সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতার দায়ভারও নিতে হবে বোর্ডকে

  • ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২২, ০১:৩৯ পিএম
সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতার দায়ভারও নিতে হবে বোর্ডকে

ঢাকা : মাঠে খেলেন কিন্তু  ক্রিকেটাররা, তারা ভালো করলে দল জয় লাভ করে, খারাপ করলে দল পরাজিত হয়। দলের সাফল্য এলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পুরো কৃতিত্ব পারলে একাই নেওয়ার চেষ্টা চালায়। অথচ, দলের ব্যর্থতার দায়ভার খেলোয়াড়দের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বিসিবি। এটা তো ক্রিকেট উন্নতির লক্ষণ নয়। নিতে হবে ব্যর্থতার দায়ভারও।

ব্যর্থতার দায়ভার বিসিবি নেয় না বলেই আমরা আসলে সাফল্যের ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করতে পারছি না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪-৭৫ সালে বাংলাদেশে ক্রিকেট চর্চা শুরু হয়।

১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলাদেশ প্রথম কোনো বিদেশি দলের বিপক্ষে ক্রিকেট ম্যাচে অংশ নেয়। তখন বাংলাদেশ প্রথমে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী  এমসিসি ক্লাবের সঙ্গে এবং পরে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের বিপক্ষে সীমিত ওভারের ম্যাচ এবং দুই দিন ও তিন দিনের ম্যাচে মুখোমুখি হয়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফির শিরোপা জিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশ করে। এই ৪৬-৪৭ বছরের ক্রিকেট চর্চায় একটি মূল বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে।

তা হলো, আমরা কখনোই সাফল্যের ধারাবাহিকতা তৈরির চেষ্টা করিনি। এ কথা সত্য যে, ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতা অনেক বেশি। সেটা টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি প্রতিটি বিভাগেই রয়েছে কম আর বেশি। তবে তুলনামূলকভাবে ওয়ানডেতে সাফল্য কিছু বেশি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য এসেছিল ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় করে। তখন আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর ‘টপ টু বটম’ কর্মকর্তারা ধরেই নেন, সেটা তাদেরই কৃতিত্ব।

সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশাল সমাবেশে বীর খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দেন। যা বেশ প্রশংসা কুড়ায়। কিন্তু বোর্ড কর্মকর্তারা ক্ষমতা খাটাতে শুরু করেন তখন থেকে।

২০০০ সালে বাংলাদেশ তাদের অভিষেক টেস্ট খেলে ভারতের সঙ্গে। তখনকার লংগার ভার্সনের সবচাইতে সেরা ব্যাটার মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে টেস্ট দলে নেওয়া হয়নি। যেই নান্নু এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভারতের সঙ্গে টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করে ৪০০ রান।

মানে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ইনিংসে ওই রান কিন্তু ছোটখাটো বিষয় নয়, অনেক বড় কৃতিত্বের। অথচ, ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই বাংলাদেশ ১০০ এর কম রান করে। ‘ভালোর পরই খারাপ’ এই বাজে ধারাবাহিকতা সেই যে শুরু, তা আজো অব্যাহত রয়েছে। এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে এবং সফরের আগে একই চিত্র আমরা সবাই ভালোভাবেই লক্ষ করেছি।

এবার প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে দারুণভাবে এগিয়ে যায়। আবার দ্বিতীয় টেস্টে এক ইনিংস ও ১১৭ রানে হেরে হতাশার কালোমেঘে ডুবে গেল।

মাউন্ট মঙ্গুনাইয়ে জেতায় মনে হলো, বাংলাদেশ টেস্ট খেলা শিখেছে। আর ক্রাইস্টচার্চে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর উল্টো মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ টেস্টের ‘অ আ ই ঈ’ কিছুই শেখেনি। আসলে কোনোটাই সঠিক নয়।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ব্যাটে-বলের কারিশমা শিখেছে অনেক, কিন্তু প্রকাশ করার কৌশল শেখেনি। ফলে একটা টেস্টে জিতেই পরের টেস্টে একেবারে তুলোধুনো হয়েছে। কিংবা একটা ইনিংসে ভালো স্কোর করে পরের ইনিংসে মাটিতে নেমে এসেছে।

এবারের নিউজিল্যান্ড সফরকে সবমিলিয়ে সফল বললে ভুল বলা হবে না। কারণ, বাংলাদেশ এই প্রথম বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ ড্র করল। এমন নয় যে, বাংলাদেশ প্রথম টেস্টে জিতেছে ভাগ্যের জোরে, আর দ্বিতীয় টেস্টে খুব খারাপ খেলেছে।

এই যে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ জিতলো, এটা তো কখনোই আমরা কল্পনা করিনি।

কারণ, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বের বড় বড় ক্রিকেট শক্তিরাও হিমসিম খায়। সেখানে বাংলাদেশ উল্টো হিমসিম খাইয়ে দেয় স্বাগতিকদের। ফলে হতাশার কিছু নেই।

বিসিবি যদি সাফল্যের কৃতিত্ব নিতে পারে, তাহলে ব্যর্থতার দায়ভারও নিতে হবে। ভুলগুলো কিভাবে শুধরানো যায়, সেটার চেষ্টা তাদেরকেই করতে হবে।  

বাংলাদেশ ১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস লাভ করে, আর টেস্ট স্ট্যাটাস পায় ২০০০ সালে। তখন থেকে যদি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব ক্রিকেট বোর্ড নিত, তাহলে আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের প্রতিভা রয়েছে অনেক, কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না।

একটি সিরিজ বা টুর্নামেন্ট শেষ হলেই বোর্ডের নির্বাচকমণ্ডলী এবং কোচিং স্টাফ বদলাতে হবে-এটাই ছিল এতদিন বাংলাদেশের চিত্র। এই অবস্থা থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারলে, বাংলাদেশ ক্রিকেটে দ্রুত এগিয়ে যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!