টাকা ছাড়া কমিটির অনুমোদন দিতেন না ওমর ফারুক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০১৯, ০৩:২০ পিএম
টাকা ছাড়া কমিটির অনুমোদন দিতেন না ওমর ফারুক

ঢাকা: যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী টাকা ছাড়া কমিটির অনুমোদন দিতেন না। অবশেষে মুখ খুলতে শুরু করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতারা। ওয়ার্ড পর্যায়ে সর্বনিম্ন ৩০ লাখ আর জেলা পর্যায়ে কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। 

নিজের স্বার্থে গঠনতন্ত্রেও এনেছেন পরিবর্তন। ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের চলমান অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া আটকের ঘটনায় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।

আর এর পরই তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ও তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয়। এরপরই চলে যান পর্দার অন্তরালে। তবে এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে উঠে আসে কমিটি অনুমোদনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ। 

জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কমিটি অনুমোদনের জন্য ওমর ফারুক চৌধুরী দুই দফায় নিয়েছেন আড়াই কোটি টাকা।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস বলেন, তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পরই সারা দেশে জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি সম্মেলন ছাড়াই আহ্বায়ক হিসেবে দেয়া হয়। অর্থের বিনিময়েই এই কমিটি দেয়া হয় বলে শুনেছি।

যশোর ও পাবনা জেলায়ও কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে কমিটি অনুমোদনের বিষয়ে। পাবনা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রকিব হাসান টিপু এমনটা জানান।

তিনি বলেন, আমাদের কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়ে কিংবা অবগত না করেই কমিটি বাতিল করা হয়েছিল। পরে শুনেছি ৫-৭ কোটি টাকার বিনিময় এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

আর তার আর্থিক অনিয়মের কারণেই সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।

এবিষয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বলেন, ঢাকাতে একটি ওয়ার্ডের সম্মেলন করতে গেলেও ২০-৩০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হওয়ার পর কারও পক্ষে এটা রিকভার করার সুযোগ নেই। তাই তিনি এই টাকা উদ্ধার করতে হয়তো মাদকের ব্যবসা করবেন কিংবা টেন্ডারবাজি করবেন।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, নেতা নির্বাচিত হতে কাউকে যদি টাকা দিতে হয় তবে এর চাইতে দুঃখজনক কিছু নাই।

এমনকি গত সাত বছরেও কোনো কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক করেন নি বলেও মন্তব্য করেন তারা।

উল্লেখ্য, ক্যাসিনোকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, ‘আপনি বলছেন ৬০টি ক্যাসিনো আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনারা ৬০ জনে কি এত দিন আঙুল চুষছিলেন? তাহলে যে ৬০ জায়গায় এই ক্যাসিনো, সেই ৬০ জায়গার থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সেই ৬০ থানার যে র‌্যাব ছিল, তাদের অ্যারেস্ট করা হোক।’

মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় গোলারটেক মাঠে ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের কয়েকটি ওয়ার্ডের যৌথ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান।

তিনিবলেন, আপনারা অ্যারেস্ট করবেন, আমি বসে থাকবো না। আপনাকেও অ্যারেস্ট হতে হবে। কারণ আপনি প্রশ্রয় দিয়েছেন। আমি জানি না আমার বড় শখ জাগছে ক্যাসিনোটা দেখার; আমাকে নিয়ে যাবেন?

এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে যুবলীগ সভাপতি  আরও বলেন, কয়েকটা জায়গা নির্ধারণ করলেন যে ক্যাসিনো চলে, যুবলীগ চালায়। আপনি সাংবাদিক- বলতে হবে সেই ক্যাসিনোগুলো কোথায়? সেগুলো কারা কারা চালায়?

তিনি বলেন, আমার ব্যর্থতা আমি অস্বীকার করবো না। আর আপনারা এতদিন কোথায় ছিলেন? আপনাদের কাছে যদি তথ্য থাকে তাহলে এতদিন কেন সেটা প্রকাশ করেননি। লুকিয়ে রেখেছিলেন কেন? আমার প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে কেন জেগে উঠলেন? আপনারা কি দলকে পঙ্গু করার নীতিতে আসছেন?

যুবলীগ নেতাদের অ্যারেস্ট করা নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমার প্রশ্ন হলো এখন কেন এ্যারেস্ট হবে অতীতে কেন হয়নি? আপনার কাছে যদি আগে তথ্য থাকতো তাহলে এতদিন কেন প্রশ্রয় দিয়েছেন? আপনার দিকে আঙ্গুল তুলতে হবে। আমি সঠিক আমি তা বলছি না তবে আপনারা এতদিন কি করেছেন।

সেদিন দক্ষিণ যুবলীগকে সবচাইতে সফল সংগঠন দাবি করে তিনি বলেন, অভিযোগ থাকতে পারে, আমাদেরকে অভিযোগ জানান। সে যদি সাংঠনিক কার্যক্রমে বাধা দেয়, সে যদি মাদকের সাথে জাড়িত হয়, সে তথ্য কে দেবে? আপনারা বলছেন ৬০ জায়গায় ক্যাসিনো আছে সে জায়গায় আপনারা কি আঙুল চুষছিলেন?

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!