স্মাট ফোন ব্যবহারে সাবধান

  • উজ্জ্বল প্রধান | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম
স্মাট ফোন ব্যবহারে সাবধান

ফাইল ফটো

ঢাকা: শুধুমাত্র যোগাযোগের সুবিধার জন্য যে মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই মোবাইলই ফোন এখন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমানে এটি ছাড়া আমাদের একটি দিন কাটানোর কথা চিন্তা করা মুশকিল।

জীবনের প্রতিটি কাজের সাথে এখন জড়িত এই মোবাইল ফোন। আর এই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের হিসাব মতে বর্তমানে বিশ্বে সক্রিয় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় পাঁচশত কোটি।

এই মোবাইল ফোনগুলো থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণে রেডিও তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে তা সত্যিই চিন্তার কারণ। আজকে আমরা জানব মোবাইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিকসমূহ ও তা থেকে বেঁচে থাকার কিছু উপায় সম্পর্কে।

♦ মোবাইল ফোনের বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি সমূহ

১। ব্রেইন ডিজিজ

যারা মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের ঘুম ঠিক মতো হয় না। আর ঘুম ঠিক মতো না হলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। আমাদের ঘুম ভাল হওয়াটা অনেকাংশেই নির্ভর করে দেহে পরিমিত মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণের ওপর। মোবাইল ফোনের আলো আমাদের শরীরে মেলাটনিন হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়াতে সহজে ঘুম আসতে চায় না। এর ফলে স্মৃতিশক্তি যেমন লোপ পায়, তেমনি মনোযোগ এবং বুদ্ধির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এছাড়া মস্তিস্কের রক্তের প্রবাহ কমে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার ব্রেইন ডিজিজ-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়।

২। চোখের ক্ষতি

অনেকে অন্ধকারে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন। মোবাইলে থাকা নীল আলো যখন রেটিনার উপর পড়ে ধীরে ধীরে এর কর্মক্ষমতাও অনেক কমে যেতে থাকে। তাই দীর্ঘদিন ধরে যদি এমনটা চলতে থাকে তাহলে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও অনেক বেড়ে যায়। তাই যারা অল্প বয়সে অন্ধ হতে চান না, তারা এখন থেকেই শুতে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার মোবাইল ফোনটা নিজের থেকে দূরে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৩। প্রসবকালীন সমস্যা ও মিসক্যারেজ

সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশনের প্রভাবে প্রেগন্যান্ট মায়ের শরীরে কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে। যার প্রভাবে তাঁর গর্ভস্থ বাচ্চার ক্ষতি সহ প্রসবকালীন বিভিন্ন প্রকার সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় তা থেকে ’নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন’ নামক এক তরঙ্গ বের হতে থাকে যা এতটাই শক্তিশালী যে অ্যাটোম মলিকিউলকেও এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নাড়াতে সক্ষম। এজন্য গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোন সহ অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা সম্ভব বিষয়ে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৪। পুরুষদের বন্ধ্যত্ব

মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন এমন কিছু পুরুষদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা কম ব্যবহার করেন বা করেন না তাদের তুলনায় স্পার্ম কাউন্ট অনেক কম। মোবাইল থেকে আসা রেডিয়েশনের জন্য  বীর্য উৎপাদনকারী কোষ এত মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে স্পার্মের মান অনেক কমতে শুরু করে এবং অনেক সময় বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে। ফলে তাদের প্রজনন ক্ষমতাও অনেক কমে যেতে থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে দেহের অভ্যন্তরে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যে বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই যারা সন্তানের বাবা হতে চান তারা ভুলেও অধিক মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না।

৫। ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি  

মোবাইল ফোন থেকে বেরিয়ে আসা নীল আলোর প্রভাবে যে শুধু মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায় তা নয়, সেই সঙ্গে আরও সব হরমোন-এর ক্ষরণে বাধা সৃষ্টি করে। এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হলো এমন একটি শক্তিশালী উপাদান, যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদানগুলো বের করে দিয়ে ক্যান্সার কোষের জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা কমায়। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারকারীদের শরীরে এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট-এর পরিমাণ যায়। একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সাথে মোবাইল ফোনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যারা আন্ডারগারমেন্টসের ভিতরে মোবাইল রাখেন তাদের শরীরে কিছু অংশে বিশেষ করে ব্রেস্ট-এ রেডিয়েশনের মারাত্মক প্রভাব পড়ে যার ফলে তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই যেকোন ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখতে অতিরিক্ত মোবাইলের সঙ্গ ছাড়া খুবই জরুরী।

♦ মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনথেকে বাঁচার উপায়  

বর্তমান সময়ে যেহেতু মোবাইল ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই তাই ফোন থেকে যাতে আমাদের বেশী ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা নিম্নের  বিষয়গুলির প্রতি খেয়াল রাখলে উপকার পেতে পারি।

মোবাইল ফোনে একাধারে অনেকক্ষণ কথা থেকে বিরত থাকুন। যদি কোন ক্ষেত্রে দীর্ঘসময়  কথা বলার দরকার হয় তাহলে মাঝে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে তারপর আবার কল করুন। কারণ একাধারে দীর্ঘসময় মোবাইল ফোনে কথা বললে কান ব্যথা, মাথা ব্যথাসহ  মস্তিস্কে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনে গান  শুনবেন না। হেডফোনে গান শোনার ক্ষেত্রে ভলিউম কমিয়ে তারপর ব্যবহার করুন।

দীর্ঘসময় মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ব্যথাসহ মাথাব্যথা হতে পারে। তাই একাধারে অনেকক্ষণ মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। ফোন কলের পরিবর্তে এসএমএস এবং ভয়েস ম্যাসেজ ব্যবহার করতে পারেন। কথা বলার সময় মোবাইলকে মাথার যতটুকু সম্ভব দূরে রেখে ব্যবহার করুন।

প্রয়োজনে মোবাইল দূরে রেখে স্পিকারে কথা বলুন। মোবাইল ফোন ক্রয়ের সময়ে মোবাইলটি কতটা পরিবেশবান্ধব সেদিকে নজর রাখুন। এখনকার মোবাইলগুলোতে সাধারণত সার (SAR) ভ্যালু প্যাকেটেই লেখা থাকে। তাই এক্ষেত্রে একটু সতর্ক হলেই  বাজার থেকে কম রেডিয়েশনের মোবাইল ফোন কেনা সম্ভব।

স্মার্টফোন বর্তমান মানব সভ্যতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বে এর ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।  যেহেতু এই যন্ত্রটি ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড জীবন যাপন সম্ভব নয়, তাই  সবাইকে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আপনার সুস্থ থাকার বিষয়টা একমাত্র আপনার হাতেই। এজন্য এখনই সতর্ক হন। (সংকলিত)

সোনালীনিউজ/এমএইচ

Link copied!