ঢাকা: একটু একটু করে শেষের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচ। রাভিন্দ্রা জাদেজার বাউন্ডারিতে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। দুই হাত উঁচিয়ে ছুটলেন তিনি ছুটলেন ক্রিজে সঙ্গী লোকেশ রাহুলের দিকে।
ড্রেসিং রুমের সামনে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে ব্যাটিং কোচ আভিষেক নায়ারকে জড়িয়ে ধরলেন ভিরাট কোহলি। চওড়া হাসিতে মাঠের দিকে এগোলোন রোহিত শার্মা। যাকে কেউ কখনও হাসতে দেখেননি বলেই শোনা যায়, সেই কোচ গৌতাম গাম্ভিরের ঠোঁটেও দেখা গেল মৃদু হাসি। শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদটাই এমন মধুর!
অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। ২২ গজে আরও একবার স্পিনের ফুল ফোটালেন ভারতীয় স্পিনাররা। নিউ জিল্যান্ডের লড়াই তো প্রত্যাশিতই। ব্যাটে-বলে সহজে হাল ছাড়ল না তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিউইরা তল পেল না ভারতের শক্তি-সামর্থ্যের গভীরতার।
ফেভারিট ভারতই শেষ পর্যন্ত জিতে নিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। নিউ জিল্যান্ডকে চার উইকেটে হারিয়ে রোহিত শার্মার দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো টানা পাঁচ জয়ে।
সবশেষ আসরে আট বছর আগে ইংল্যান্ডে রানার্স আপ হয়েছিল ভারত। এবার শিরোপা জিতে তিনটি ট্রফি জয়ের প্রথম নজির গড়ল তারা।
দেশের মাঠে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের হারের সেই হতাশা হয়তো মুছে যাবে না। তবে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে সাদা বলে ক্রিকেটে নিজেদের দাপট বুঝিয়ে দিল তারা।
নানা টুর্নামেন্টে সেমি-ফাইনাল আর ফাইনালে বারবার আটকে পড়া নিউ জিল্যান্ডের স্বপ্ন ভঙ্গ হলো আবার।
রান তাড়ায় ভারত উড়ন্ত শুরু পায় রোহিত শার্মার ব্যাটে। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ‘ট্রেডমার্ক’ কাইল জেমিসনকে পুল শটে ছক্কায় তিনি পূর্বাভাস দেন। পরে ঝড়ও ওঠে।
তার ছক্কাতেই ৭.২ ওভারে ফিফটি পেরোয় ভারত, এই আসরে যা তাদের দ্রুততম। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই ভারতীয় অধিনায়ক ফিফটি স্পর্শ করেন ৪১ বলে। সঙ্গী শুবমান গিলের রান তখন স্রেফ ১০।
রোহিতের ব্যাটের তোড়ে শতরান চলে আসে সপ্তম ওভারে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সব আসরের ফাইনাল মিলিয়ে প্রথম শতরানের জুটি এটি।
পানি পানের বিরতির পর ভোজবাজির মতো ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেয় কিউইরা। গ্লেন ফিলিপসের আরেকটি অতিমানবীয় ক্যাচ থেকেই বদলানোর শুরু। এই টুর্নামেন্টে আগেও গোটা দুয়েক অবিশ্বাস্য ক্যাচ নেওয়া ফিল্ডার এবার শর্ট কাভারে তেমনই এক ক্যাচ নিয়ে ফেরান গিলকে (৩০)।
এরপর মাইকেল ব্রেসওয়েল বল হাতে নিয়ে প্রথম বলে ফেরান দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভিরাট কোহলিকে (১)। নিউ জিল্যান্ডের স্পিনাররা এরপর প্রবল চাপে ফেলেন রোহিত ও শ্রেয়াস আইয়ারকে। ফিল্ডিং তো তাদের বরাবরই দুর্দান্ত।
রানের জন্য হাঁসফাঁস করে এক পর্যায়ে ধৈর্য হারিয়ে স্টাম্পড হয়ে যান রোহিত (৮৩ বলে ৭৬)।
১৭ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারায় ভারত। নিউ জিল্যান্ডের উজ্জীবিত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে রান করার পথই পাচ্ছিল না ভারত। তবে লড়াই করে সময়টা পার করে দেন শ্রেয়াস আইয়ার ও আকসার প্যাটেল। এক পর্যাায়ে রান আসতে থাকে সাবলীল গতিতে। রান তাড়া আবারও হয়ে উঠছিল একতরফা।
কিন্তু নিউ জিল্যান্ড লড়াই চালিয়ে যায়। দুটি করে চার ও ছক্কায় শ্রেয়াসকে ৪৮ রানে থামান কিউই অধিনায়ক স্যান্টনার। ২৯ রানে থাকা আকসার হুট করেই বাজে শটে ক্যাচ দিয়ে বসেন লং অনে।
তবে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ এত লম্বা যে, বড় দুর্ভাবনায় তাদের পড়তে হয়নি। এক পাশে আস্থা হয়ে দলকে এগিয়ে নেন লোকেশ রাহুল। তাকে সঙ্গ দেন হার্দিক পান্ডিয়া। জয়ের কাছে গিয়ে পান্ডিয়া (১৮ বলে ১৮) ফেরেন জেমিসনের দুর্দান্ত বাউন্সে। বাকি পথটুকু অনায়াসে পাড়ি দেন রাহুল ও জাদেজা।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :