শেষ মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে রামোসে ম্লান বার্সা

  • ক্রীড়া ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০১৬, ১১:২১ এএম
শেষ মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে রামোসে ম্লান বার্সা

ইউরোপিয়ান ফুটবলের চলতি মৌসুমের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। মুখোমুখি স্পেনের দুই পরাশক্তি রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। চিরায়ত নিয়মেই মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে ন্যু-ক্যাম্পে। তবে জয়ের হাসি হাসতে পারেনি কোনো দলই। এগিয়ে গিয়েও অন্তিম মুহূর্তের গোলে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বার্সাকে।

ম্যাচের ঘড়িতে তখন ৯০ মিনিট। মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে ১-০ গোলে পিছিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ। তখনই এল ‘রামোস-মুহূর্তে’- শেণ মুহূর্তে গোল করে প্রতিপক্ষের হৃদয় ভাঙার ধারাটা ধরে রাখলেন সার্জিও রামোস। অধিনায়কের গোলে বার্সেলোনার মাঠ থেকে জয়ের সমান এক ড্র নিয়ে ফিরেছে রিয়াল।

রিয়াল মাদ্রিদ কোনো ম্যাচে পিছিয়ে থাকলেও এখন থেকে জিনেদিন জিনাদকে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। সার্জিও রামোস আছে না! শেষ মিনিটে গোল করে ম্যাচ বাঁচানোটাকে যে দিনে দিনে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার।

২০১৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল করে ম্যাচ নিয়ে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত সময়ে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে সেবার জিতে শেষ পর্যন্ত শিরোপা উৎসব করে রিয়াল। এই মৌসুমে ইউরোপিয়ান সুপার কাপেও একই গল্প। সেভিয়ার বিপক্ষে দলকে উদ্ধার করেন সেই রামোসই। কাল ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচটি কোনো শিরোপা নির্ধারক ছিল না। তবে এখানে হারের ক্ষতটা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। এ যে বার্সেলোনার সঙ্গে ম্যাচ। এল ক্লাসিকো! এখানে হার কি মেনে নেয়া যায়?

ঘরের মাঠ ন্যু-ক্যাম্পে প্রথমার্ধে শত চেষ্টা করেও রিয়াল মাদ্রিদের জালে বল পাঠাতে পারেনি বার্সেলোনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে লুইস সুয়ারেজের গোলে এগিয়ে যায় বার্সা নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তে সার্জিও রামোসের গোলে এক পয়েন্টের হাসি নিয়ে বাড়ি ফেরে রিয়াল মাদ্রিদ। চলতি মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ২১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার গৌরব নিয়ে ন্যু-ক্যাম্পে খেলতে নামা রিয়াল মাদ্রিদ সংখ্যাটিকে ২২-এ উন্নীত করলো। অন্যদিকে ঘরোয়া ফুটবলে টানা তিন ম্যাচে ড্রয়ের হতাশা কাটিয়ে ওঠা হলো না বার্সেলোনার। রিয়াল সোসিয়েদাদ, মালাগা ও রিয়ালের সঙ্গে লা লিগায় ড্র করার পাশাপাশি কোপা ডেল রেতে হারকিউলেসের সঙ্গে ড্র করে এনরিকের দল।

শনিবার ন্যু-ক্যাম্পে খেলার তৃতীয় মিনিটেই আক্রমণে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। সতীর্থের পাস থেকে বল পেয়ে বার্সেলোনার ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন লুকাস ভ্যাকুয়েস। পেশীর শক্তি দিয়ে এই স্প্যানিশ তারকার কাছ থেকে বল কেড়ে নেন বার্সা ডিফেন্ডার হাভিয়ের মাসচেরানো। ভ্যাকুয়েস পেনাল্টির আবেদন করলেও তাতে সাড়া দেননি রেফারি। সপ্তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ শানায় বার্সেলোনা। নেইমার বাম প্রান্তে জর্ডি আলবাকে পাস দিয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন। কাতালান ফুল-ব্যাকের ক্রস মেসিকে খুঁজে নেয়। মেসির ফ্লিক থেকে নেইমার বল পাওয়ার আগেই বিপদমুক্ত করে দেন দানি কারভাহাল।

১৩তম মিনিটে ম্যাচে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নেইমার বল নিয়ে ডি-বক্সের ভেতরে ঢোকার মুখে তাকে ফেলে দেন ইসকো। ফলে এই স্প্যানিশ তারকাকে হলুদ কার্ড দিয়ে সতর্ক করে দেন রেফারি। ১৮তম মিনিটে মেসিকে ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে ফেলে দেন লুকা মডরিচ। ফলে রেফারি ফ্রি-কিকের নির্দেশ দেন। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মেসি। সোজা বল তুলে দেন রিয়ালের কোস্টারিকান গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের হাতে। ২২তম মিনিটে ফের আক্রমণ শানায় বার্সেলোনা। বাম দিক থেকে বল নিয়ে নেইমার সুয়ারেজের উদ্দেশ্যে কাট-ব্যাক করেন। উরুগুয়ে সুপারস্টারের নিচু শট ভারানে কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হয়। কিছুক্ষণ পর ড্রিবলিং করে বল নিয়ে রিয়ালের গোলমুখে ঢোকার সময় রামোসের বাধার মুখে পড়েন মেসি।

