• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন

রাজধানীর লাখো ফুটপাত ব্যবসায়ী দিশেহারা


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৪, ২০২১, ১১:৫৭ পিএম
রাজধানীর লাখো ফুটপাত ব্যবসায়ী দিশেহারা

ঢাকা : রাজধানীর মেরুল বাড্ডার জসিম উদ্দিন। ফুটপাতে জামা বিক্রি করেন। এবার ঈদের জন্য মার্চের শুরুতে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে জামা কিনেছেন। কিছু বিক্রি করলেও এখন ঈদের জন্য রাখা জামা নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। লকডাউনে ফুটপাতে না বসা যাবে না। ঋণের টাকায় কেনা কাপড়ের কী হবে, আবার কিস্তি কী করে দেবে। এ নিয়ে জসিমের এখন দুশ্চিন্তার শেষ নেই।

জসিম জানান, গতবার ঈদেও এই রকম একটা অবস্থা ছিল। এবার এ রকম হবে না ভেবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে আসছি। ঈদের আগে বিক্রিও হতো। কিন্তু লকডাউনে আমি কী করব ভেবে পাচ্ছি না। পরিস্থিতি খুব খারাপ। কিস্তি কীভাবে শোধ হবে-এ নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেই।

শুধু জসিম নয়, রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের কেনাকাটা করা ফুটপাতের কয়েক শ ব্যবসায়ীর মাথায় হাত। রমজানে তাদের বিক্রি ভালোই হতো। কিন্তু লকডাউন এখন তাদের পথে বসিয়ে দেওয়ার উপক্রম করেছে।

মুকুল হোসেন নামের আরেক ফুটপাত ব্যবসায়ী বলেন, আমদের সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় দুই ঈদে। তবে কোরবানির ঈদের চেয়ে রোজার ঈদে সবচেয়ে বেশি হয়। তিনি বলেন, আমরা সারা বছরই টুকটাক বিক্রি করি। তবে ঈদকে ঘিরে আমাদের বেশি পরিকল্পনা থাকে। অনেকেই ঈদকে ঘিরে সমিতি থেকে লোন নিয়ে কাপড় কিনে রাখে। কিন্তু এবারে যারা কিনে রেখেছে, তারা বিপদে পড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল থেকে শুরু করে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, যাত্রাবাড়ীসহ পুরো রাজধানীতে কয়েক লাখ মানুষ ফুটপাতের ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। ফুটপাতে বসতেও তাদের কয়েক ধাপে টাকা দিতে হয়। তার পরও জীবন-জীবিকার তাগিদে এই ব্যবসা করে আসছেন।

এ ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো পুলিশ, কখনো সিটি করপোরেশন আবার কখনো প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। তার পরও তারা ফুটপাতের ব্যবসাতেই টিকে রয়েছেন। নিম্ন আয়ের মানুষরা কেনাকাটার জন্য যেহেতু ফুটপাতকেই বেছে নেন, তাই এরাও এ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।

রাজধানীর গুলিস্তানের ফুটপাত ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ বলেন, গত কয়েক বছর আমাদের ওপর একপ্রকার নির্যাতন চালানো হয়েছে। কখনো বসতে দেয় আবার কখনো বসতে দেয় না। কিছুদিন ধরে আমরা ভালোই ব্যবসা শুরু করেছিলাম। আমরা ঈদকে ঘিরে পরিকল্পানাও করে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে মালামাল উঠিয়েছি। কিন্তু লকডাউন আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। এক সপ্তাহের কথা বলা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে উঠে গেলে ভালো। কিন্তু যদি এটি বৃদ্ধি করা হয় আমার মতো হাজারো ফুটপাত ব্যবসায়ীকে পথে বসতে হবে।

এদিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধের সময়টায় দোকান বন্ধ থাকলে ব্যবসায়ীদের জন্য টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে যাবে জানিয়েছে সম্মিলিত দোকান ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১১টায় সুবাস্তু আর্কেড আইসিটি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের আহ্বায়ক তৌফিক এহেসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রণোদনা আশা করব। ওনার সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে, ওনার কাছে আবেদন করে ক্ষতিপূরণ এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য আমরা আবেদন জানাব।

জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত সঠিক জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু এই লকডাউনে সবচেয়ে কষ্টকর পরিস্থিতিতে পড়েন দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল এবং সাধারণ দোকান ব্যবসায়ীরা। রমজান ও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। এ অবস্থায় যদি সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন সম্মিলিত দোকান ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের এই নেতা। বলেন, ‘আমাদের বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। আগেও দেশের যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভেবেছেন।

আমরা বিশ্বাস করি, এবারের লকডাউনেও তিনি ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সীমিত সময়ের জন্য কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ করে দেবেন।

দেশের ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তৌফিক এহেসান জানান, দেশে ২ কোটি ৫০ লাখ ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এ আয় থেকেই দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় চাহিদা ও জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। যদি তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তাদের আর কোনো ব্যবসায়িক অস্তিত্ব থাকবে না। এরা পথে বসে যাবে।
তিনি বলেন আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করছি, আপনি আমাদের ব্যবসাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী, আপনি ব্যবসায়ীদের অভিভাবক হিসেবে আমাদের প্রতি সদয় বিবেচনা করে আসন্ন ঈদুল ফিতর সামনে রেখে একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। যাতে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হই।

আপনাদের দাবি না মানা হলে আন্দোলনে যাবেন কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে দোকান ব্যবসায়ীদের এই নেতা বলেন, না আমরা আন্দোলনে যাব না। কারণ, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় ব্যবসায়ীদের পাশে ছিলেন। যখনই দুর্যোগ এসেছে তখন কোনো না কোনোভাবে তিনি আমাদের সাহায্য করেছেন।

কঠোর বিধিনিষেধের সময়টায় কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে তৌফিক এহেসান জানান, সারা বাংলাদেশে চার কোটি ব্যবসায়ী রয়েছে। তার মধ্যে আড়াই কোটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী। এর মধ্যে রয়েছে কর্মচারী ও তাদের পরিবার।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!