গণতন্ত্রের সূচকে দুরবস্থায় বাংলাদেশ

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৮, ১২:৫০ পিএম
গণতন্ত্রের সূচকে দুরবস্থায় বাংলাদেশ

ঢাকা : বৈশ্বিক গণতন্ত্রের একটি সূচকে আট ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থানও পিছিয়েছে। গণতন্ত্রের প্রশ্নে অবনতি হয়েছে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতিরই। বর্তমানে পূর্ণ গণতন্ত্রের ছায়াতলে ৫ শতাংশেরও কম মানুষ।

লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট গ্রুপের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বুধবার (৩১ জানুয়ারি) এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংবাদমাধ্যমটির এই প্রতিষ্ঠান ২০০৬ সাল থেকে এ সূচক প্রকাশ করছে।

এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯২তম, আগের বছর ছিল ৮৪। ১৬৭টি দেশকে নিয়ে করা ওই গবেষণায় অবস্থানের অবনমনের পাশাপাশি স্কোরেও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ১০-এর মধ্যে এবার মিলেছে ৫ দশমিক ৪৩ স্কোর, এক দশকের মধ্যে সর্বনিæ। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ বছর ২০০৮ সালে এ স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫২।

গত বছর বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৭৩। ২০০৬ সালে পেয়েছিল সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ১১ স্কোর। শুধু বাংলাদেশই নয়, গণতন্ত্রের সূচকে পিছিয়েছে এশিয়া মহাদেশও। এই অঞ্চলের গড় স্কোর ৫ দশমিক ৬৩।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আগে অবস্থান করছে ভারত (৪২তম, স্কোর ৭ দশমিক ২৩) ও শ্রীলঙ্কা (৬২তম, স্কোর ৬ দশমিক ৪৮)। এছাড়া নেপাল (৯৪তম, স্কোর ৫ দশমিক ১৮), ভুটান (১০৭তম, স্কোর ৫ দশমিক শূন্য ৮), পাকিস্তান (১১০তম, স্কোর ৪ দশমিক ২৬), মিয়ানমার (১২০তম, স্কোর ৩ দশমিক ৮৩) ও আফগানিস্তান (১৪৯তম, স্কোর ২ দশমিক ৫৫)। চীনের অবস্থান ১৩৯তম, যেখানে তাদের স্কোর ৩ দশমিক ১০।

গণতান্ত্রিক অবস্থানের ভিত্তিতে তালিকায় দেশগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন নম্বর শ্রেণি মিশ্র (হাইব্রিড) অঞ্চলে রয়েছে বাংলাদেশ। এই অঞ্চলে রয়েছে মোট ৩৯টি দেশ। এছাড়া প্রথম ভাগ পূর্ণ গণতন্ত্র অঞ্চলে রয়েছে ১৯টি, উন্নয়নশীল গণতন্ত্র অঞ্চলে ৫৭টি ও শেষ ধাপ কর্তৃত্ববাদী অঞ্চলে রয়েছে ৫২টি দেশ।

গবেষণায় বাংলাদেশে নাজুক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাকস্বাধীনতা খর্বের বিষয়টি উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, এখানে সংবাদমাধ্যম পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছে না। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে মিয়ানমারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। সেখানে উগ্রবাদী বৌদ্ধদের উত্থান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাধা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

এছাড়া ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের বিষয়টিও উঠে এসেছে। বিশেষ করে ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের চাপে মুসলিম-খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্ম-গোষ্ঠীর লোকের ওপর অত্যাচার ও এতে সরকারের সমর্থনের বিষয়টি অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেড়েছে।

এবার সারা বিশ্বের সার্বিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ১০-এর মধ্যে সারাবিশ্বের গড় অর্জন ছিল ৫ দশমিক ৫২ স্কোর। কিন্তু এবার সার্বিক গড় ৫ দশমিক ৪৮। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশেরও কম মানুষ ‘পূর্ণ গণতন্ত্রের’ মধ্যে থাকে।

তালিকায় ৯ দশমিক ৮৭ স্কোর নিয়ে যথারীতি শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। মাত্র ১ দশমিক শূন্য ৮ স্কোর নিয়ে সূচকের একদম তলানিতে অবস্থান করছে উত্তর কোরিয়া। গণতন্ত্রের অবস্থা পর্যালোচনা করে দেশগুলোকে স্কোর দেওয়া হয়েছে। ১০-এর মধ্যে ৮ স্কোরধারীদের পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গবেষণাটির ক্ষেত্রে ৫টি মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়ে থাকে। সেগুলো হলো- নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে কি না, সরকারে ভারসাম্য, রাজনীতিতে জনগণের সম্পৃক্ততা, সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন এবং জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!