• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষনেতাদের আটকে কৌশলী পুলিশ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০১:১৩ পিএম
শীর্ষনেতাদের আটকে কৌশলী পুলিশ

ঢাকা : সারা দেশে মোদিবিরোধী বিক্ষোভের নামে তাণ্ডব চালানো হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাতজনসহ দেড়শতাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে শীর্ষনেতাদের গ্রেপ্তারে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেপ্তারের মধ্যে কোনো ধরনের বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলে সেটিও দমনে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সম্প্রতি তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পাশাপাশি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের তাণ্ডবের মামলাও সচল হয়েছে। পুরাতন ও নতুন মামলায় হেফাজতকে কোণঠাসা করে চারদিক দিয়ে এক প্রকার ঘিরে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।    

জানা গেছে, মোদিবিরোধী তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত হেফাজতের ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মামুনুল হকসহ হেফাজতের শীর্ষনেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া কেন্দ্রীয় নেতাদের সাম্প্রতিক মোদিবিরোধী নাশকতার মামলায়  গ্রেপ্তার না দেখিয়ে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজতকে কোণঠাসা করতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নতুন এই কৌশল নিয়েছে। একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলে সহসাই তাদের কারামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক নাশকতার অভিযোগ রয়েছে এবং আগেরও একাধিক মামলা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করছি। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এজাহারভুক্ত সব আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতি মোদিবিরোধী সহিংসতার ঘটনায় রাজধানী ঢাকার পল্টন ও মতিঝিল থানায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় হেফাজতের শীর্ষনেতাসহ অজ্ঞাতনামাসহ প্রায় দশ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে মোট ৭৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলাতেও হেফাজতের শীর্ষনেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় রাজধানীতে মোট ৫৩টি মামলা দায়ের হয়েছিল। এর মধ্যে চারটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছিল। বাকিগুলো এখনো তদন্তাধীন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সহিংসতার মামলাগুলোর তদন্তভার এখনো থানা-পুলিশের কাছেই রয়েছে। কিন্তু পুলিশ চলমান লকডাউন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছে ডিবি।

আগের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে হেফাজত নেতাদের। থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো ডিবিতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও চলছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে গ্রেপ্তারকৃতদের সাম্প্রতিক ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

গ্রেপ্তার হলেন যারা : হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ১১ এপ্রিল র্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদীকে। তাকে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তাণ্ডবে পল্টন থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলার ১৫৭ নম্বর আসামি হিসেবে আটক দেখানো হয়।

যদিও বলা হয়েছে, মোদিবিরোধী নাশকতার বিষয়ে পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

একই মামলায় ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহকে ও ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর তাণ্ডবে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলা রয়েছে।

মুফতি শরীফ উল্লাহকে ২০১৩ সালের ৬ মে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একইভাবে মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকেও গ্রেপ্তার করা হয় শাপলা চত্বরের ঘটনায় করা একটি মামলায়।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াসকে ১১ এপ্রিল আটক করে র্যাব। তাকে অবশ্য নাশকতার পরিকল্পনা, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানো, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৪ এপ্রিল রাজধানীর লালবাগ থেকে আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে আটক করে গোয়েন্দারা। মোদির সফরের বিরোধিতা করে রাজধানীতে সহিংস ঘটনায় পল্টন ও মতিঝিল থানায় হওয়া একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। তাকেও ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

১৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাকেও ২০১৩ সালের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৭ এপ্রিল আদালতে সোপর্দ করা হবে।

সর্বশেষ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ও বাংলাদেশে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার  বলেন, মাওলানা জালাল উদ্দিনকে ডিবির একটি টিম গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি সহিংসতার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (মতিঝিল বিভাগ) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে সহিংসতার ঘটনায় বেশ কিছু মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। সেসব মামলার দ্রুত তদন্ত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

মামুনুলকাণ্ডে মোড় ঘুরেছে : পুলিশ জানায়, হেফাজতের সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে সরকার হার্ডলাইনে রয়েছে। এ কারণে যাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা উসকানির অভিযোগ রয়েছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা কৌশল হিসেবে হেফাজতের মধ্যম সারির নেতাদের প্রথমে গ্রেপ্তার করছেন। একই সঙ্গে হেফাজত যেন আর মাঠে নেমে সহিংসতা চালাতে না পারে সেজন্য পুলিশ ও গোয়েন্দারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। মধ্যম সারির নেতাদের গ্রেপ্তারের পর শীর্ষ নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

নারীঘটিতকাণ্ডে মামুনুল হকের জড়িয়ে পড়াও নতুন মোড় দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এ ঘটনায় হেফাজত নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে সাইফ কাজী সমির ও কর্মী অহিদ ওরফে অহিদ হুজুরকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। মামুনুলকে নারীসহ আটকের জেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহাগ রনিকে হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টে হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশি কাজে বাধা এবং নাশকতার মামলার আসামি হিসেবে র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হয় সোনারগাঁও উপজেলার হেফাজতের আমির মহিউদ্দিন খান, সহসভাপতি মোয়াজ্জেম ও  সেক্রেটারি শাহাজাহান ওরফে শিবলী।

হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মো. জাকারিয়া নোমান ফয়েজি বলেন, চলতি মাসের ৭ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত দেড়শতাধিক হেফাজতকর্মীকেও আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন সাতজন।

গ্রেপ্তার হবেন মামুনুলও : গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, মামুনুল হককে গ্রেপ্তারে সময় নেওয়া হচ্ছে। একেক করে হেফাজতের মধ্যম সারির প্রায় সব নেতাকেই আটক করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষনেতা মামুনুল হককেও আইনের আওতায় আনা হবে।

কয়েকজন কর্মকর্তারা বলছেন, মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। যে-কোনো সময়ই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!