নদীর নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজার পাচ্ছে না বিআইডব্লিউটি

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬, ০৯:২৩ পিএম
নদীর নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজার পাচ্ছে না বিআইডব্লিউটি

বিশেষ প্রতিনিধি

দেশের নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দীর্ঘ ৩ বছরেও ড্রেজার সংগ্রহ করতে পারছে না। অথচ নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষায় ১৮ হাজার কিলোমিটার প্রধান নৌপথ দ্রুত খনন করা খুবই জরুরি। এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালের বিআইডব্লিউটিএ ৯টি ড্রেজার কেনার উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত একটি ড্রেজারও সংগ্রহ করতে পারেনি। বরং রাষ্ট্রায়ত্ত ওই সংস্থাটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সরবরাহকারী ঠিকাদারকে ৬টি ড্রেজার কেনার কার্যাদেশও দিয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘসময়ের মধ্যে ঠিকাদার কোনো ড্রের্জা সরবরাহ করতে পারেননি। এ অবস্থায় সম্প্রতি বাধ্য হয়েই বিআইডব্লিউটিএ ওই কার্যাদেশ বাতিল করে দিয়েছে। কারণ চলতি শুষ্ক মৌসুমে নতুন করে ওসব ড্রেজার কেনা আর সম্ভব হবে না। ফলে খনন করা সম্ভব হবে না নৌপথও। নদীপথ ও বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে শুষ্ক মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলে নদ-নদীর নাব্য সঙ্কটও তীব্র আকার ধারণ করছে। মাঝে-মধ্যেই ফেরি ও যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়ছে হাজারো নৌপথযাত্রী। বর্তমানে দেশের প্রধান নৌপথ ২৪ হাজার কিলোমিটার। তার মধ্যে ১৮ হাজার কিলোমিটার নৌপথ এখনই খনন করা প্রয়োজন। ওই নৌপথের বাইরে আরো নৌপথ রয়েছে। সেযখানেও নাব্য সংকট তৈরি হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ নাব্য নির্ধারণের জন্য বর্তমানে ৫৩টি নৌপথে সমীক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ওই সমীক্ষার কাজ শেষ হলে নাব্য সংকটে থাকা নৌপথের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। বর্তমানে ঢাকা থেকে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, হাতিয়া, মনপুরাসহ প্রতিটি রুটেই নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে যাত্রীবাহী লঞ্চ আটকে যাচ্ছে। এমনকি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-কাওড়াকান্দিতেও ফেরি আটকে যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। তাতে যাত্রীদের সময় নষ্ট হচ্ছে এবং অসহনীয় ভোগান্তি হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দেশের নদ-নদীর নাব্য উন্নয়নে ড্রেজিং সংগ্রহের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ ২০১৪ সালের আগস্টে জেভি অব এলিকট ড্রেজেজ, এলএলসি অ্যান্ড আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শিপওয়েজ লিমিটেড'কে ড্রেজার সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড দীর্ঘসময় পার হলেও কোনো ড্রেজার সরবরাহ করতে পারেনি। এ অবস্থায় গত ৩১ ডিসেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে কার্যাদেশ বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হয়।

সূত্র আরো জানায়, জেভি অব এলিকট ড্রেজেজ, এলএলসি অ্যান্ড আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শিপওয়েজ লিমিটেডকে এখন পর্যন্ত ৬টি ড্রেজার সরবরাহের কার্যাদেশ দেয় বিআইডব্লিউটিএ। তারমধ্যে দুটি ড্রেজারের নির্মাণ সম্পন্ন হলেও সেগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষার কাজ এখনো শেষ হয়নি। ফলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৩ বছর পরও দুটি ড্রেজার সরবরাহ করতে সক্ষম হয়নি। তাছাড়া অন্য ড্রেজারগুলোর কার্যাদেশ দেয়ার দেড় বছরেও নির্মাণকাজই শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় ওই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর মোজাম্মেল হক বলেন, বিআইডব্লিউটিএর হাতে দেশের নাব্য সংকটগ্রস্ত ১৮ হাজার কিলোমিটার প্রধান নৌপথ খনন করার মতো প্রয়োজনীয় ড্রেজার নেই। এখন মাত্র ১৮টি ড্রেজার দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ড্রেজার ভাড়া নেয়া হয়। কিন্তু এদেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন ড্রেজারের সংখ্যাও মাত্র ২৬টি। ওসব ড্রেজার দিয়ে প্রয়োজনের মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ করা সম্ভব। ড্রেজারের চাহিদা পূরণ করতে সরকার নিজেই ২০টি ড্রেজার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। আনন্দ শিপইয়ার্ডকে কয়েকটি ড্রেজার কেনার কার্যাদেশও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এখনো তা সরবরাহ করতে পারেনি। ফলে ড্রেজারের সংকট রয়েই গেছে। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুম না আসা পর্যন্ত নৌপথে নাব্য সংকট চলতেই থাকবে।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Link copied!