একজন ডালিয়ার মানবসেবার গল্প

  • নাসরিন জাহান জয়া, বেরোবি (রংপুর) | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০১৭, ১১:০১ পিএম
একজন ডালিয়ার মানবসেবার গল্প

রংপুর: ভুবন ভোলানো হাসি আছে, যে হাসি দিয়েই পুরো পৃথিবী জয় করতে না পারলেও পৃথিবীর অনেকটাই জয় করা যায়। এরকমই মিষ্টি ভুবন জয়ী হাসির অধিকারিনী একটা মিষ্টি মেয়ের গল্পের নাম ডালিয়া নওশিন। যার পুরোটা জুড়েই রয়েছে মানুষের জন্য ভালোবাসা। যার বেঁচে থাকার আনন্দই হল অন্যের উপকার করার মাঝে। অসহায়, দরিদ্র মানুষদের পাশে দারাতে পারলে যে কিনা নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম জনপ্রিয় একটি মুখ। তার পড়াশোনা দুর্যোগ নিয়ে হলেও তাকে পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজের উন্নয়ন মূলক কাজ গুলোতেই দেখা যায় বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রতিটা সামাজিক সংগঠন এ রয়েছে তার সরব পদচারনা।

সংগঠনের সাথে যুক্ত হবার শুরুর কথা জানতে চাইলে মিষ্টি হেসে বললেন, ‘যেহেতু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে তাই প্রথমত দুর্যোগ এবং মানব কল্যাণের কথাটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। ফলে প্রথমবর্ষ থেকেই যুক্ত হই রেড ক্রিসেন্ট সোসায়ইটি মতো বেশ কয়েকটি মানবকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে।’

ডালিয়া জানান, রেড ক্রিসেণ্ট সোসায়ইটি থেকে ইতোমধ্যে সম্পন্ন করছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং। যা আমেরিকান রেড ক্রস এবং এন সেট নেপালের যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট এর কিছু সৌভাগ্যবান সদস্যদের দেয়া হয়েছিল। আর এভাবেই শুরু হয় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে পথ চলা। এছাড়াও যুক্ত আছেন রক্ত দাতাদের সংগঠন বাঁধনের সাথেও। রক্ত সংগ্রহ করে দেয়া, নিজের রক্ত দিয়ে মানুষ কে সহযোগিতা করার মত কাজ তার কাছে বেশি আনন্দের। এ পর্যন্ত নয়বার রক্ত দিয়েছেন। সামনে আরো দেয়ার ইচ্ছে আছে তার।

মানবসেবায় ডালিয়া

ডালিয়া বলেন, ‘আসলে আমি মনে করি সেবাই মানুষের পরম ধর্ম হওয়া উচিত। নিজের কাজ গুলোর প্রাধান্য অবশ্যই সবকিছুর উপরে। তবে মানুষের উপকারে যদি না আসতে পারি। তাহলে সে জীবন কখনোই স্বার্থক বলে মনে করি না।’ 
এরপর যোগ করেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইউনাইটেড নেশনস ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বেরোবি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং গ্রিন সিটি রংপুরের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে কাজ করছি। এছাড়া ভলেন্টিয়ার ফর বাংলাদেশের রংপুরের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৪ সালে। পথশিশুদের সহযোগিতামূলক কাজ গুলো আমার অসাধারণ লাগে তাই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পৃহা সাথেও কাজ করছি দীর্ঘদিন।’ 

ডালিয়া জানান, এসব সংগঠনে কাজ করার প্রধান কারণ পথশিশুদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর চেষ্টা। এছাড়াও বাংলাদেশ ইয়ুথ ইনভাইরনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভের বর্তমান রিজিওনাল কো- অর্ডিনেটর হিসেবেও কাজ করছেন। ডালিয়া এর আগে ‘পরিবর্তন চাই’ নামের সংগঠনটির রংপুর রিজিওনাল কো- অর্ডিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাজ ও মানবকল্যাণমূলক কাজের প্রতি রয়েছে আলাদা রকমের ভালো লাগা। শীতার্তদের শীত বস্ত্র, পথশিশুদের নতুন জামা, শীতের কাপড় অথবা পথশিশুদের মুখে হাসি ফোটাবার চেষ্টা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান কিংবা আর্থ অলেম্পিয়াড-সবকিছুতেই যেন সমানভাবে পদচারণ রয়েছে তার। তার ব্যক্তিগত সার্টিফেটের সংখ্যাও বয়সের তুলনায় কম নয়। বিভিন্ন দেশি- বিদেশি লিডারশিপ ট্রেনিং বা ক্যাম্পও অংশ নিয়েছেন তিনি। জানালেন, একটি ক্যাম্পে যোগ দিতে শ্রীলংকাতে যাওয়ার কথা ছিল গত বছরে কিন্তু বিভাগে পরীক্ষার এবং সময় সাপেক্ষতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।  তার বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হওয়াতে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। আর এ ব্যাপারে পরিবার থেকেও রয়েছে অবাধ স্বাধীনতা।

বর্তমানে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য Smile নামক এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করছেন তিনি ! যেখানে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা এবং সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পাঠদান করা হয়। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, সমাজের অধিকারবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার প্রসারে কাজ করার প্রবল ইচ্ছা আছে। স্বপ্ন দেখেন সামাজিক অসংগতি এবং দারিদ্রতা মুক্ত সোনার বাংলাদেশের। 

স্বেচ্ছাসেবী ডালিয়া

ডালিয়ার জন্ম দিনাজপুরে হলেও রংপুর শহরই তার কাছে বেশি প্রিয়। কারন তার বেড় উঠা পুরোটাই রংপুর শহড়ে। পড়েছেন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর এ। ডালিয়া নওশিন বর্তমানে অনার্স জীবনের শেষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন। আর তাই পড়াশোনা র জন্য নিজেকে বর্তমানে সব কিছু থেকে একটু দুরে সরিয়ে রেখেছেন। 

তবে এতদিন সংগঠন গুলোতে ছোটাছুটি করে, বিশাল বিশাল দায়িত্ব পালন করেও তার একাডেমিক রেজাল্ট যে খারাপ তা কিন্তু নয়। ক্লাসের প্রথম সারির একজন শিক্ষার্থী হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। প্রথম সেমিষ্টারে বিভাগের দ্বিতীয় স্থান টি দখল করে নিয়েছিলেন তিনি। আর তাই যারা বলেন যে, সামাজিক কাজকর্ম যারা করে তারা বাউন্ডুলে, তাদের মুখে চুনকালি ঘষে দেয়ার মত অন্যতম উদাহরন হতে পারেন মিষ্টি হাসির ডালিয়া নওশিন।

সোনালীনিউজডটকম/এন

Link copied!