বিরোধী দল নিয়ে সংসদে শরিকরা বিব্রত

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯, ০১:১৯ পিএম
বিরোধী দল নিয়ে সংসদে শরিকরা বিব্রত

ঢাকা : জাতীয় সংসদে অবস্থান কী, তা নিয়ে ‘বিব্রতকর’ অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪-দলীয় জোটের শরিকরা। ‘আনুষ্ঠানিক’, না ‘অনানুষ্ঠানিক’ বিরোধী দল হবে, এ বিষয়ে স্পষ্ট নন জোটের নেতারা। অবস্থান নির্ধারণ না হওয়া ও বিরোধী দলের আসনে কেউ কেউ বসতে ‘বিব্রতবোধ’ করায় প্রথম অধিবেশন চলমান থাকলেও এখনো পর্যন্ত তারা ‘প্রকৃত বিরোধী দল’ হিসেবে সংসদে উপস্থিত হতে পারেননি। এ অবস্থায় কাটছে না একাদশ সংসদে শরিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে টানাপড়েনও।

১৪ দলের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র বলছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রস্তাব অনুযায়ী সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসা নিয়েও শরিক দলগুলোতে ‘অস্বস্তি’ আছে। একই প্রতীকে ভোট করার পর এখন তাদের বিরোধী দলে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। সরকারের চাওয়া মতো বিরোধী দলে গেলে ‘আদর্শিক এ জোটের ঐক্য অটুট থাকবে না’ বলেও তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন। আবার ঐক্য থাকলেও সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে শরিক দলের নেতারা বিরোধী দলের ভূমিকা কতটুকু পালন করতে পারবেন, এ বিষয়েও সন্দিহান কেউ কেউ।

ফলে জাতীয় পার্টির মতো ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ ভূমিকায় থাকতে হয় কি না, তা পরিষ্কার হতে পারছেন না। এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই না পেলেও ১৪ দলের যারা মন্ত্রিত্বপ্রত্যাশী, এখন বিরোধী দলে থাকলে পরে মন্ত্রী হওয়া যাবে কি না, এ নিয়েও সন্দিহান কেউ কেউ। কয়েকজনের যুক্তি, গত সংসদে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলে থাকলেও দলটির কয়েক নেতা মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন। তাই এখন বিরোধী দলে থাকলেও পরে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের সময় ১৪ দলের কেউ যুক্ত হতে বাধা হবে না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতৃত্বের মতে, সংসদ নির্বাচনে বিশাল বিজয় লাভের পর এখন কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় নজর আওয়ামী লীগের। একাদশ সংসদে জোটের শরিক দলের নেতারা বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলে কার্যকর হবে সংসদ। শুধু বিরোধিতার জন্য নয়, প্রাণবন্ত সংসদ গড়তে ও মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকবে ১৪ দল। এতে দলগুলোর জন্যও ভালো হবে তাতে ‘বিব্রতবোধ’ করার কিছু নেই। শরিক দলগুলোকে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকতে আওয়ামী লীগ অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেওয়ার পর কয়েকটি দল ‘নাখোশ’ হয়।

উন্নত গণতান্ত্রিক বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংসদে বিরোধী দলগুলো সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে যে ভূমিকা পালন করে থাকে, তেমন বিরোধী দলের ভূমিকায় শরিক দলগুলোকে দেখতে চায় আওয়ামী লীগ। দলগুলো ‘নাখোশ’ হওয়ায় গত ৩০ জানুয়ারি থেকে একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হলেও ১৪ দলের শরিক সব দল বিরোধী দলে থাকার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। টানা তিন দিন বিরতির পর রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে আবারো বসে সংসদের প্রথম অধিবেশন।

১৪ দলের নেতারা আওয়ামী লীগকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো পর্যন্ত সংসদে ভূমিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না জানালেও সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে কেউ কেউ মতামত দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্যে জোট ও মহাজোটের মধ্যে কোনো ‘দূরত্ব’ সৃষ্টি হয়েছে কি না, সেসবের বিচার-বিশ্লেষণও করছেন তাদের দলের অনেক নেতাকর্মী। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে আছেন।

১৪-দলীয় সূত্রের দাবি, এবারের মন্ত্রিসভায় শরিক দল থেকে অন্যবারের মতো কাউকে না রাখা ও মন্ত্রিসভা শতভাগ আওয়ামী লীগের হওয়ার পর থেকে ১৪ দলের সঙ্গে ‘মনস্তাস্তিক দূরত্ব’ বাড়ছে সরকারি দলের। সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর বিজয় সমাবেশে শরিক দলগুলোকে সেভাবে আমন্ত্রণ না জানানোয় আওয়ামী লীগ ‘একলা চলো নীতিতে’ চলছে বলে ভাবছে শরিকরা।

আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, ১৪-দলীয় জোট গঠিত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের বড় কোনো কর্মসূচি থাকলে এর আগে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। গত সংসদ নির্বাচনের ১৯ দিন পর ১৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের উদযাপিত বিজয় সমাবেশে ১৪ দলকে অংশ নিতে সেভাবে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। সমাবেশের আগের দিন ১৪ দলের কয়েক নেতাকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ফোন করা হলেও তা ছিল ‘শ্রোতা’ হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ। দলগুলো সংসদে বিরোধী দলে থাকবে বলেই আওয়ামী লীগ এ কৌশল নিয়ে হাঁটছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের গত সরকারে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সরকারের অংশ ছিলেন। আরেক শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুও মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। এর আগে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াও মন্ত্রী ছিলেন। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে ছিল। এবার জোটের শরিকদের কাউকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় সংসদে ১৪ দলের শরিকদের অবস্থান কী হবে, তারা কি বিরোধী দল নাকি সরকারি দল, তা স্পষ্ট হয়নি।

তথ্য মতে, সংসদে নিজের দলের অবস্থান কী, তা নিয়ে ‘বিব্রতকর’ অবস্থায় আছেন ১৪-দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গত বুধবার একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে মেনন নিজেই এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘একাদশ সংসদ নিয়ে আমরা আনন্দিত। এ আনন্দের সঙ্গে আমরা একটু বিব্রতও বটে। সংসদে ঢোকার মুখেও আমাকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছে, আপনাদের সংসদে অবস্থান কী হবে?’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক বিরোধী দল না হলেও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবেন ১৪ দলের নেতারা। সংসদে সরকারি ও বিরোধী দল- উভয়ই হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির। এ লক্ষ্যেই বিরোধী ভূমিকায় থাকবেন জোট ১৪ দলের নেতারা। শুধু সংসদেই নয়, সংসদের বাইরেও সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবে জোট। ধরিয়ে দেবে সরকারের ভুলত্রুটি।’

১৪ দলের অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মনে করেন, ‘সংসদের ভেতরে ও বাইরে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে চায় ১৪। বিরোধী দল অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলেই তারা এ ভূমিকা রাখতে চায়। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল মানেই যে বিএনপি-জামায়াত হতে হবে, বিষয়টা এমন নয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!