• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ব বাংলায় শেখ মুজিবের শাসন


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৪, ২০২১, ০৮:৫৪ পিএম
পূর্ব বাংলায় শেখ মুজিবের শাসন

ঢাকা : গণবিক্ষোভে টালমাটাল ছিল একাত্তরের ৪ মার্চ। দিন যতই যাচ্ছিল স্বাধীনতার আকাঙ্খার তীব্রতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এ দিন সামরিক জান্তার সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। ক্ষুব্ধ বাঙালির মিছিলে মিছিলে ঝাঁঝাল স্লোগান উচ্চকিত ছিল ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসক শোষকদের বিরুদ্ধে সারাদেশ। 

অগ্নিঝরা মার্চের এই দিনটির ঘটনা প্রবাহের দিকে তাকালে বোঝা যায় বাঙালি জাতি কী ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। কার্যত ৪  মার্চ পূর্ব বাংলায় ইয়াহিয়া-ভুট্টো নয়, চলছিল শেখ মুজিবের শাসন। 

বঙ্গবন্ধু তাঁর অনুপস্থিতিতে আন্দোলন চালানোর রূপরেখা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলার ভাইয়েরা আমার- আমি বলছি, আমি থাকি আর না থাকি- বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন যেন না থামে, বাঙালির রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমি যদি নাও থাকি, আমার সহকর্মীরা আছেন। তাঁরাই নেতৃত্ব দিবেন। আর যদি কেউই না থাকে, তবু আন্দোলন চালাইয়া যাইতে হইবে। বাংলার ঘরে ঘরে প্রতিটি বাঙালিকে নেতা হয়ে নির্ভয়ে আন্দোলন চালাইয়া যাইতে হইবে- যে কোনও মূল্যে বাংলার স্বাধিকার ছিনাইয়া আনিতে হইবে।’

পৃথক এক বিবৃতিতে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মাওলানা ভাসানী বলেন, ‘ওরা সাম্রাজ্যবাদের দালাল। ওদের শোষণ-নির্যাতনে ৮৫ ভাগ বাঙালি আজ প্রায় মৃত্যুর সম্মুখীন। সুতরাং যে ব্যক্তি, যে রাজনৈতিক দল অথবা যে রাজনৈতিক নেতা পশ্চিমাদের সাথে কিংবা সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে কোনো রকমের আঁতাত করবে বা করতে যাবে সে যে শুধু তার নিজস্ব ক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত হবে, তা নয়, বরং তার জানমালও বিপন্ন হবে।’
 
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনসভা আয়োজন করে। সেখানে সংগঠনের সভাপতি নুরুল ইসলাম ও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘দেশে নিরঙ্কুশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জাতিগত অধিকার তথা বাংলার স্বাধিকারের সংগ্রামকে বানচাল করার অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াতে হবে।’  

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভানেত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। বাংলার স্বাধিকারের সংগ্রামকে ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। আর এই জন্যই পাড়ায়-পাড়ায়, গ্রামে-গঞ্জে সংগ্রাম কমিটি ও মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র জনতাকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সারাদেশে পালিত হয় স্বত:স্ফূর্ত হরতাল। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার প্রতিবাদে প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত  হরতাল পালনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে বাঙালি জাতি।

জনগণের মুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ডাক দেন সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং মিছিল ও জনসভার সিদ্ধান্ত নেন তারা। সংবাদপত্রের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি, স্বাধিকার আন্দোলনকে সফল করতে নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভার প্রস্তাব, যে কোনও ত্যাগ স্বীকারের সংকল্প গ্রহণ করেন। ২০ জন বিশিষ্ট শিল্পীর যুক্তবিবৃতিতে বেতার টেলিভিশন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন শিক্ষক পৃথক পৃথক বিবৃতিতে ঢাকার ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার গণবিরোধী ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে সামরিক আইন আদেশ জারি করা হয়। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা দাড়ায় ১২১, খুলনায় নিহত হয় ৬। ঢাকায় কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আহবানের পর স্বাধিকার আন্দোলনে গুলিতে আহত মুমূর্ষু বীর সংগ্রামীদের প্রাণ রক্ষার্থে শত শত নারী-পুরুষ ও ছাত্রছাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। ছাত্রলীগ ও ডাকসু  আবেদন  জানান, ৬ মার্চের মধ্যে ঢাকা শহরে এবং ৭ মার্চের মধ্যে সারাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন শেষ করার। 

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!