বাড়ি ও দলীয় কার্যালয় নিয়ে বিপাকে বিএনপি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭, ০৩:৩৫ পিএম
বাড়ি ও দলীয় কার্যালয় নিয়ে বিপাকে বিএনপি

ঢাকা: দল ও দলের বাইরের একের পর এক চাপে ‘নাজেহাল’ সংসদের বাইরের বিরোধী দল বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়ে জেলে যাওয়ার শঙ্কা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের দোলাচালসহ দল গোছানোর চ্যালেঞ্জের মধ্যে আর একটি যোগ হলো দলেরর নয়াপল্টন কার্যালয়। ঋণ খেলাপি মামলায় শিগগিরই নিলামে উঠতে পারে বলে জানা গেছে। 

বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগে স্বয়ং দলের চেয়ারপারসন। এ ব্যাপরে খোঁজ খবর নিতে তিনি আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এরই মধ্যে দলটির পক্ষ থেকে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা এসেছে।

মামলার সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী ও তার বন্ধু এ এইচ খান ১৯৮০ সালের ২০ আগস্ট ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল থেকে ৩৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। এর মধ্যে ওই ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে তারা ইস্টার্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন। ঋণগ্রহীতা হিসেবে তানভীর গ্যারান্টার হন এবং তার বাড়ির দলিল মর্গেজ দেওয়া হয়। প্রতি মাসে সোয়া তিন লাখ টাকা করে এক বছরের মধ্যে পুরো অর্থ পরিশোধ করার জন্য তারা চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু এর এক টাকাও পরিশোধ করেননি। উল্টো উচ্চ আদালতে দুই বার রিট করে মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত করান। সে পাওনা ১৯৯৬ সালে সুদে-আসলে প্রায় সাড়ে তিন কোটিতে দাঁড়ায়। এখন সেটা প্রায় ১৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও তারা ব্যাংকে একবারের জন্যেও যোগাযোগ করেননি। ব্যাংক থেকে অসংখ্য চিঠি দেওয়া হলেও এর কোনোটির উত্তর দেননি। ১৯৮৮ সালের ৭ ডিসেম্বর এ এইচ খান ব্যাংক বরাবর একটি চিঠি লিখে তার এসওডি ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত গুলশানের চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর বাড়ির পরিবর্তে ২৮/১ নম্বর নয়াপল্টনের পাঁচতলা বাড়িসহ ৬.১৮ শতাংশ জমি সিকিউরিটি হিসেবে জমা রাখার আবেদন করেন, যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালের ১৬ আগস্ট ওই সম্পত্তি ব্যাংকের কাছে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলমূলে বন্ধক রাখা হয়। এর মাধ্যমে ওই সম্পত্তি বিক্রি করার বিষয়ে ব্যাংক আইনি ক্ষমতা পায়।

১৯৯৬ সালে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। এ সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতা দুইবার উচ্চ আদালতে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। সর্বশেষ স্থগিতাদেশ কিছুদিনের মধ্যে উঠে যাবে। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিএনপি কার্যালয় নিলামে তুলে তাদের পাওনা আদায় করতে পারবে। ঢাকার অর্থ ঋণ আদালত সূত্রে জানা যায়, ‘নিলামের উদ্যোগ প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে।’ 

ব্যাংকের গণসংযোগ কর্মকর্তা জিয়াউল করিম বলেন, ‘অন্যান্য খেলাপি ঋণের মতোই এ ঋণটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এর সঙ্গে কারা জড়িত, সেটা বিবেচ্য নয়। আইন সবার ক্ষেত্রে সমান। দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী ঋণটি নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। অর্থ ঋণ আদালতের মামলা সাধারণত দুই বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু এ মামলাটির বয়স ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। এসব বিষয় আমাদের প্যানেল আইনজীবীরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন।’

অভিযোগ সম্পর্কে চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘কখন কোন ব্যাংকে আমি গ্যারান্টার হয়েছি সেটা কি মনে আছে? বিএনপি অফিসের দলিল বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেওয়া হয়েছিল কি না তাও আমার জানা নেই। তবে ইস্টার্ন ব্যাংকের সঙ্গে একটি মামলা ঢাকার অর্থঋণ আদালতে চলছে। নথিপত্র না দেখে বিস্তারিত বলতে পারব না। মামলাটি সঠিক নয় বিধায় উচ্চ আদালত দুই বার এর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির আইনজীবী নোত অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, ‘বিএনপি কোন ঋণের জন্য কার্যালয় মর্টগেজ দেয়নি। মূল দলিলও বিএনপির হাতে রয়েছে। তাছাড়া ফটোকপি নিয়ে মর্টগেজ করার কোন নিয়ম নেই। জাল দলিল করে দলকে কেউ ফাঁসানোর চেষ্টা করতে পরে।’

বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখতে এটা কেউ করছে বলে মন্তব্য করে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। আমাদের দলীয় কার্যালয় নিলামে উঠছে—সে ধরনের কোনো চিঠিপত্র এখনো পাইনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কতটা এগিয়েছে তা আমাদের আইনজীবীরা খোঁজখবর নিয়ে জানানোর পর আমরা বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারব। তবে আমরা মনে করি, কেউ এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে সেটা হবে ষড়যন্ত্রমূলক। এরই মধ্যে মিথ্যা মামলায় আমাদের চেয়ারপারসনের বাড়ি বেদখল করা হয়েছে। এবার হয়তো দলীয় কার্যালয় নিলামে তোলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী নানা কারণে বিতর্কিত। ২০০৯ সালের ৯ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁর ছেলে ইরাদ আহমেদ সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার কাছে পাঁচ কোটি টাকা ঘুষ চেয়েছেন। এ টাকা দেননি বলেই তাঁকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ সংবাদ সম্মেলনে তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন। এর জের হিসেবে ১৭ মার্চ তানভীরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক নেতা জানান, তানভীর সিদ্দিকী যেহেতু দলের ট্রেজারার ছিলেন, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দললিপত্র নিয়ে নিজের সুবিধা ভোগও করতে পারেন। 

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই

Link copied!