সীমাহীন দাপটে অসহায় স্থানীয়রা

রাজনৈতিক দলে রোহিঙ্গারা

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০১৯, ০২:৩৬ পিএম
রাজনৈতিক দলে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার : রোহিঙ্গা নারীরা যেমন বাংলাদেশি পুরুষ বিয়ে করে জাতীয় সনদ হাতিয়ে নিয়ে এ দেশের নাগরিক দাবি করছে, তেমনি রোহিঙ্গা পুরুষরাও বাংলাদেশি নারী বিয়ে করে আত্মীয়তার বন্ধনে বহু জাতীয় সনদ হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি এনআইডি হাতিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা।

জেলায় একাধিক রাজনৈতিক দলে বহু রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে। তৃণমূল কর্মী থেকে টাকার জোরে সভাপতি পদ পর্যন্ত বাগিয়ে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। তাই দ্রুত প্রত্যেক রাজনৈতিক দল থেকে রোহিঙ্গাদের বহিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় এক ব্যক্তি গত বুধবার টেকনাফ ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, মো. ইলিয়াছ ও রহিমা খাতুনের মেয়ে আয়েশা আক্তার একজন রোহিঙ্গা নারী। টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকে। সেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছে। তার কাছে ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা হিসেবে নিয়মানুসারে ফ্যামিলি কার্ডও রয়েছে।

আবার টেকনাফের হ্নীলা আলী আকবরপাড়া ডেইলপাড়ার মৃত আবুল কাসেম ও রমিজা খাতুনের ছেলে নুর আলমকে বিয়ে করেছে। রোহিঙ্গা আয়েশা আক্তার চট্টগ্রামের সাতবাড়িয়া ২নং ওয়ার্ড থেকে বাংলাদেশি হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে।

এনআইডি নং-১৯৯৭১৫১১৮৯৫০০০৪১২, ফরম নং-৬১০১১৪৫৫, ভোটার নং-১৫২২৭৩০০০৬৪১, ভোটার ক্রমিক নং-৮২৫। আইডি কার্ড অনুসারে জন্ম তারিখ ২০ অক্টোবর ১৯৯৭ ইংরেজি। শুধু রোহিঙ্গা আয়েশা একা নয়, পরিবারের আরো ৭ রোহিঙ্গা আত্মীয়-স্বজন একই ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় সনদ নিয়েছে।

উখিয়া এবং টেকনাফসহ বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে অসংখ্য রোহিঙ্গা অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। তাদের দাবি এসব আগে আসা রোহিঙ্গার দাপটে এখন স্থানীয়রা অসহায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তারা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে খুব বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা বলেন, অনেক রোহিঙ্গা বৈবাহিক সূত্রে এবং টাকার বিনিময়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের আত্মীয় হয়ে গেছেন তাদের আবার বিভিন্ন দলের পদেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন সেসব রোহিঙ্গার কারণে স্থানীয় মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছে, তাদের খারাপ কর্মকাণ্ডের কারণে দলের ক্ষতি হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, শুধু আওয়ামী লীগে নয়, অনেক রাজনৈতিক দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হতে পারে।

জনগণের এই আশঙ্কা মোটেই মিথ্যা নয়, তাই আমি মনে করি প্রত্যেকটি দলের মধ্যে তৃণমূলে কোনো রোহিঙ্গা থাকলে সেটার তালিকা করে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের যারা দলে এনেছে তাদেরও বিচার করতে হবে।

এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, আগে সেসব কমিটি হয়েছে সেখানে রোহিঙ্গা থাকলেও থাকতে পারে; তবে বর্তমানে যেসব কমিটি হচ্ছে সেখানে কোন রোহিঙ্গা তো দূরের কথা কোন ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসীদের স্থান হচ্ছে না। আর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনে আমাদের তেমন ভূমিকা থাকে না তাই সে বিষয়ে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারব না।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা। তার বাবাও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, ওই পরিবারের দুই রোহিঙ্গা নারী পরিচয় গোপন রেখে সরকারি চাকরি করে (শিক্ষিকা) প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করছে। রোহিঙ্গা রমনীরা স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জাতীয় সনদ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অনুরূপভাবে বাংলাদেশি যুবক বিয়ে করে রোহিঙ্গা আয়েশার হাতে এখন বাংলাদেশি এনআইডি কার্ড শোভা পাচ্ছে। প্রশাসনের কড়াকড়ি সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা কৌশলে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ভোটার হচ্ছে।

এ ছাড়া দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পুরনো রোহিঙ্গা শামসুল আলম প্রকাশ চনা শামশু। ফিশারি ঘাটের সামনে তার চনা মুড়ির দোকান থাকলেও রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়ে ওই রোহিঙ্গা বর্তমানে বিপুল সম্পদের মালিক। ভুয়া ঠিকানায় বানিয়েছেন এনআইডি। তিনি এখন কক্সবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক লীগের সভাপতি। এই বার্মাইয়া শামশু প্রথমে মহেশখালীর বাসিন্দা বলে পরিচয় দিতেন।

ক্যাম্পে আশ্রিত প্রভাবশালী রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিভিন্ন উপজেলা থেকে বহু রোহিঙ্গাকে জাতীয় সনদ পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। অনেক রোহিঙ্গাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বক্তব্য নিতে ফোনে কল করলে প্রথমে রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন শামশু আলম।

জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, শামসুল আলমের সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেছি সে রোহিঙ্গা নয়, যতক্ষণ নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তার নাম রয়েছে তাকে রোহিঙ্গা বলা যাবে না। তবে অনেক রোহিঙ্গা জাতীয় সনদ পেয়েছে টাকার বিনিময়ে, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হচ্ছে কেন সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি এই নেতা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!