প্রতীকী ছবি
পৃথিবীতে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে কোন প্রাণী সবচেয়ে দ্রুত সতর্ক সংকেত ধরতে পারে-এ নিয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য। ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে নিরীহ দেখতে কুনো ব্যাঙ। গবেষকেরা বলছেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার পাঁচ থেকে সাত দিন আগেই এই উভচর প্রাণীরা তাদের স্বাভাবিক আবাস ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যায়। এই আচরণই বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
মানুষের কাছে ভূমিকম্প একটি আকস্মিক কম্পন, কিন্তু প্রাণীরা তা অনুভব করে বাঁচার সংকেত হিসেবে। গবেষকেরা বলছেন, প্রাণীরা প্রধানত দুটি কারণে আগে থেকেই বিপদ টের পায়।
প্রথমত, তারা পি-ওয়েভ বা প্রাইমারি ওয়েভ নামে পরিচিত অতি সূক্ষ্ম ভূকম্পন অনুভব করতে পারে। মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে এই কম্পন ধরা সম্ভব না হলেও প্রাণীরা তা দ্রুত বুঝতে পারে। এই পি–ওয়েভই মূল ধ্বংসাত্মক কম্পন বা এস–ওয়েভের আগে পৌঁছায়।
দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্পের আগে মাটির ভেতর কিছু গ্যাস নির্গত হয়, পানির স্তর ও রাসায়নিক গঠনে পরিবর্তন আসে। কুনো ব্যাঙসহ বিভিন্ন উভচর প্রাণী এই পরিবেশগত পরিবর্তন দ্রুত অনুভব করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কুনো ব্যাঙের পাশাপাশি আরও কিছু প্রাণী ভূমিকম্পের আগাম সংকেত গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে সাপ, মাছ, হাতি, গাধা এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। ভূমিকম্পের আগে এরা অস্বাভাবিক অস্থিরতা, গর্তে বা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার প্রবণতা এবং আচরণগত পরিবর্তন দেখায়। তবে সতর্ক সংকেত ধরার ক্ষেত্রে শীর্ষেই থাকে কুনো ব্যাঙ।
এই গবেষণা প্রাণীকুলের বিশেষ সংবেদনশীলতা এবং প্রাকৃতিক সতর্কব্যবস্থার বিষয়ে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় কুনো ব্যাঙসহ সংবেদনশীল প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। প্রকৃতির এই নীরব বার্তাবাহকেরা হয়তো বড় বিপদের আগে মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিয়ে যেতে পারবে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :