ট্রানজিটে ঠকছে বাংলাদেশ!

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১১, ২০১৬, ০৪:০৫ পিএম
ট্রানজিটে ঠকছে বাংলাদেশ!

নৌপথে এক হাজার টন ঢেউটিনের চালান অনুমোদনের মাধ্যমে ভারতকে ট্রানজিটের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় ভারতকে এ সুবিধা দেয়া হলো। এখন থেকে প্রতি টন পণ্য পরিবহনে ১৯২ টাকা মাশুল ধার্য হয়েছে।

ট্যারিফ কমিশনের নেতৃত্বে গঠিত ট্রানজিট-সংক্রান্ত কোর কমিটির টনপ্রতি ১ হাজার ৫৮ টাকা মাশুল আদায়ের সুপারিশ করেছিল। সুপারিশ মেনে নিলে বাংলাদেশ এক হাজার টন পণ্য ট্রানজিটে কেবল মাশুল হিসেবেই পেত ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। আর এখন পাবে মাত্র ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। টন প্রতি মাশুলে কোর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ৮৬৬ টাকা ছাড় দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতকে একপক্ষীয় করিডর-সুবিধা দেয়া হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে এ ট্রানজিট কলকাতার ক্ষিদিরপুর নৌবন্দর থেকে আশুগঞ্জ নৌবন্দর ও আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে আগরতলা পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রথম চালান হিসেবে ১ হাজার টন ঢেউটিন নেয়ার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গত মাসের মাঝামাঝি এ অনুমতি দেয়া হয়েছে।
 
সূত্র জানায়, কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌপথে, এরপর আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আখাউড়া স্থলবন্দর হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পণ্য নেয়া হবে। এ জন্য ভারত প্রতি টনে ১৯২ টাকা করে মাশুল দেবে বাংলাদেশকে। ১৯২ টাকা মাশুলের মধ্যে ১৩০ টাকা পাবে শুল্ক কর্তৃপক্ষ,  ৫২ টাকা সড়ক বিভাগ আর ১০ টাকা পাবে বিআইডব্লিউটিএ। এর বাইরে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান যদি পণ্যের নিরাপত্তা চায়, তবে প্রতি টনে আরও ৫০ টাকা এসকর্ট মাশুল গুনতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর নভেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের নৌ-সচিব পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশের আশুগঞ্জ হয়ে ভারতের আগরতলায় পণ্য নেয়ার জন্য বিদ্যমান প্রটোকল সংশোধনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। একই সভাতেই মাশুলের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট পয়েন্ট ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর দুই দেশের সরকারের অনাপত্তিপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে এখন নিয়মিত হচ্ছে ট্রানজিট।

নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় বলেন, উভয় পক্ষের দর-কষাকষির ভিত্তিতেই মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ-এর অভিমত ভিন্ন। তিনি বলেন, কোর কমিটি অনেক চিন্তাভাবনা এবং যৌক্তিকতা বিবেচনা করে মাশুলের পরিমাণ সুপারিশ করেছিল। কিন্তু নৌপথে যে মাশুল নেয়া হচ্ছে, তা অনেক কম।

আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সড়কপথে মূলত পুলিশি পাহারার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া পণ্য ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে নৌ প্রটোকলের আওতায় অন্য যেসব চার্জ আছে, যেমন বার্থিং, লেবার হ্যান্ডলিং, ল্যান্ডিং, পাইলটেজ এবং কনজারভেন্সি চার্জ দিতে হবে। এসব চার্জ আদায় করা হলে টনপ্রতি বাড়তি একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা পাওয়া যাবে। ট্রানজিট চালু হওয়ায় ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। তবে ট্রানজিটের কারণে বাংলাদেশের সড়ক ও রেলপথের ওপর যে চাপ বাড়বে, সে তুলনায় দেশের অর্জন কতটুকু হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Link copied!