লকডাউনে মানবেতর জীবন কাটছে নৌ-শ্রমিকদের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২১, ১০:০৩ পিএম
লকডাউনে মানবেতর জীবন কাটছে নৌ-শ্রমিকদের

ঢাকা : নৌ-যান শ্রমিক, যাত্রী ও ঘাট শ্রমিকদের হাঁকডাকে সবসময়ই মুখরিত থাকে রাজধানীর সদরঘাট এলাকা। কিন্তু লকডাউনের কারণে কর্মচঞ্চল  দেশের বৃহত্তম এই নৌ-ঘাট এখন নিষ্প্রাণ। গত ৫ এপ্রিল লকডাউনের পর থেকে বেকার পড়েছেন কয়েক লাখ নৌ-যান শ্রমিক ও ঘাট শ্রমিকসহ অনেকে। এসব শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল তাদের পরিবারের সদস্যরা। কদিন পড়েই ঈদ। অথচ আয় বন্ধ হয়ে গেছে যাওয়া নৌ-শ্রমিকরা পড়েছেন বেকায়দায়।

এদিকে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে মালিকরাও আছেন দুশ্চিন্তায়। সব মিলিয়ে নৌ-যান সেক্টরের কেউই ভালো নেই এখন। বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘নৌ-শ্রমিকদের দেখার কেউ নেই। তাদের এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে।’

তিনি জানান, বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় পাঁচ লাখ নৌ-যান শ্রমিক রয়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর এই সময়টাতে শ্রমিকরা কর্মমুখর থাকেন কিন্তু লকডাউনের কারণে আমাদের শ্রমিকরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এমনকি শ্রমিকদের সামান্য কিছু সহায়তা দেওয়ারও কেউ নেই। তিনি বলেন, ‘মালিকদেরও আমরা চাপ দিতে পারছিনা। লঞ্চ বন্ধ থাকায় তারাও আছেন বিপাকে। আমরা মালিকদের বলেছি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঈদের আগে দিয়ে দেওয়ার জন্য। তারা আশ্বাস দিয়েছেন। এখন দেখা যাক কি  হয়।’

এদিকে, সদরঘাটে লঞ্চের চলাচলের সঙ্গে যুক্ত কয়েকশো ঘাট শ্রমিকের (কুলি) জীবন জীবিকাও। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এসব শ্রমিকরাও। লঞ্চ শ্রমিকদের অনেকেই বেতন-ভাতা পেলেও এসব শ্রমিকরা কাজ করেন দিনমজুর হিসেবে। অর্থ্যাৎ, কাজ না থাকলে উপার্জনও বন্ধ হয়ে যায় তাদের।

এ প্রসঙ্গে, ঢাকা ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘লঞ্চ চালু থাকলে আমাদের উপার্জন থাকে। আর লঞ্চ বন্ধ থাকলে উপার্জনও বন্ধ। এ পর্যন্ত কারো কাছ থেকে আমাদের শ্রমিকরা কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পায়নি। এ কারণে তারা অনেক কষ্টে আছে।’

এদিকে, ঈদের আগ মুহূর্তে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন মালিকরাও। তারাও দুশ্চিন্তায় আছেন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে। প্রায় পাঁচ শতাধিক লঞ্চের মালিকরা দীর্ঘদিন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

নিজাম শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মালিক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘লঞ্চ মালিকরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাইনা। আমরা ব্যাংক থেকে বড় ধরনের কোনো সহায়তা পাইনা। সরকার পোশাক মালিকসহ বড় বড় শিল্প মালিকদের প্রণোদনা দিয়েছে। কিন্তু আমাদের জন্য সে ধরনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া নিয়ে আমরা আছি বেকায়দা।’

 তিনি সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা দাবি করে বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে আমাদের জাহাজ বন্ধ। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন বন্ধ রাখতে পারবো না আমরা। কারণ, শ্রমিক সংগঠনগুলো অনেক শক্তিশালী। সেই সাথে ঈদে বোনাস দেওয়ার প্রসঙ্গও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি আমাদের কিছু নগদ সহায়তা দেয় তাহলে শ্রমিকদের আমরা বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবো।’

এদিকে, গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকার কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের শ্রমিকরাও। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্যমতে, নৌরুটে ৮৬টি ছোট-বড় লঞ্চ রয়েছে। আর এসব লঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কমপক্ষে হাজার খানেক শ্রমিকের জীবিকা। অথচ অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের আগে এই সময়টাতে বাড়তি উপার্জন করেন তারা।

কিন্তু গত ২০ দিন ধরে বেকার এসব শ্রমিক সঙ্কটের মধ্যে দিন পার করছেন। বিআইডব্লিউটিএ-র বাংলাবাজার লঞ্চঘাট কর্তৃপক্ষের আশা হয়তো সরকার শিগগিরই অন্য পরিবহনের সাথে নৌ-পরিবহন চলাচলেও অনুমতি দেবেন। সরকারি নির্দেশনা এলেই চলাচল শুরু হবে।

বিআইডব্লিউটিএ-র বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, লঞ্চ বন্ধ থাকায় কর্মচারী-শ্রমিকদের রোজগারও বন্ধ। অনেকে দিনমুজুরিও করছেন বলে শুনেছি। লঞ্চের বেশির ভাগ কর্মচারী-শ্রমিকেরা পদ্মার চরাঞ্চল এলাকার। লঞ্চ বন্ধ থাকায় অনেকে বিপাকে পড়েছেন। কেউ কেউ ভিন্ন কাজ করে উপার্জনের চেষ্টা করছেন। লঞ্চ চালু হলে তাদের স্থায়ী উপার্জনের পথও সচল হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!