ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও আমেরিকার চক্রান্তে নির্বাচনে হারে আ.লীগ

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০১৭, ০৫:২৮ পিএম
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও আমেরিকার চক্রান্তে নির্বাচনে হারে আ.লীগ

ঢাকা: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য বাইরের দেশের চক্রান্তে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় এক সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো চেয়েছিলাম আমার দেশের সম্পদ আগে আমার দেশের মানুষের কাজে লাগবে। আমার ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে। তারপর, আমরা ভেবে দেখব বিক্রি করব কি, করব না।’

২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির কাছে হারের দিকে ইঙ্গিত করে এই মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুব মহিলা লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফলাফল কী ? ওই যাদের বিরুদ্ধে এত কথা বলে.. এখানে যে র’য়ের প্রতিনিধি, সে তো হাওয়া ভবনে বসেই থাকত। আমেরিকান অ্যাম্বাসির লোক, হাওয়া ভবনে বসেই থাকত। এই নির্বাচনটা.. ২০০১-এ সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে হারাবে, আর এখান থেকে গ্যাস নেবে।’

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটের ৪১.৪০ শতাংশ পেয়ে ১৯৩টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপি। চারদলীয় জোটের দল জামায়াতে ইসলামী ৪.২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৭টি আসন পেয়েছিল। অন্যদিকে ৪০.০২ শতাংশ ভোট পেলেও ৬২টি আসন নিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল আওয়ামী লীগকে।

এর আগেও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, তিনি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হননি বলেই ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছিল। তবে ভারতের জাতীয় প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এবং বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ এই প্রথম তুললেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, গ্যাস পাবে না। আল্লাহ-তালাই গ্যাস দেবে না। বিক্রি তো দূরের কথা....এবং তাই হয়েছে.. পায়নি, দিতে পারেনি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আজকে শুনি, খুব ভারতবিরোধী কথা! আমার প্রশ্ন ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে যখন, আমেরিকান কোম্পানি  আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে চাইল ভারতের কাছে, ভারত গ্যাস কিনবে... ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা কে দিয়েছিল? এই খালেদা জিয়াই তো মুচলেকা দিয়েছিল.. দিয়েই তো ক্ষমতায় এসেছিল। আমি তো দেইনি।’

ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিএনপির কর্মসূচির কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্দোলন করলেন, ফারাক্কা পর্যন্ত লংমার্চ করলেন। আর ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে গেলেন!’

১৯৭৫ সালের পর জিয়া ও এরশাদ সরকার এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সরকার এই বিষয়গুলো নজরেই আনেনি বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দালালি এমনভাবে ছিল যে, এটা উচ্চারণই করার সাহস পায়নি। তারা এত দেশপ্রেমী হলে এই কথা তোলেনি কেন?’

জিয়াউর রহমানের সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছিল। তাদের যে নির্বাচনের ইতিহাস.. তাদের হ্যাঁ-না ভোট, তাদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, এরপর সংসদ নির্বাচন, পরে ’৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে শুরু করে সেই ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন, মাগুরা উপ-নির্বাচন, বিভিন্ন উপ-নির্বাচনের তথ্য যদি আমরা দেখি; এদেশে কবে, কখন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা করেছে বা করতে পেরেছে।’

যুব মহিলা লীগের নেতাদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণকে বুঝাতে হবে, আওয়ামী লীগকে কেন ক্ষমতায় দরকার। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতেই দলীয় নৃত্য এবং তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর কাউন্সিল অধিবেশনে নাজমা আক্তার ও অপু উকিল যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচিত হন।

যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা এবং যুব মহিলা লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাকিয়া পারভিন মণি বক্তব্য রাখেন।

২০০২ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় যুব মহিলা লীগ। ২০০৪ সালের ৫ মার্চ প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এটি তাদের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন।

সোনালীনিউজ/আতা

Link copied!