আতঙ্ক উপেক্ষা করে ভোট বিপ্লব

  • এম রহমান | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০১৭, ০৬:২৩ পিএম
আতঙ্ক উপেক্ষা করে ভোট বিপ্লব

ঢাকা: জঙ্গি আতঙ্ক উপেক্ষা করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট বিপ্লব হয়েছে। নগরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। জঙ্গি আতঙ্ককে প্রশ্রয় না দিয়ে দেশের স্বার্থে কুমিল্লাবাসী তাদের নগর পিতা নির্বাচন করেছেন।

গত বুধবার কুমিল্লার একটি বাড়িতে জঙ্গির সন্ধান পায় পুলিশ। পরের দিন বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশন নির্বাচন থাকায় পুলিশ নগরের দক্ষিণ বাগমারা-সংলগ্ন গন্ধমতি এলাকায় ওই বাড়ির কয়েক শ গজ পর্যন্ত কর্ডন করে রাখে।

জঙ্গি আতঙ্ক পাত্তা না দিয়ে সরকার,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় কুমিল্লাবাসী সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে।পুলিশের কর্ডন করে রাখা এলাকার নারী পুরুষরাও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

যে এলাকা জঙ্গি সন্দেহে পুলিশ কর্ডন করে রেখেছে। তার আশ-পাশের রাস্তা দিয়ে হেটে গিয়ে ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিয়ে এসেছেন।

এমনকি গন্ধমতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সারিবদ্ধ ভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে নারী পুরুষদের ভোট দিতে দেখা গেছে। ভোট দিতে আসার ক্ষেত্রে বা ভোট দিতে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের পূর্বে কুমিল্লায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেলেও নির্বাচনে এর কোন প্রভাব পড়েনি। এলাকাবাসী সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

এছাড়াও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১০৩টি ভোট কেন্দ্রেই উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট গ্রহন হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে জাল ভোটসহ নানা অনিয়মের কারণে ২টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে,এই নির্বাচনে দুই লাখ সাত হাজার ৫৬৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন এক লাখ ৩২ হাজার ৬৯০ জন।বাতিল হয়েছে চার হাজার ৮৩০ ভোট, বৈধ ভোটের সংখ্যা এক লাখ ২৭ হাজার ৮৬০টি।

ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী সাক্কু ৬৮ হাজার ৯৪৮টি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৬৩টি।ফলাফল সাক্কু বিজয়ী।

এদিকে ভোট গ্রহনের শুরুতে ভোটে কারচুপি,কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া,জাল ভোটসহ নানা অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। এমনকি তারা নির্বাচন কমিশনের প্রতি প্রশ্ন তুলে বলেছেন,নির্বাচন কমিশন সংবিধানের দেয়া দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।

তবে নির্বাচন শেষে ফলাফলে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। বিএনপি প্রার্থী সাক্কু যখন বেশ ভালো ব্যবধানে জয়লাভ করেছে তখন বিএনপি নেতারা বলছে, কারচুপি না করলে ভোটের ব্যবধান আরো বাড়তো।এদিকে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া টেলিফোনে সাক্কু ও কুমিল্লাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ভোটগ্রহণ হয়েছে মোট ৬৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।এ দিক থেকে পিছনের জাতীয় ও সিটিসহ অন্যান্য নির্বাচনের তুলনায়   জঙ্গি আতঙ্ক উপেক্ষা করে কুমিল্লাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে।

উল্লেখ্য,গত বুধবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঠিক আগের দিন নগরের দক্ষিণ বাগমারা-সংলগ্ন গন্ধমতি বড় কবরস্থানের পশ্চিম পাশে জঙ্গি সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে ওইদিন জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন না চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। এ কারণে বুধ ও বৃহস্পতিবার ওই বাড়ি কর্ডন করে রাখে পুলিশ। শুক্রবার (৩১ মার্চ)সকাল থেকে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কোন জঙ্গির সন্ধান পাওয়া যায় নি।তবে ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সোনালীনিউজডটকম/ঢাকা/এমআর

Link copied!