নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির ইউটার্ন

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০১৯, ১১:৪১ পিএম
নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির ইউটার্ন

ঢাকা : নির্বাচন ইস্যুতে ইউটার্ন নিয়েছে বিএনপি। কথায় কথায় নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে দলটি। এখন থেকে স্থানীয় বা জাতীয় সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তারা। এ সিদ্ধান্ত দলটির হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের জন্য ‘উজ্জীবনী টনিক’ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা।

এদিকে জাতীয় সংসদের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতেও ভোল পাল্টেছে। এখন তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন চায়। এ জন্য শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি জানাবে তারা। আর ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি।

৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পরে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। এর অংশ হিসেবে উপজেলা নির্বাচন বর্জনও করেছিল তারা। তবে নানা নাটকীয়তার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের শপথ না নেওয়াকে কেন্দ্র করে বগুড়া-৬ শূন্য আসনে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি।

পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের চিন্তভাবনা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন বলতে যা বোঝায় তা গত ৩০ ডিসেম্বর হয়নি। অনিয়মের সেই নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি। তাই মধ্যবর্তী নয়, যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব আরেকটি জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। নির্বাচনের মাধ্যমেই পরিবর্তনে বিশ্বাস করে জাতীয়তাবাদী দল। এজন্য সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তারা ইতিবাচক। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দল এখনো সিদ্ধান্ত না নিলেও এ বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা করছে।

আগামী বছরের শুরুতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিএনপি কী করবে তা নিয়ে দলে আলোচনা শুরু হয়। নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী তৃণমূলের নেতারা নড়েচড়ে বসে। আগে থেকেই এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত জানতে অনেকেই সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। শেষ মুহূর্তে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ারও পরামর্শ দেন। বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে অবস্থানের কথা নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন।

বিএনপির দায়িত্বশীল এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ রাখতে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও সঠিক ছিল না। কারণ গণহারে বহিষ্কারের পরেও অনেক তৃণমূল নেতাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনা যায়নি। যেহেতু সংগঠনকে শক্তিশালী করে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনে যেতে হবে, সেহেতু নির্বাচন বর্জন করে সংগঠনকে দুর্বল করার সিদ্ধান্ত আর বিএনপি নিতে চায় না।

আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, তিন সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি যেমন সঞ্চারিত হবে, তেমনি নেতৃত্বের ধাপে ধাপে কিছু দুর্বল দিকও বেরিয়ে আসবে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলের সাংগঠনিক শক্তিকে সত্যিকার অর্থে আরো শক্তিশালী করার সুযোগ পাওয়া যাবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা ভোটারদের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি তাদের মধ্যে একটা চাঙাভাব ফিরে আসবে। অনিয়মে বাধা দিয়ে শেষ পর্যন্ত এসব নির্বাচনে জয় পেলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। আসন্ন সিটি নির্বাচনগুলোতে অংশ গ্রহণের বিষয়েও আলোচনা হয়। জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকাতে কৌশলে যেসব ঘাটতি ছিল, পরে তা থেকে বেরিয়ে আসতে নীতিনির্ধারকরা আলোচনা করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!