• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন


নিউজ ডেস্ক মার্চ ২, ২০২১, ১২:৪৮ পিএম
মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন

ঢাকা : আজ ২ মার্চ। বাংলদেশ এই দিনটিকে প্রতি বছর জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে পালন ও স্মরণ করে থাকে। একাত্তরের ২ মার্চেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলন করা হয়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা। স্বাধীনতা অর্থবহ করতে দুর্নীতি, বঞ্চনা, শোষণ ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ গড়ার আহবান জানান সেদিনকার পতাকা উত্তোলনকারীরা।

১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের পুরো মার্চ জুড়েই ছিল প্রচণ্ড উত্তাল ও ঘটনাবহুল সময়। স্বাধিকারের প্রশ্নে এ মাসেই ঘটেছে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস।

একাত্তরের ১ মার্চ হঠাৎ করেই পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। তারই প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার আপামর জনতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দিলেন অসহযোগ আন্দোলনের। আন্দোলনের দামামা বেজে উঠলো সারা দেশে। ফলশ্রæতিতে, স্বাধিকার আন্দোলন রূপ নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বললেন, ‘শুধু সংখ্যালঘিষ্ঠ দলের সেন্টিমেন্টের জন্য অধিবেশন স্থগিত রাখা হইয়াছে এবং আমরা উহা নীরবে সহ্য করতে পারি না। ইহার দ্বারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রায় ব্যর্থ হইয়াছে। পরিষদ অধিবেশনের জন্য সারা বাংলাদেশের সকল সদস্যই ঢাকায় ছিলেন। জনাব ভুট্টো ও জনাব কাউয়ুম খানের দল ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানি সকল সদস্যই অধিবেশনে যোগ দিতে রাজি ছিলেন।’

বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ  ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারাদেশে সর্বত্র হরতালের ডাক দিলেন। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করার প্রতিবাদে রাজধানীতে প্রচণ্ড বিক্ষোভ শুরু হলো। পল্টনে জনসভা ও গণমিছিলের ডাক দেয়া হলো। ভাষণ দেবেন শেখ মুজিবুর রহমান। সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্দেশ দিলেন।

ইতোমধ্যে, পাক সামরিক সরকার সামরিক আইন আদেশ জারি করে যেকোনো উপায়ে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী খবর, মতামত বা চিত্র প্রকাশের ব্যাপারে সংবাদপত্রসমূহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হবে। সূত্র: মার্চ ২, ১৯৭১, ইত্তেফাক।

এছাড়া পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে একাত্তরের ২রা মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে পাস করা হয় স্বাধীনতার প্রস্তাব। প্রস্তুতি শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রামের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার জনসভায় উপস্থিত হন লাখো ছাত্র জনতা। সভার শুরুতে সমবেত ছাত্রসমাজ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করেন।

সভা শেষে এক বিরাট শোভাযাত্রা স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররম গমন করে। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সচিবালয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ানো হয়।

রাতে হঠাৎ বেতার মারফত ঢাকা শহরে কারফিউ জারীর ঘোষণা করা হয়। কারফিউ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শ্রমিক এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকেরা কারফিউ-এর বিরুদ্ধে প্রবল শ্লোগান তুলে কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল বের করে।

তাদের শ্লোগান ছিল- “সান্ধ্য আইন মানি না”, “জয় বাংলা”, “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো” ইত্যাদি। সমস্ত শহরে কারফিউ ভঙ্গ করে ব্যারিকেড রচনা করা হয়।

ডি. আই. টি এভিনিউর মোড়, মর্নিং-নিউজ পত্রিকা অফিসের সামনে রাত সাড়ে নয়টায় সামরিক বাহিনী জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। বিরাট এক জনতা কারফিউ ভঙ্গ করে গভর্নর হাউজের দিকে এগিয়ে গেলে সেখানেও গুলি চালানো হয়। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে কারফিউ ভঙ্গকারীদের ওপর বেপরোয়া গুলি চলে।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বহিঃশত্রুর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বাঙালির। সকল প্রকার পরাধীনতার শিকল ভেঙে একাত্তরের মার্চে পুরো জাতি ঐক্য ও আত্মবিস্ফোরণের চূড়ান্ত বিন্দুতে এসে পৌঁছায়। যেখান থেকে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!