ঢাকা : ঈদ একটি আরবি শব্দ। অর্থ হচ্ছে ফিরে আসা। এই দিনটি যেহেতু প্রতি বছর ফিরে আসে মুসলিম জীবনে তাই তাকে ঈদ বলে। এই ঈদকে নিয়ে মানুষের কত আনন্দ! কত খুশি যার ইয়ত্তা নেই। ঈদকে ঘিরে যেমন খুব আনন্দ রয়েছে তেমনি রয়েছে শরয়ী দৃষ্টিকোণ। এখানে আলোচনা করব ঈদের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে।
তার আগে একটু জেনে নিই, ইসলাম ধর্মে এই ঈদের প্রচলন কখন থেকে শুরু হয়েছে। ঈদ প্রচলনের আগে মদিনাবাসীর জন্য দুটি দিবস ছিল যে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। ঈদের প্রচলন কখন থেকে শুরু হয়েছে তা আবু দাউদ শরীফের একটি হাদীস থেকে জানা যায়।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এ দুই দিনের কী তাৎপর্য আছে? মদীনাবাসিরা উত্তর দিলেন, আমরা জাহেলী যুগে এ দুই দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এ দু’দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর’। (আবু দাউদ শরীফঃ ১১৩৪)।
ঈদ আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে দিয়েছেন নিয়ামতস্বরূপ। এই দিনটি যেন আমাদের হেলায় খেলায় না চলে যায় তাই খেয়াল করতে হবে। ঈদের করণীয়র মধ্যে হলো প্রথমতঃ ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা। কিন্তু আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে- বর্তমান সমাজে ঈদের আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত থাকে অধিকাংশ লোক ফজরের নামাজ পড়ার খবর থাকে না। অথচ ফজরের নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
দ্বিতীয়ত করণীয় হচ্ছে- ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা। হাদিসের মধ্যেও গোসল করার প্রমাণ পাওয়া যায়। হযরত ইবনে উমার (রাযি.) থেকে বিশুদ্ধসূত্রে বর্ণিত যে, ‘তিনি ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন (সুনানে বায়হাকিঃ ৫৯২০)’।
তৃতীয়ত করণীয় হচ্ছে- গোসল করার পর উত্তম জামাকাপড় পরিধান করা। আমাদের সাধ্যমত উত্তম জামাকাপড় পরিধান করা উচিত (নতুন হতে হবে তেমন নয়) কারণ, আল্লাহ তার প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে চান। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,'‘আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নিয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন (সহিহ আল জামেঃ ১৮৮৭)’।
চতুর্থত করণীয় হচ্ছে- ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্বে আর ঈদুল আজহার দিন নামাজের আগে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাজের পর খাওয়া সুন্নাত। হযরত বুরাইদা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না,আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু খেতেন না (তিরমিজি শরীফঃ৫৪৫)’।
পঞ্চমত করণীয় হচ্ছে- ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নাত। হযরত আলী (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সুন্নত হলো ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া (তিরমিজি শরীফঃ৫৩৩)’।
আরেকটি সুন্নত হচ্ছে, এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া আর অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা। হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন (সহিহ বুখারীঃ৯৮৬)’।
ষষ্ঠতম করণীয় হচ্ছে- ঈদের নামাজ শেষে ঈদের খুতবা শ্রবণ করা। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শরীয়ত মোতাবেক খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, বললেন, আমরা এখন খুতবা দিব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে (আবু দাউদ শরীফঃ ১১৫৭)’।
আরেকটি জরুরি বিষয় হচ্ছে, ফিতরা দান করা। রমজান মাসে রোজার যে ত্রুটি হয়েছে তা পূরণার্থে অভাবগ্রস্ত আর গরীবদের যে খাদ্যসামগ্রী দান করা হয় তাই হলো সাদকায়ে ফিতর। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিলেন (সহিহ বুখারীঃ ১৫০৩)।’
এবার উল্লেখ করবো ঈদের দিন কি কি বিষয় বর্জনীয় তা নিয়ে। ঈদ মুসলমানদের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। নিজস্ব সংস্কৃতি অনুসরণ করেই এই উৎসব পালন করা উচিত। প্রথমত বর্জন করতে হবে, অপচয় ও অপব্যয়। ঈদের আগে নানাভাবে অর্থ অপচয় করা হয় তা রোধ করতে হবে। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আর তোমরা কোনভাবেই অপব্যয় কর না, নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই (সূরা বনি ইসরাঈলঃ ২৬-২৭)’।
দ্বিতীয়ত বর্জন করতে হবে, রোজাকে। ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ। হাদিসে আছে ‘রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন (সহিহ মুসলিমঃ ২৭৩০)’।
তৃতীয়ত বর্জন করতে হবে, বেহুদা সময় নষ্ট করা। যারা বেহুদা সময় নষ্ট করে না তারা বিশেষ গুণাবলির অধিকারী। কুরআন শরীফে মুমিনদের গুণাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আর যারা অনর্থক কথা-কর্ম থেকে বিমুখ থাকে (সূরা মুমিনুন-০৩)’।
আল্লাহ তায়ালা ঈদের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন আমিন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :