বাজেট : ২৪ দফা প্রস্তাবনা বিএনপির

  • নিজস্ব প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২১, ১০:২৫ এএম
বাজেট : ২৪ দফা প্রস্তাবনা বিএনপির

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন আজ। বৃহস্পিতবার (৩ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিকেল ৩টায় তাঁর দায়িত্বকালের তৃতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। 

আসন্ন বাজেট ‘মানুষের জীবন বাঁচানো ও ঝুঁকি মোকাবিলা’ হোক চেয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ২৪ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে দলটি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিখাতকে গুরুত্ব দিয়ে এই তিনখাতে জিডিপির পাঁচ শতাংশ করে মোট ১৫ শতাংশ বরাদ্দ চেয়েছে তারা। এছাড়াও ‘সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতি’ প্রতিষ্ঠা, শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি ‘অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন, কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জিডিপির ৬-৭ শতাংশ বরাদ্দ প্রদান, ‘দিন আনে দিনে খান’ শ্রেণির মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাসের প্রণোদনা প্রদান এবং ‘দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজে’র আওতায় আনার প্রস্তাবনা দেয় বিএনপি।

আসন্ন বাজেটে এই তিন খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ করে মোট ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে দলটি। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবির কথা জানান। একই সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে ২৪ দফা বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পাঁচ দিন আগে বিএনপি মহাসচিব তাদের বাজেট ভাবনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এবারের বাজেট হওয়া উচিত করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও অভিঘাত থেকে উত্তরণের বাজেট। বর্তমান বিরাজমান জটিল, সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো জীবন ও জীবিকার সমন্বয়সাধন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিএনপি এবারের বাজেটকে কেবল নির্দিষ্ট অর্থবছরের হিসাবের চেয়ে আগামী দিনের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট পথ-নির্দেশের যাত্রাবিন্দু হিসেবে দেখতে চায়। সেই লক্ষ্যে বিএনপি আগামী বাজেটকে ভবিষ্যতের অর্থনীতির নীতিকৌশল হিসেবে 'সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতি' প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার হিসেবে দেখতে চায়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আগামী দিনে একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী, সামাজিক নিরাপত্তাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে সব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের মাধ্যমে একটি কার্যকর নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, একটি দেশের অর্থনীতি তখনই সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব হয়ে উঠে যখন সেখানে সুশাসন ও জবাবদিহিমূলক সরকার জনগণের অবাধ নিরপেক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের মূলমন্ত্র হচ্ছে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের সর্বোত্তম পন্থা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা বর্তমানে সম্পূর্ণ রূপে অনুপস্থিত।'

২৪ দফা প্রস্তাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধ ও করোনা চিকিৎসা দুটিই সমানতালে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ, বৃত্তি প্রদান, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, কভিডকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষায়তনে আর্থিক সহায়তা প্রদান, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়ন ও উচ্চশিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের বহুমুখীকরণ, উৎপাদন, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২৮ পৃষ্ঠার বাজেট ভাবনায় কর্মহীন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জিডিপির ৬-৭ শতাংশ, 'দিন আনে দিন খান' শ্রেণির মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা করে তিন মাসের প্রণোদনা প্রদান, নিরপেক্ষভাবে দুস্থ উপকারভোগীর তালিকা প্রণয়ন করে 'দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা সহায়তা প্যাকেজে'র আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে বিএনপি।

এ ছাড়া কৃষি কমিশন গঠন, রপ্তানি বহুমুখীকরণে বিকল্প বাজারের অনুসন্ধান, টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় মহামারির মতো সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ, জাতীয় স্বাস্থ্য কার্ড চালু, প্রত্যেক জেলায় ডেডিকেটেড সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, করোনাকালে জেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা বেড, আইসিইউর সংখ্যা বৃদ্ধি, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উৎস্য থেকে বিদেশি অনুদান বাড়ানোর কথা বিএনপির বাজেট প্রস্তাবে রয়েছে।

ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফখরুল ইসলাম আলমগীর শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে একটি 'অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ' গঠন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

কালো টাকা সাদা করার সরকারি নীতির কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আসছে বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যতদিন অপ্রদর্শিত আয় থাকবে, ততদিন এই সুযোগ থাকবে। হরিলুট করে সঞ্চিত কালো টাকা জায়েজ করার দরজা অবারিত করে দিলেন অর্থমন্ত্রী, যা অনৈতিক এবং ন্যায়-নীতি মেনে আইন পালনকারী নাগরিকদের প্রতি অবিচার বলে আমরা মনে করি।

ব্যাংকিং খাতে 'চরম অব্যবস্থাপনা' ও 'হরিলুটে' ঋণখেলাপির চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঋণখেলাপিদের কবল থেকে দেশকে ও অর্থনীতকে মুক্ত করতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলা হলেও তাদের আবার বিপুল ঋণ রাইট অব করে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ঋণখেলাপি ও ব্যাংক মালিকদের অনৈতিক সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরও চাওয়া- ‘জীবন ও জীবিকা’ বাঁচানোর ‘আত্মনির্ভরশীল’ বাজেট। বিএনপির এ প্রস্তাবনার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘বাজেট ভাবনার মাঝেও সরকারের সফলতা বা অর্জনের কোনো একটি বাক্যও খুঁজে পেলাম না বিএনপি নেতাদের থেকে। বিএনপি যত ইতিবাচক ভাবনাই ভাবুক, তারা তাদের সেই সংকীর্ণতার বৃত্ত থেকে আজও বের হতে পারেনি।’

বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দল, ট্রেড বডি বা সিভিল সোসাইটি থেকে যেকোনো প্রস্তাবনা সরকার ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলেন, সংখ্যাই যদি সে একজনও হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব। জাতির জনকের আদর্শের দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এই নীতি ধারণ করে। জনগণের সরকার হিসেবে বাজেটসহ সকল কাজে জনগণের চিন্তা-চেতনা একোমোডেট করে অধিকতর গণমুখী করার মানসিকতা সরকার লালন করে বলেই দেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলছে।’

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!