• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ক্লিন ফিড’ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেল বিদেশি চ্যানেল


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২, ২০২১, ১২:২৯ পিএম
‘ক্লিন ফিড’ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেল বিদেশি চ্যানেল

ঢাকা : বিদেশি চ্যানেলগুলো তাদের মূল কনটেন্টের সাথে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না—সরকারের তরফ থেকে এমন নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বিদেশি সব টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে কেবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাটকো, বিদেশি চ্যানেলের ডিস্ট্রিবিউটর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, বিদেশি চ্যানেলগুলো আইন অনুযায়ী ‘ক্লিন ফিড’ চালাতে বাধ্য হলেও তারা তা মানছে না। আইন অনুযায়ী, ‘ক্লিন ফিড’ ছাড়া বিদেশের চ্যানেল এখানে সম্প্রচার করা যায় না।

“আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে দেশে কোনো অবস্থাতেই ক্লিন ফিড ছাড়া বিদেশি চ্যানেলকে চালাতে দিতে পারি না। এরপর আইন প্রয়োগ করা হবে। ক্লিন ফিড চলছে কি না, সেটি নিয়ে আমরা সারা দেশে এনফোর্সমেন্টে যাব।”

এরপরই দেশে সম্প্রচারিত বিদেশি চ্যানেলগুলোর প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ক্লিন ফিড কী?

ক্লিন ফিড মানে হলো বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারকালে কোনো বিজ্ঞাপন থাকতে পারবে না। বর্তমান আইন অনুযায়ী, বিদেশি চ্যানেলের অনুষ্ঠান বাংলাদেশে দেখাতে হলে ‘ক্লিন ফিড' দেখাতে হবে।

বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে—এমন বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছে কেবল অপারেটররা।

সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়, সেগুলো বাংলাদেশে দেখানো যাবে না।

কেবল অপারেটররা বলছেন, বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে—এমন বিদেশি চ্যানেলগুলো থেকে বিজ্ঞাপন কেটে বাদ দিয়ে সম্প্রচার করা সম্ভব নয়। এ কারণে তারা চ্যানেলগুলো দেখানোই বাদ দিয়ে দিয়েছেন।

বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপনবিহীন ক্লিন ফিড প্রচারের কথা সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও সে বিষয়ে কারও কর্ণপাত না থাকায় বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, যত দ্রুত ক্লিন ফিড সরবরাহ করা হবে তত দ্রুতই চ্যানেলগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।

আর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন অনার (অ্যাটকো)।

অ্যাটকোর পরিচালক ও ডিবিসি টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ক্লিন ফিড নীতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত তো হচ্ছেই, বিজ্ঞাপনের কলাকুশলীরাও বঞ্চিত হচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ক্লিন ফিডের বিধানটি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আছে। আমাদের দেশে এটা কার্যকর না হওয়ায় দেশীয় টেলিভিশনগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে।

তিনি বলেন, আমরা একটা গবেষণা চালাচ্ছি যার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তাতে দেখা গেছে, খবরের জন্য বাংলাদেশের দর্শকরা বাংলাদেশি চ্যানেল দেখেন। কিন্তু অন্যান্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের জন্য ভারতীয় চ্যানেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বিজ্ঞাপনদাতারাও এটা জানেন।

মূলত, বাংলাদেশের আইনে বিদেশি টেলিভিশনগুলোর বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ নেই। এ কারণে আগেও কয়েক দফায় বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার।

এ দফায় নতুন করে আবার একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে আইনের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব হারানোর বিষয়টিও বড় করেই এখন চিন্তা করা হচ্ছে। বিদেশি চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলো থেকে একদিকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না, আবার ওই সব চ্যানেল বাংলাদেশে জনপ্রিয় হওয়ায় অনেক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য বিদেশি চ্যানেলকেই বেছে নিয়েছে।

এসবের পরও বিদেশি কিছু চ্যানেল বিশেষ করে ভারতীয় কিছু চ্যানেল বাংলাদেশে এতো বেশি জনপ্রিয় যে সেগুলো বন্ধ করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!