• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিবন্ধন ছাড়াই চলছে ভারী যন্ত্রবাহন


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৯, ২০২১, ০৪:২৭ পিএম
নিবন্ধন ছাড়াই চলছে ভারী যন্ত্রবাহন

ঢাকা : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া গ্রাম। ২০১৭ সালের সাত ডিসেম্বর এই গ্রামে সড়ক নির্মাণের সময় ‘রোডরোলারের’ চাপায় নিহত হয় সাহাবা নামের তিন বছরের এক শিশু।
নিহত সাহাবার দাদা আব্দুল খালেক প্রধান জানান, তার নাতনি নিহতের ঘটনায় মামলা করেননি তারা। তার মতে, সরকারের সাথে মামলায় যেহেতু তারা লড়ে পারবে না, তাই মামলা করা থেকে বিরত থাকতে হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা যায়, সারা দেশে প্রতি বছর শুধু সেতু নির্মাণের যন্ত্রবাহন, বিশেষ করে রোডরোলার ও এক্সেবেটর দুর্ঘটনায় নিহত হয় প্রায় ২৫ জন মানুষ। আহত হয় কয়েকশ। এদের বেশিরভাগেরই মামলা হয় না।

কারণ যেসব যন্ত্রবাহনের আঘাতে দুর্ঘটনা ঘটে, সেসবের নিবন্ধন নেই, তাই নজরদারিও নেই। এসব যন্ত্রবাহন যারা ব্যবহার করে তাদেরও কৈফিয়ত দিতে হয় না। তা ছাড়া এসব যন্ত্রবাহন কেনাবেচা বা হাতবদলও করের আওতায় পড়ে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে দেশে মোট ১৫০১.৮৭ মিলিয়ন ডলারের রোডরোলার এস্কেবেটর মেশিনসহ অন্যান্য ২৬ হাজার ২৬১টি মেশিন আমদানি করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই চল্লিশ বছরের পুরোনো ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

এ ছাড়া এর আগে আমদানির সংখ্যাও কয়েক লাখ, যা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সারা দেশে।

অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক হাদিউজ্জামান বলেন, এসব ভারী যন্ত্রবাহনকে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এসব যন্ত্রবাহনের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার হার দিনদিন বাড়বে। সাধারণ মানুষও কোনো প্রতিকার পাবে না।

তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন না থাকার কারণে সেফটি মেজারমেন্ট নিয়ে কাজ করে না এসব যন্ত্রবাহন ব্যবহারকারীরা। তাই দুর্ঘটনায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে এস্কেবেটরের ব্যবহারের সময় বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।

অর্থনীতিবিদ হোসেন মনসুর বলেন, এসব যন্ত্রবাহন ব্যবহার করে ঠিকাদাররা বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। তা ছাড়া সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আরো হাজার হাজার মেশিন কাজের স্বার্থেই আনতে হবে।  

এসব যন্ত্রবাহনকে করের আওতায় আনলে বছরে শতকোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো সরকারের।

তিনি বলেন, এই দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নিতে হবেই। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে কাজ করতে এসে রিটার্ন ব্যাক প্রক্রিয়ায় ভারী যন্ত্রবাহনের শুল্ক মওকুফ করায়। কিন্তু কাজ শেষে দেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো শুল্ক ছাড়া বিক্রি করে দেয়। তা ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান স্পেয়ার পার্টসের তথ্য দিয়ে শুল্ক ফাঁকির মাধ্যমে এসব যন্ত্রবাহন আমদানি করছে বছরের পর বছর।

সূত্রমতে, প্রায় সড়কে চোখে পড়ে নির্মাণ যন্ত্রবাহন রোডরোলার।

রাজধানীসহ বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকায় উন্নযন কর্মকাণ্ড যেখানে চলে সেখানেই চোখে পড়ে রোডরোলার, এস্কেবেটর, ড্রামটাক, পেভার, ডোজারসহ বিভিন্ন নির্মাণ যন্ত্রবাহন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই এসব যন্ত্র দিয়ে কাজ চলছে।

অথচ ভ্যানগাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা রিকশা সবই রেজিস্ট্রেশন ছাড়া রাস্তায় চলতে পারে না। অথচ রোডরোলার রাস্তা ব্যবহার করলেও কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই, নেই কোনো সরকারি দপ্তরের কাছে জবাবদিহিতাও। তাই এসব যন্ত্রবাহন দুর্ঘটনা ঘটালেও অভিযোগ অনেকটা দায়সারা।

এসব ভারী যন্ত্রপাতি চালানো ঠিকাদার ফজলুল হক বলেন, তিনি এক চাইনিজ কোম্পানি থেকে একটি এস্কেবেটর কিনেছেন। তবে এটার কোনো সরকারি লাইসেন্স নেই। চীনারা তাদের কাজের জন্য এদেশে এনেছিল, কাজ শেষে বিক্রি করে দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি নিবন্ধন থাকলে অবশ্যই নিবন্ধন করে নিতেন। যেহেতু নেই সেহেতু তিনি এভাবেই পরিচালনা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায় পড়ে চালক ও মালিকের ওপর। কিন্তু ভারী যন্ত্রবাহনের রেজিস্ট্রেশন না থাকায় আইনি জটিলতায় পার পেয়ে যান চালক ও মালিক।

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, এসব যন্ত্রবাহন নিবন্ধনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তবে সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে রাজস্ব খাত আরো শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, এতদিন বিষয়টি নজরে না থাকায় এসব যন্ত্রবাহন করের বাইরে রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!