‘ভীতি’ ছড়ানো নিয়ে আ.লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮, ১০:১৬ পিএম
‘ভীতি’ ছড়ানো নিয়ে আ.লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

চট্টগ্রাম : নির্বাচন ঘিরে চট্টগ্রামের ভোটারদের মধ্যে ‘ভীতি সৃষ্টি’ করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা।

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নগরীর ছয়টি আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোটারদের মধ্যে ‘ভীতি সৃষ্টির’ জন্য সরকারি দল ও পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেন।

বিপরীতে ভোটারদের মনে ‘ভয়ের আবহ’ থাকার নেপথ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিন চলা বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব ও ‘আগুন সন্ত্রাসকে’ দায়ী করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিনপুত্র নওফেল একাদশ জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসনে নৌকার কাণ্ডারী। অন্যদিকে আমীর খসরু চট্টগ্রাম-১১ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন।    

সোমবারের সভায় বিভাগীয় কমিশনারের উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় শঙ্কা- ভোট দিতে যেতে পারব তো? একথা আসলো কেন? এই ফিয়ার সাইকোসিস সৃষ্টি কারা করল? এই যে গায়েবি মামলা- এটা কার চিন্তা? এর উদ্দেশ্য কী? এমন কী বাধ্যবাধকতা যে বাড়ি থেকে আমাদের দলের নেতাকর্মী, সমর্থক এমনকি এজেন্টদেরও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রার্থীদের প্রচারণার আগে-পরে ওই এলাকায় তাণ্ডব। পুলিশ ভিডিও করছে প্রচারণা। এসব কী দেশের মানুষ দেখছে না?’

পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের ভ‚মিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সব থেকে বড় প্রশ্ন আজ কেন একটি দলের জন্য প্রশাসন এ ভ‚মিকায়? একটা উদাহরণ দেন যে ঘটনার তদন্ত বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব মন্ত্রী পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে। আওয়ামী লীগের একটা লোক গ্রেপ্তার হয়েছে? সব বিরোধীদলের লোক কেন গ্রেপ্তার হবে? কাল থেকে এসব এবং গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ করুন। সব থেকে বড় কথা জনগণ এসব আর বিশ্বাস করছে না।’

আমীর খসরুর বক্তব্যের জবাবে নওফেল বলেন, ‘ভোটারদের মধ্যে কোনো ভয়-ভীতি দেখছি না। অথচ বারবার এটা যখন বলা হচ্ছে তখন প্রেক্ষাপট দেখা দরকার। ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিরোধের নামে যে তাণ্ডব, আগুন সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড চালানো হয় একটি দলের নেতৃত্বের নির্দেশে- তখনই ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কেউ ভয়ের কাজ করলে, কোনো তাণ্ডব-হত্যায় সম্পৃক্ত থাকলে তাদের মধ্যেই ভয় আসে। প্রার্থী হিসেবে আমিও শঙ্কিত তারা যদি আবার কিছু ঘটায়। ভোটাররা ভোট দিতে পারবে কিনা? এর কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে শত শত ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।’

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া হয়রানি ও গ্রেপ্তার নিন্দনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের শঙ্কার আরেকটি কারণ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নিবন্ধনহীন এক দলের লোকজন একটি জোটের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে।’

এসময় আমীর খসরু বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা রাজনৈতিক মঞ্চ নয়।’
তখন বিভাগীয় কমিশনার নওফেলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি বলেছেন, আমরা শুনেছি। আপনার নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে কিছু বলার থাকলে বলুন। ইভিএম নিয়ে যদি কিছু বলতে চান।’

তখন নওফেল জানান, তার চট্টগ্রাম-৯ আসনে ইভিএম নিয়ে নারী ভোটারদের মধ্যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

সভায় চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘রবিবার নয়াবাজারে বিজয় শোভাযাত্রার উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার সময় লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। তারা আমাকে গুলি করতে উদ্যত হয়। আমার এ অবস্থা হলে নেতাকর্মীদের কী অবস্থা? নির্বাচনের পরিবেশ তো নেইই, পরিবেশের আরো অবনতি হচ্ছে। এভাবে চললে দেশে গণতান্ত্রিক ধারার অবনতি হবে। এর দায় আপনাদের নিতে হবে।’

পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, নেতাকর্মী-এজেন্টদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার, এলাকা ছাড়তে হুমকি এবং নির্বাচনী কাজে জড়িতদের গায়েবি মামলা দেওয়ার অভিযোগ করে নগরীর বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের অদল-বদল করার প্রস্তাব দেন নোমান।

সভায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ‘দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা নিয়ে যেহেতু নির্বাচনে এসেছে পার্থক্য তো আমাদের আছেই। নির্বাচনে জড়িতদের দোষারোপ করে তাদের কাছ থেকে আবার সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে সেটা সম্ভব না।’
আইন অনুসারে কাজ করতে বিভাগীয় কমিশনারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান বাদল।

সভায় বিএনপির প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৪) ও আবু সুফিয়ান (চট্টগ্রাম-৮) এবং চট্টগ্রাম-৫ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নির্বাচনী প্রচারে বাধা, নেতাকর্মীদের নির্বাচারে গ্রেপ্তার, পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন।

সভায় বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পারিবারিক ও আত্মীয়তার বন্ধন আছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এটা সহায়ক। চট্টগ্রামের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। আশাকরি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকবে। প্রার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে গণসংযোগ করতে পারেন সেটা আমরা দেখব। মানুষ অবশ্যই ভোট দিতে যেতে পারবে। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করবেন না। দেখুন, অপেক্ষা করুন।

বিরোধী দলের কোনো নেতাকর্মী-সমর্থক যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা পরোয়ানা নেই তাদের বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সভায় অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার শঙ্কর রঞ্জন সাহা, চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, উপ-পরিচালক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ এবং নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!