শিশুর মেজাজ গরম হলে যা করবেন

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০১৬, ০৮:৫২ পিএম
শিশুর মেজাজ গরম হলে যা করবেন

প্রথমে শুরু হলো ঘ্যানঘ্যানানি দিয়ে। এরপর কান্না। কিছুক্ষণ পর চিৎকার। এরপর যে-ই হাতের কাছে আসছে, সে-ই মার খাচ্ছে। পরে অনেক কষ্টে ভুলিয়ে ভালিয়ে ঠান্ডা করা গেল বাসার ছোট কর্তাকে!

এমন ঘটনা প্রতিদিনের; অন্তত যাদের বাসায় ছোট্ট এক সদস্য আছে। এক বছর পার হলেই শিশুদের আচার-ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন চলে আসে।

আধো আধো বুলিতে, ছোট ছোট পা ফেলে পুরো দুনিয়াতেই রাজত্ব চালাতে চায় তারা। ভাবটা যেন, আমি এখন আমার মর্জির রাজা! শিশুরা হাসিখুশি থাকলে মা-বাবা একটু নিশ্চিন্তে থাকেন। কিন্তু আদরের শিশুর মেজাজ-মর্জি বিগড়ে গেলে ঘরে দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত বাজার মতো অবস্থা বিরাজ করে।

কিন্তু এত কিছুর পরও আমরা তো বড়। ফলে শিশুরা কেন এমন আচরণ করছে এবং এর প্রতিকারই বা কী-এসব ভাবতে হবে আমাদেরই। প্রতিটি শিশুই একে-অপরের থেকে আলাদা। তাদের সামলানোর পদ্ধতিও ভিন্ন। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কিছু পদ্ধতি আছে, যেসব অবলম্বন করলে বাচ্চাদের মেজাজ সামাল দেওয়া সহজ হবে।

রোজকার রুটিনে থাকা
শিশুর প্রতিদিনের জন্য একটি রুটিন তৈরি করে ফেলুন। যতটা সম্ভব সেই রুটিনে রাখার চেষ্টা করলে সুফল মিলবে। বিশেষ করে খাওয়া ও ঘুমানোর সময়টা। মাঝে মাঝে তো একটু পরিবর্তন আসবেই। ক্লান্তি, সময়মতো না ঘুমানো ও খিদে বাচ্চাদের খিটখিটে করে তোলে। রুটিন মাফিক ঘুম আর খাওয়া হলে অনেকাংশেই সেটা কমে আসবে।

কারণটা বোঝার চেষ্টা
ঘুম, খিদে বাদ দিয়ে বাচ্চার খিটখিটে মেজাজের পেছনে আর কোনো কারণ আছে কি না, তা বোঝার চেষ্টা করুন। ডায়াপার ভারী হয়ে থাকা, পেটব্যথা অথবা শারীরিক কোনো সমস্যার কারণেও শিশু কাঁদতে পারে। কিন্তু কোনো একটা জিনিস চাইছে, সেটা তাকে দেওয়া হচ্ছে না-কান্নার কারণ যদি এটা হয়ে থাকে, তাহলে কিছুক্ষণ কাঁদলেও ক্ষতি নেই। বরং এতে পরবর্তী সময়ে সে বুঝবে, কাঁদলেই সব জিনিস তাকে দেওয়া হবে না।

ভালো কাজে প্রশংসা
যত ছোটই হোক না কেন, প্রশংসা করলে সবাই বোঝে। শিশু ভালো কাজ করলে তার প্রশংসা করুন। জড়িয়ে ধরুন। আপনার কথামতো কোনো কাজ করলে আপনি যে খুশি হয়েছেন, সেটা তাকে বোঝান হাততালি দিয়ে।

কর্তৃত্ব ফলানো
ছোট ছোট বিষয়ের ওপর তার মতামত নিন। যদিও সে হয়তো অনেক কিছুই বুঝতে পারবে না। কোন জামাটা পরতে চাও? কোন জুস খাবে? এখন কী করতে চাও? তাকেও যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, এটা ভেবেই কিছুক্ষণ শান্ত থাকবে।

অন্যদিকে মন নেওয়া
মাঝে মাঝে কোনোভাবেই শিশু শান্ত হতে চায় না। হতাশ না হয়ে চেষ্টা করতে হবে তার মন অন্যদিকে ফেরানো যায় কি না। ঘরের বাইরে নিয়ে যান প্রয়োজনে।

ক্লান্ত হয়ে থাকলে
আপনার শিশু ক্লান্ত হয়ে থাকলে ওকে আরামদায়ক পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করুন। শিশু ক্লান্ত থাকলে সেই মুহূর্তে তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, দোকানে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা থাকলে বাদ দিন। না হলে বাইরে গিয়ে সে আরও খিটখিটে মেজাজ দেখাবে।

শান্ত থাকুন
শিশুদের কান্না থামানো খুবই কঠিন কাজ। আর কিছু না হোক, দরকার পাহাড়–পর্বতসমান ধৈর্য। তাই শিশু যখন অস্থির থাকবে, আপনাকে তখন সুস্থির থাকতে হবে। মাথা গরম করে ফেললেই কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে যাবে!

মনোযোগ দিন
বেচারা ছোট মানুষটা অনেকক্ষণ ধরে আপনাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে। আপনি হয়তো ফিরেও তাকাচ্ছেন না। আর পায় কে! কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল চিত্কার–চেঁচামেচি। অনেক সময় শিশুদের প্রতি মনোযোগ না দেওয়াও তাদের মেজাজ গরমের একটি কারণ হয়ে থাকে। মনোযোগ দিয়ে তার কথা না শোনা, উত্তর না দেওয়াও তার মেজাজ খারাপের একটি কারণ। তাই তার প্রতি মনোযোগ দিন, সমাধান মিলবে।

‘হ্যাঁ’ বলুন
শিশু কিছু করতে চাইলেই তাকে ‘না’ বলবেন না। ক্ষতি হবে না, এমন কাজ করতে দিন। এর মধ্যে দিয়েই সে অনেক কিছু শিখবে। খেতে বসলে যতই খাবার ছড়াক না কেন, নিজ হাতে খেতে উৎসাহ দিন।

সব সময় ‘না’ শুনতে শুনতে তারও হয়তো ‘না’ শব্দটির প্রতি ভালোবাসা জন্মে যাবে! একান্তই যদি কোনো বিষয়ে ‘না’ বলতে হয়, বুঝিয়ে বলুন কেন সেটি করা যাবে না। বেশির ভাগ সময় ‘না’ শুনলে তারা বিষয়টি আরও বেশি করে করতে চায়।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Link copied!