২৬তম মিনিটে কর্নার আদায় করে নেয় বার্সেলোনা। তবে কর্নার থেকে ভেসে আসা বল দারুণ হেডে বিপদমুক্ত করে দেন করিম বেনজেমা। এক মিনিট পর সুয়ারেজের শট পোস্টের ওপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে গেলে হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। ২৮তম মিনিটে হোঁচট খায় বার্সা। ভ্যাকুয়েসকে পেছন থেকে বাধা দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন নেইমার। বার্সেলোনার আক্রমণের মধ্যেও পাল্টা আক্রমণে খেলা চালিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। ৩২তম মিনিটে মার্সেলোর ক্রস থেকে বল পেয়ে দারুণ এক ভলি করেন রোনালদো। তবে বল বেনজেমা দখলে নেয়ার আগেই বিপদমুক্ত করেন সের্জি রবার্তো।

৪০তম মিনিটে মেসির পাস থেকে বল পেয়ে রিয়াল মাদ্রিদের গোলমুখে শট নেন জর্ডি আলবা। তবে কারভাহাল সেটি বুক দিয়ে ঠেকিয়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন। বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা তখন পেনাল্টির আবেদন করলেও তাতে সাড়া দেয়ার কোনো কারণই খুঁজে পাননি রেফারি। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধে কোনো দলই সফলতা না পাওয়ায় গোলশূন্য ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল ও বার্সা।

বিরতির পর খেলার ৪৮তম মিনিটে আক্রমণের সুযোগ পায় বার্সেলোনা। মেসি সুয়ারেজকে পাস দিয়ে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তবে উরুগুয়ে সুপারস্টারের ফিরতি বল মেসি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার আগেই বিপদমুক্ত করেন ইসকো। ঘর সামলে দুই মিনিট পর আক্রমণে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। তবে অফসাইডের কারণে সেই লক্ষ্যে সফল হননি রোনালদো। কিন্তু বার্সার আক্রমণ সামলে শিষ্যরা পাল্টা আক্রমণ করায় ঠিকই হাসি ফোটে জিদানের মুখে।

৫৩তম মিনিটে ন্যু-ক্যাম্পের স্বাগতিক দর্শকদের জন্য এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। নেইমারের দূরপাল্লার ফ্রি-কিক রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডারদের ফাঁকি লাফিয়ে ওঠে অসাধারণ হেডে লক্ষ্যভেদ করেন সুয়ারেজ। এল ক্লাসিকোতে বার্সার সর্বশেষ সাত দলের ছয়টিতেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান রইলো নেইমারের। ৫৯তম মিনিটে আক্রমণে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। বাম দিক থেকে বল নিয়ে ফাঁকায় থাকা রোনালদোকে পাস দেন কোভাচিচ। সিআর সেভেন বাধার মুখে পড়ে বেনজেমাকে পাস বাড়ান। দারুণভাবে বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে আলবার বাধার মুখে পড়ে বল হারান এই ফরাসি ফরোয়ার্ড।

এক মিনিট পর ইভান রাকিটিচকে তুলে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে মাঠে নামান বার্সেলোনা কোচ এনরিকে। ইনিয়েস্তা মাঠে নামায় মধ্যমাঠে শক্তি আরো বেড়ে যায় কাতালানদের। ইনিয়েস্তা মাঠে নামার চার মিনিট পর ফের আক্রমণে যায় বার্সেলোনা। মেসির পাস থেকে বল পেয়ে দারুণ শট নিয়েছিলেন সুয়ারেজ। তবে লিভারপুলের সাবেক তারকার শট দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক নাভাস। কিছুক্ষণ পর নেইমারের নেয়া শট বিপদমুক্ত করেন রাফায়েল ভারানে।

৬৮ থেকে ৭২ মিনিটে পরপর তিনটি আক্রমণ করেও সফলতা পায়নি বার্সেলোনা। ৬৮তম মিনিটে মেসির পাস থেকে নেইমারের নেয়া শট পোস্টের ওপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। দুই মিনিট পর গোমেজের পাস থেকে বল পেয়ে পেনাল্টি বক্সের ভেতর থেকে ইনিয়েস্তার নেয়া নিচু শট কারভাহালের গায়ে লেগে গোলপোস্টের পাস দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। ৭২তম মিনিটে মেসি ও নেইমার নিজেদের মধ্যে ওয়ান টু ওয়ান পাস খেলে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এরপর নেইমারের নেয়া শট বিপদমুক্ত করে দেন ভারানে। তিন মিনিট পর রেফারির সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করায় সুয়ারেজকে লাল কার্ড দেখানো হয়।

এরপর আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে খেলা চললেও কোনো দলই গোলের দেখা পাচ্ছিল না। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে বার্সেলোনার হৃদয় ভেঙে দেন রামোস। বাম দিক থেকে মডরিচের ফ্রি-কিক থেকে ভেসে আসা বলে লাফিয়ে ওঠে বুলেটগতির হেডে বার্সেলোনা গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন রামোস। ফলে স্বাগতিক দর্শকদের মধ্যে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। এরপর আর গোল করতে পারেনি কোনো দল। ফলে ঘরোয়া ফুটবলে টানা চতুর্থ ড্রয়ের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।

১৪ রাউন্ড শেষে ৩৪ পয়েন্ট এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে অপরাজিত থাকা রিয়ালের। ২৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে বার্সেলোনা। দিনের প্রথম ম্যাচে গ্রানাদার মাঠে ২-১ গোলে হেরে গেছে সেভিয়া। বার্সেলোনার চেয়ে ১ পয়েন্ট কম নিয়ে তৃতীয় স্থানে তারা।

আরেক ম্যাচে দ্বাদশ স্থানে থাকা এসপানিওলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হোঁচট খেয়েছে শিরোপাপ্রত্যাশী আতলেতিকো মাদ্রিদ। ভিসেন্তে কালদেরনে ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। চতুর্থ স্থানে থাকা দিয়েগো সিমেওনের দলের পয়েন্ট ২৫।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Link copied!