ঘরের আগুনে পুড়ছে জাতীয় পার্টি

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯, ০৪:৫৮ পিএম
ঘরের আগুনে পুড়ছে জাতীয় পার্টি

ঢাকা : ঘরের আগুনে পুড়ছে জাতীয় পার্টি (জাপা-এরশাদ)। বর্তমানে সংসদেও আছেন তারা, রাষ্ট্রীয় সুবিধাও মিলছে, কিন্তু স্বস্তিতে নেই নেতাকর্মীরা। বরং তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভ দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি।

ক্ষোভের তীর বর্তমান মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ ডজনখানেক শীর্ষ নেতার দিকে। তারা এরশাদের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলে না থাকলেও এরশাদের চিঠিতে এমপি-মন্ত্রী হয়ে সংসদ ও গণভবনের চা-চক্র মিস করেনি।

আলাপকালে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এককালের পাহারাদার, অখ্যাতদের রাজনীতিবিদ, এমপি-মন্ত্রী বানিয়েছেন, মালিকানা দিয়েছেন জ্ঞাত-অজ্ঞাত কোটি কোটি টাকার সম্পদের, তারাই এখন দূরে দূরে হাঁটছেন।

সাবেক মন্ত্রী ও জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমাদের চলমান জীবনে প্রকৃত বন্ধুর চেয়ে কৃত্রিম বন্ধুই এখন বেশি। নিজের স্বার্থের জন্য বন্ধু সেজে অনেকেই তোষামোদ করে এবং চাটুকারের ভূমিকায় অভিনয় করে। স্বার্থ হাসিল হলে আর পাশে থাকে না। এমন বাস্তবতা চলছে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদের জীবনে। তার এখন দুঃসময় চলছে। তাদের দলের অন্তত ডজনখানেক নেতা নিজেকে আড়াল করে চলছেন। অনেকেই এরশাদের শূন্যতাও কামনা করছেন বলে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন সাবেক ওই এমপি।

যুব জাপা নেতা সাদেক হোসেন বলেন, গত নির্বাচনে যেসব আসনে জাপা প্রার্থীরা এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন পার্টির হাইকমান্ড তাদের কোনো খবর নেয়নি। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দেওয়ার পর এ পদে দায়িত্ব পাওয়া মশিউর রহমান রাঙ্গা পার্টির প্রার্থী বা কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের দলীয় বা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে দিক-নির্দেশনাও দেননি।

এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষিতে মহাসচিব রাঙ্গার ব্যর্থতার অভিযোগও করেছেন অনেকেই। দলটির মধ্যসারির নেতাকর্মীরা মনে করেন- রাঙ্গা মহাসচিব হওয়ায় মহাজোট থেকে জাপাকে সম্মানজনক আসন দেওয়া হয়নি। যেখানে গত নির্বাচনে বা তার আগে জাপার নির্বাচিত আসনই ছিল ৩৭টি। সেখানে ২৪টি আসন দেওয়ায় মেনে নিতে পারেনি দলটির নেতাকর্মীরা। পার্টির উন্মুক্ত প্রার্থীদের অভিযোগ নির্বাচনে পার্টির কোনোরকম আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। বরং সে মুহূর্তে অনেক প্রার্থীর ফোনও রিসিভ করেননি মহাসচিব রাঙ্গা।

অন্যদিকে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা নিয়েও শঙ্কিত পার্টির নেতাকর্মীরা। দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে তার শারীরিক অবস্থা। এ অবস্থায় উত্তরাধিকার হিসেবে অনেকেই কড়ায় গণ্ডায় হিসাব-নিকাশ বুঝে নিলেও পার্টি চেয়ারম্যানের বর্তমান ও পরবর্তী জীবন নিয়ে তেমনটা ভাবছেন না তারা। প্রায় অচেতন অবস্থায় বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে এই দলে। পদ নিয়ে এবং পদ হারিয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে পরস্পরের বিরোধীতায় নেমেছে বলে মধ্যম সারির নেতাদের অভিযোগ। ফলে বিএনপির চেয়ে বেশি আসন পেয়েও স্বস্তিতে নেই নেতাকর্মীরা।

এরশাদের অবর্তমানে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের খবর রাখছেন না পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিশেষ করে জিএম কাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মশিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার পর দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা পার্টির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না। এমনকি এরশাদের রোগমুক্তি কামনা করে বিভিন্ন দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেও তাদের দেখা মেলেনি। এদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, সিনিয়র নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমএ সাত্তার, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু, কাজী ফিরোজ রশিদ, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাহিদুর রহমান টেপা, এমএ কাসেম, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীসহ দলের সিংহভাগ নেতাই দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না। তবে তাদের প্রায় সবাই গণভবনের দাওয়াত মিস করেননি।  

বিগত সময়ে দেখা গেছে, এরশাদ শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে অথবা নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে গেলে রুহুল আমিন হাওলাদার সঙ্গে যেতেন। মহাসচিব পদ হারানোর পর দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকলেও একবারের জন্যও এরশাদকে দেখতে যাননি হাওলাদার। যে কারণে পার্টির  কর্মীরা মনে করেন পদের কারণেই এরশাদের প্রতি হাওলাদারের ভালোবাসা ছিল।

অথচ কয়েকদিন প্রধানমন্ত্রীর ডাকে চা চক্রে অংশ নিতে গণভবনে হাওলাদারসহ তাদের ঠিকই দেখা গেছে। কিছুদিন আগেও পার্টির দুই প্রভাবশালী নেতা সুনীল শুভ রায় ও এসএম ফয়সল চিশতীকে সক্রিয় দেখা গেলেও দলীয় কর্মকাণ্ড এখন তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে দেশে ফিরে গত ১০ ফেব্রুয়ারি সংসদে হুইল চেয়ারে বসে এইচএম এরশাদের যোগদানের সময় জিএম কাদের ও রাঙ্গাই ছিলেন প্রথম সারিতে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!