ধরাছোঁয়ার বাইরেই মিথ্যা ঘোষণায় বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিকারকরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৬, ১২:১৫ পিএম
ধরাছোঁয়ার বাইরেই মিথ্যা ঘোষণায় বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিকারকরা

দেশে মিথ্যা ঘোষণায় বিলাসবহুল গাড়ির আমদানি বাড়ছে। মূলত ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করেই ওসব গাড়ি আনা হয়। তবে সম্প্রতি বিলাসবহুল গাড়ির বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানে দিশেহারা তার মালিকরা। সম্প্রতি একের পর এক গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকে বিলাসবহুল গাড়ি রাস্তায় ফেলে যাচ্ছে।

তবে ওসব গাড়ি কারা আমদানি করছে, কিভাবে দেশে আসছে তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি বিলাসবহুল গাড়ি আটক করা হলেও প্রকৃত অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে অসাধু আমদানিকারক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই একটি সিন্ডিকেট বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির নেপথ্যে কাজ করছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত এক বছরে অভিযান চালিয়ে ৩৪টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সিডান কার, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ওডিআর, পোরশের মতো নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়িও। জব্দ করা গাড়িগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ওসব গাড়ি জব্দ করা হয়।

আর মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে দেশে আমদানি করা হয়েছে এই রকম আরো ৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি। এ প্রেক্ষিতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর ওসব বিলাসবহুল গাড়িগুলোর সন্ধানে শিগগিরই বিশেষ অভিযান চালাবে। বর্তমানে জব্দ করা গাড়িগুলো বর্তমানে এনবিআরের অধীনে বিভিন্ন কাস্টম হাউসের জিম্মায় রয়েছে।

সূত্র জানায়, কাস্টমস বিভাগ ইতিমধ্যে যেসব গাড়ি জব্দ করেছে সেগুলো অনেক বছর আগে আনা। কারনেট সুবিধার আওতায় পর্যটনের নামে ওসব গাড়ি দেশে ঢুকেছিল। পরে ওসব গাড়ি হাতবদল হয়। কারনেট সুবিধার আওতায় এদেশে ভ্রমণের কথা বলে অনেক গাড়ি আনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ভ্রমণ শেষে ওসব গাড়ি ফেরত নেয়ার কথা থাকলেও তা করা হয় না।

ওই সুবিধার অপব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর কারনেট সুবিধা বাতিল করেছে। ফলে এখন আর কারনেটের আওতায় পর্যটনের নামে কোনো গাড়ি আনার সুযোগ নেই। তবে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি পর্যটকদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার বিধান রয়েছে। 

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কারনেট ডি প্যাসেজ নামে পরিচিত বিশেষ ওই সুবিধার আওতায় কোনো শুল্ক ছাড়াই একজন পর্যটক তার নিজস্ব গাড়ি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যেতে পারেন। অবশ্য শর্ত থাকে ওই পর্যটক সংশ্লিষ্ট দেশে ভ্রমণ শেষে গাড়িটি ফেরত নিয়ে যাবেন। কোনো অবস্থাতেই তা বিক্রি বা হাতবদল করা যাবে না। 

কিন্তু কথিত পর্যটকরা শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি এদেশে আনার পর তা বিক্রি করে দেন। মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ডত্রুক্রজার, লেক্সাসসহ অত্যন্ত দামি ব্র্যান্ডের বেশিরভাগ গাড়ি এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সেগুলো খালাস হয়েছে। কারনেটের আওতায় শতাধিক গাড়ি ওই সময়ে আনা হয়েছিল। 

এখনো কারনেটের আওতায় আনা শতাধিক গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে কিছু গাড়ি খালাস করে নিয়ে গেছেন মালিকরা। বাকিগুলো অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোনো দাবিদার পাওয়া যাচ্ছে না। তিন-চার বছর আগে ওসব গাড়ি এসেছিল।

সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের মে মাসে রাজধানীর বনানী থেকে বিলাসবহুল সাদা রঙের ওডি আর-৮ একটি গাড়ি জব্দ করা হয়। দেশে এই প্রথমবারের মতো জার্মানি থেকে আনা গাড়িটি ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে আনা হয়। গাড়িটি খালাস হয়েছিল ২০১৪ সালে মংলা বন্দরের মাধ্যমে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা গাড়িটির ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৫ হাজার ২০০ সিসি। 

অথচ আড়াই হাজার সিসি উল্লেখ করে আমদানি করা হয়। ওই গাড়িটির বর্তমান বাজার মূল্য ১৪ থেকে ১৫ কোটি টাকা। তবে গাড়ির প্রকৃত মালিক খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাছাড়া দুবাই এভিয়েশন করপোরেশন নামে রেভার জিপ, রোলস রয়েস, সিডান কার ও মার্সিডিজ গাড়ি এদেশে আনা হয়েছে। 

ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মিথ্যা ঘোষণা দেওয়ায় ওই চারটি গাড়ি আমদানিতে সরকারের প্রায় ৩৪ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়। এ ছাড়া আরো তিনটি গাড়ি আটক করা হয়। তাতে ১৫ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়।

এদিকে কারনেট সুবিধায় দেশে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ জানান, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে জাল-জালিয়াতি করে গাড়ি আনার সুযোগ কম। কারণ খালাসের আগে প্রতিটি গাড়ি পরীক্ষা করা হয়। তবে কনটেইনারের মাধ্যমে অন্য পণ্যের নাম দিয়ে গাড়ি আনা হতে পারে। এমন ঘটনা আগে ঘটে থাকতে পারে। এখন আর ওই সুযোগ নেই। কারণ মালপত্র পরীক্ষার জন্য কাস্টম হাউসে শক্তিশালী স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে। তাতে কনটেইনারের ভেতরে সব কিছু পরিষ্কার দেখা যায়।

অন্যদিকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল হক জানান, আগেও অবৈধ উপায়ে অনেক গাড়ি এসেছে। ইদানীং ওই প্রবণতা বেড়েছে। নজরদারি বাড়ানোর কারণে ধরা পড়ছে। তবে অপরাধীদের ধরা যাচ্ছে না বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়।

কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে অকাঠ্য প্রমাণ থাকতে হবে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি দেয়া হবে। আটক করা গাড়িগুলোর প্রকৃত মালিকদের খোঁজা হচ্ছে। তাদের শনাক্ত করার পর মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Link copied!