পাকিস্তান সফরে কপাল খুলছে তিন তারকার

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ০২:০৭ পিএম
পাকিস্তান সফরে কপাল খুলছে তিন তারকার

ঢাকা: অবশেষে শত জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর। তিন ভাগে বিভক্ত এই সিরিজে আগে থেকে নির্ধারিত দুই টেস্ট ও তিন টি-টুয়েন্টির পাশাপাশি একটি ওয়ানডেও খেলবে দুদল। গত নভেম্বরে ভারত আর এখন জানুয়ারিতে পাকিস্তান- তিন মাসের মধ্যে দুই ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে পরপর দু’টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেই ফেলেছেন, ‘যেহেতু ব্যাক টু ব্যাক সিরিজ, তাই আমাদের দল নিয়ে কোনোরকম বাড়তি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই। আমরা তা করবো না। সে অবকাশও নেই।’

ফলে আরও একটি কথা উহ্য থেকে গেছে। তা হলো, ভারতে টিম বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজটি খারাপ খেলেনি। প্রথম ম্যাচ জিতেছিল। পরে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনাও তৈরি করেছিল। এমনকি পরের দুই ম্যাচে বিশেষ করে শেষ খেলায় জয়েরও সুযোগ ছিল। মোটা দাগে টাইগারদের ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পারফরমেন্স ভালই ছিল। এখন সেই দলে তাই বড় ধরনের রদ বদলের আসলে তেমন যৌক্তিকতাও নেই। 

তারপরও ভারতের বিপক্ষে প্রাথমিক দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে হয়ত সামান্য কটি পরিবর্তন, পরিবর্ধন হতে পারে। যেমন ভারতের বিপক্ষে প্রাথমিক দল ঘোষণার সময় অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসানের নাম ছিল। পরে ঠিক ঐসময় সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ায় অটোমেটিক তার নাম বাদ পড়ে। একইভাবে ভারতের বিপক্ষে প্রাথমিক দলে নাম ছিল তামিম ইকবাল আর অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনের নামও।

যদিও পারিবারিক কারণে তামিম ও ইনজুরির শিকার হয়ে ভারত যেতে পারেননি সাইফউদ্দিন। পরে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল আর পেসার আবু হায়দার রনিকে দলভুক্ত করা হয়েছিল। এবার পাকিস্তান সফরে সাকিবের বিবেচনায় আসার কোনই সুযোগ নেই। তামিমও সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরে এসেছেন। আর রিহ্যাবে থাকা সাইফউদ্দীনেরও টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কাজেই ভারত সফরের শেষ দলটির প্রায় ৯৫ শতাংশই বহাল থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। অবশ্য এর মধ্যে একটি পরিবর্তন হয়ত করতে হবে। 

নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহীমকে বাইরে রেখেই দল সাজাতে হবে নির্বাচকদের। এখন মুশফিক শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টালে ভিন্ন কথা। না হয় তাকে ছাড়াই দল সাজাতে হবে। এখন তামিম ইকবাল দলে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান যেতে না চাইলে মুশফিকের বিকল্প কাউকে নিতেই হবে। এর বাইরে আর যারা ছিলেন, তারা কম বেশি বিপিএলে ভালই পারফরম করেছেন। ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই রান করেছেন। লিটন দাস, নাইম শেখ, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (ম্যাচ কম খেললেও পারফরমেন্স সন্তোষজনক), আফিফ হোসেন ধ্রুবর ব্যাট থেকে রান এসেছে।

শুধু ভারতের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে মায়ের অসুস্থতার কারণে ফিরে আসা মোসাদ্দেক তেমন রান পাননি বিপিএলে। তার অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আছে খানিক সংশয়। যদিও প্রধান নির্বাচক নান্নু বলেছেন, যেহেতু অল্প সময়ের ব্যবধানে ব্যাক টু ব্যাক সিরিজ, তাই আমরা সেভাবে রদবদলের চিন্তা করছি না। কাজেই সেই বিচার বিবেচনায় মোসাদ্দেক থেকেও যেতে পারেন। 

