ফাইল ছবি
বাংলাদেশের রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতোই বরাবর উত্তেজনা ও শোরগোলের রাজনীতি। এখানে আবেগ, স্লোগান ও কটূক্তি প্রাধান্য পায়, যেখানে যুক্তি ও সংযমের কণ্ঠ প্রায়ই হারিয়ে যায় রাজনৈতিক কোলাহলে।
তবে এই প্রেক্ষাপটে সালাহউদ্দিন আহমেদের আবির্ভাব এক ব্যতিক্রম। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সদস্য তার শান্ত, যুক্তিনির্ভর ও সংযত বক্তৃতার ধরনে একটি নতুন সুর এনেছেন, যা বাংলাদেশি রাজনীতিতে বিরল হলেও ক্রমেই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে এক ভূমিকম্পতুল্য রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে নতুন রাজনৈতিক সম্ভাবনার সূচনা হয়। সেই প্রেক্ষাপটেই শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে আত্মপ্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তার পুনরুত্থানের পেছনে রয়েছে নাটকীয় অতীত। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকার উত্তরা থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তুলে নেওয়া হয়। দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর ভারতের শিলং শহরে তাকে আটক অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত গুম কমিশন নিশ্চিত করে তিনি রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের একটি উদাহরণ।
ভারতে প্রায় নয় বছর কাটানোর কারণে তার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়। তবে সালাহউদ্দিন তথ্য, যুক্তি ও সংযমের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দীর্ঘ সময় ভারতে থাকার কারণে রাজনৈতিক মহলে তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হলেও তার কাজ ও বক্তব্য সন্দেহ দূর করেছে।
২০২৪ সালের আগস্টে দেশে ফিরে তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ মুখে পরিণত হন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলাপে দলের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হন। তার ভূমিকা ছিল পরিমিত, যুক্তিনির্ভর ও বাস্তববাদী। তিনি আবেগ নয়, গঠনমূলক বিশ্লেষণ; স্লোগান নয়, যুক্তি; ক্রোধ নয়, সংযত কণ্ঠ প্রকাশ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের উত্থান শুধু একজন নেতার পুনরুত্থান নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ধারা পরিবর্তনের ইঙ্গিত। দীর্ঘদিনের সংঘাতমুখী রাজনীতি ও সহিংসতার সংস্কৃতির বাইরে এখন নতুন রাজনৈতিক ভাষা তৈরি হচ্ছে-যেখানে যুক্তি, সংযম ও শালীনতাই প্রধান অস্ত্র।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি নিজেকে নতুনভাবে সাজাতে চাচ্ছে। দলটির ভেতরে নতুন ‘যুক্তির ভাষা’ ধারা তৈরি হচ্ছে, যার মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ। তার শান্ত কণ্ঠ প্রচলিত রাজনীতির শোরগোলের ভেতর নতুন যুগের ইঙ্গিত দেয়-এক রাজনীতি যেখানে তর্কের চেয়ে যুক্তি, উত্তেজনার চেয়ে সংযম, আবেগের চেয়ে নীতিনিষ্ঠ আলোচনার গুরুত্ব বেশি।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :