবিত পাকিস্তানের কোনো অঞ্চলের ভাষাই উর্দু ছিল না। 

পাকিস্তান পূর্বকালে মুজিবুর রহমান খাঁ রচিত ‘পাকিস্তান’, হাবিবুল্লাহ বাহারের ‘পাকিস্তান’ তালেবুর রহমানের ‘পকিস্তানবাদের ক্রমবিকাশ’ ও ‘সর্বহারাদের পাকিস্তান’ শীর্ষক গ্রন্থসমূহে এবং ড. কাজী মেহের হোসেন, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমেদ, কবি ফররুখ আহমেদ, আবদুল হক, মাহবুব জামান জায়েদি প্রমুখের লেখায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার প্রসঙ্গটি স্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের স্বাধীনতার সূচনালগ্নে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারত থেকে আগত মুসলিম আমলারা কেবল উর্দু ও ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা মানতে রাজি।  

তারা সরকারি কাজকর্মও উর্দু ও ইংরেজিতে শুরু করে দেয়। এরপর বাঙালিদের টনক নড়ে। তারা বুঝতে পারে ভারত থেকে মোহাজির হয়ে আসা আমলারা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে কোনোভাবে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মানতে রাজি নয়। তাই এই দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য জোরালো আন্দোলন অপরিহার্য হয়ে ওঠে।  বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যদাদানের প্রশ্নে সবার আগে এগিয়ে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম। 

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ১৭ দিনের মাথায় ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘তমুদ্দুন মজলিস’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেন তিনি। অধ্যাপক আবুল কাসেমের সঙ্গে এই সংগঠন তৈরিতে প্রথমদিকে যারা যুক্ত ছিলেন তারা হলেন- অধ্যাপক নুরুল হক ভুঁইয়া, সৈয়দ নজরুল ইসলাম (পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি), আবদুল খালেক (পরবর্তীতে আইজিপি) প্রমুখ। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ‘তমুদ্দুন মজলিস’ নেতৃবৃন্দ কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেন। 

অন্যদিকে যেসব বুদ্ধিজীবী তমুদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে সমর্থন ও নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তারা হচ্ছেন- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, আবুল মনসুর আহেমদ, ড. কাজী মোতাহের হোসেন, কবি ফররুখ আহমেদ প্রমুখ। তাদের প্রায় সাড়ে চার বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সফলতা লাভ করে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Link copied!