তবে বিপিএলে তার পারফরমেন্স আসলে সন্তোষজনক ছিল না। এছাড়া ভারত সফরের মাঝামাঝি মায়ের অসুখের কথা বলে দেশে ফিরে আর টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের সঙ্গে যোগাযোগ না করার অভিযোগও রয়েছে মোসাদ্দেকের বিপক্ষে। সেই বিবেচনায় তার বিকল্প খোঁজা হতেই পারে। আর বিপিএলকে মানদণ্ড ধরলে মোসাদ্দেকের ক্যাটাগরির দুই তরুণ আছেন পাইপলাইনে। একজন মেহেদী হাসান মিরাজ, অন্যজন মেহেদী হাসান।

মিরাজ খুলনার ‘মেকশিফ্ট’ (পরিবর্তিত) ওপেনার হিসেবে বেশ কিছু ম্যাচে রান পেয়েছেন। মাঠে তাকে আবার চনমনে ও আত্মবিশ্বাসীও মনে হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকার মেহেদী এবার বোলিংয়ে ভাইটাল ব্রেক থ্রু’র পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দারুণ পারফরম করেছেন। তাকে বিবেচনায় আনা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। একই কথা অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েসের ক্ষেত্রেও। 

এ বাঁহাতি এবার সম্ভবত ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ফর্মে আছেন। আগের ব্যর্থতা ঝেরে মুছে এবার যেন এক আত্মপ্রত্যয়ী ইমরুল। ইনজুরির কারণে অনেক ম্যাচই খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। সেসব ম্যাচে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চট্টগ্রামকে সুপার ফোরে তুলতে আগ্রসী ভূমিকা রেখেছেন ইমরুল। ফর্মহীন ইমরুলের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা কমে গেলেও, আবার নিজেকে ফিরে পাওয়া ইমরুলের বিষয়ে নির্বাচকরা নতুন করে ভাবতেই পারেন। তার পাকিস্তান যাবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর এবারের বিপিএলে ইমরুল ওপেন না করে তিন এবং চার নম্বরে নেমেও রান পেয়েছেন। স্বচ্ছন্দে খেলে দল জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। 

মুশফিকুর রহীম শেষ পর্যন্ত না গেলে তার ব্যাটিং পজিশনে ইমরুলকে নেয়া হতেও পারে। তবে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টে সে অর্থে পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুব কম। ভারতে যারা ছিলেন, সেই বহরের মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম আর আাল আমিন হোসেনরা সুস্থ আছেন। বিপিএলে পারফরমও করেছেন। প্রায় খেলায় বল হাতে জ্বলে উঠেছেন মোস্তাফিজ, শফিউল আর আল আমিন। 

তাদের দলভুক্তির সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। এর বাইরে দুই বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি আর তাইজুল ইসলামের দলভুক্তি নিয়েও আছে সংশয়। এবারের বিপিএলে তারা কেউই সুবিধা করতে পারেননি। আসলে শুধু সানি-তাইজুল কেন, বাংলাদেশের একজন স্পিনারও এবারের বিপিএল নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তবে সাকিব যেহেতু নেই, তাই একজন বাঁহাতি স্পিনারকে তো নিতেই হবে। কাজেই সানি-তাইজুলের দুজনকে বাইরে রাখা কঠিন হবে।

ওদিকে সাইফউদ্দীন শেষ মুহূর্তে আহত হয়ে ভারত সফরে যেতে না পারায়, পরে ডাক পাওয়া বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনির ফর্মও তেমন ভাল না। তার পাকিস্তান সফরে জায়গা হবে কি না সন্দেহ। বিকল্প হিসেবে সবার আগে নাম আসবে ইবাদত হোসেনের। সিলেট থান্ডারের হয়ে এ পেসার এবার বিপিএলে দারুণ বোলিং করেছেন। লাইন-লেন্থ ছিল বেশ ভাল। ইয়র্কার ছুড়েছেন বেশ দক্ষতার সাথে। বেশ কটি ম্যাচে ভাইটাল ব্রেক থ্রু দিয়ে ইবাদাত আছেন আলোচনায়। পাশাপাশি তাসকিন আহমেদও হয়তো থাকবেন বিশেষ বিবেচনায়।

পাকিস্তান সফরের সম্ভাব্য দল: 

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাইম শেখ, সৌম্য সরকার, আফিফ হোসেন ধ্রুব, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, আল আমিন হোসেন, ইবাদত হোসেন, মেহেদী হাসান ও ইমরুল কায়েস।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!