• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হেফাজতের নাশকতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৮, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম
হেফাজতের নাশকতা ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

ঢাকা : হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি মামুনুল হকের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশজুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। 

রোববার (১৮ এপ্রিল) মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর একাধিক জেলার পুলিশ সুপারের (এসপি) সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
 
হেফাজতের অতীত তাণ্ডবের অভিজ্ঞতা থেকেই ইতোমধ্যে চট্টগ্রামসহ হেফাজত অধ্যুষিত এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে এই সতর্কতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। 

রোববার (১৮ এপ্রিল) সকালে সকল এসপি ও রেঞ্জের ডিআইজিকে নিজ নিজ জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কেউ যাতে কোনোভাবেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, মানুষ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানা ছাড়াও মসজিদ, মাদরাসা ও পাড়া-মল্লায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে মামুনুলকে গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরে অভিযানের সময় প্রায় দু’শর বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।

এদিকে ডিএমপির একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় পুলিশ সদস্য বাড়ানো হয়েছে। রাস্তায় বা পাড়া-মহল্লায় চেকপোস্টে পুলিশি তল্লাশির পাশাপাশি বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মসজিদ, মাদরাসায় পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশের কোনো সদস্য যাতে একা একা ডিউটি না করেন বা বাইরে একা না ঘোরাফেরা করেন— সেই বিষয় খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে দুপুরের পর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জেলা শহরের  বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি র্যাব ও আর্মড পুলিশের সদস্যদেরও শহরজুড়ে টহল দিতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. রইছ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লকডাউনসহ চলমান পরিস্থতি বিবোচনায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো দুষ্কৃতিকারী যাতে কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য কয়েকদিন ধরেই শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার প্রলয় চিসিম বলেন, মামুনুল হকের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।

এদিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি- প্রশাসন) জামাল পাশা জানান, কয়েকদিন আগে ফরিদপুরের ভাঙা থানায় হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর থেকেই জেলার সবগুলো থানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। মামুনুল হকের গ্রেপ্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলেও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

একই কথা জাগরণকে জানিয়েছেন সিলেট ও সুনামগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তারা। সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদ উদ্দিন জানান, বিভিন্ন কারণে আগে থেকেই জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল। যেকোনো অভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা সতর্ক আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুনামগঞ্জের একজন পুলিশ সদস্য জানান, মামুনুল হকের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর অবস্থা যাতে না ঘটে, সেদিকে তারা লক্ষ্য রাখছেন। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত আছেন।

তবে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ জানান, তারা আগের মতোই আছেন। নতুন করে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

রোববার (১৮ এপ্রিল) বেলা পৌনে ১টার দিকে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে ২০২০ সালের মোহাম্মদপুর থানায় করা একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. হারুন-অর-রশিদ । মামুনুলকে সোমবার (১৯ এপ্রিল) আদালতে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।

ডিসি হারুন বলেন, মোহাম্মদপুর থানার একটি ভাঙচুর ও নাশকতার মামলায় তদন্ত চলছিল। তদন্তে হেফাজত নেতা মামুনুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ায় আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এছাড়া বায়তুল মোকাররম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারীর ঘটনার পর থেকেই তিনি নজরদারিতে ছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৩ এপ্রিল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই রিসোর্টে ভাঙচুর চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা।

এর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে হেফাজত ইসলামের সঙ্গে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েক জন আহত হয়। এছাড়া চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে থানা ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হেফাজত কর্মীদের হামলার পর সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। 

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাণ্ডব চালিয়ে রেলওয়ে স্টেশন অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, জেলা পরিষদ ভবন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের বাসভবন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে হেফাজত কর্মীরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!