• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃতদেহ দাফনে জড়িতরা করোনায় আক্রান্ত হননি


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৯, ২০২১, ০৭:২৭ পিএম
মৃতদেহ দাফনে জড়িতরা করোনায় আক্রান্ত হননি

ঢাকা : কোভিড-১৯ (করোনা) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে চরম ভীতি থাকলেও মৃতদেহ সৎকারে সম্পৃক্তদের কেউ এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হননি।

গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর মারা গেছেন ১০ হাজার ৮১ জন। শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদেহের সৎকার নিয়ে চরম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্বজনের লাশ ফেলে পালিয়ে যান অনেকে। গত বছরের জুন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের কবরস্থান বা শ্মশান সৎকারের জন্য নির্দিষ্ট করা হলেও এখন নেই বাধ্যবাধকতা। এখন স্বজনদের ইচ্ছানুযায়ীই মৃতদেহ সৎকার করা হচ্ছে।

গত বছরের ১৩ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে এক মাকে রাতের অন্ধকারে টাঙ্গাইলের সখীপুরে জঙ্গলে ফেলে যান সন্তানরা। আর মার্চের শেষ সপ্তাহে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন কাজে বাধা দেয় গ্রামবাসী। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে দাফন সম্পন্ন হয়। এরকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব লাশের সৎকারে এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ প্রশাসন।

যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সরকারে পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল মৃতদেহ থেকে ভাইরাস ছড়ায় না। গত বছরের ২৪ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) থেকে প্রকাশিত এই সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনের (ইনফেকশন প্রিভনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল ফর দ্য সেফ ম্যানেজমেন্ট অব অ্যা ডেড বডি ইন দ্য কন্টেক্স অব কোভিড-১৯) প্রকাশিত হয়। কিন্তু তারপরও ভীতি কাটছিল না সাধারণ মানুষের মন থেকে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে

মৃতদেহ দাফনে জড়িতরা : মৃত ব্যক্তির দাফন কার্যক্রম সম্পাদনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) মো. সাইফুল্লাহিল আজম এই প্রতিবেদনের  কথা উল্লেখ করে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তি ভাইরাস ছড়ায় না। এখন পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়নি যে মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। মৃতদেহ নিজ নিজ ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী জানাজা, দাফন বা সৎকার করা যাবে। 

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি আরো বলেন, মৃতদেহ পরিবহনের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো পরিবহনের দরকার নেই। মৃতদেহের গায়ে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছিটানোরও দরকার নেই। মৃতদেহ যিনি গোসল করাবেন, তিনি একটি মাস্ক, এক জোড়া গ্ল্যাভস এবং একটি ডিসপোজিবল গাউন পরবেন। কবর দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো সতর্কতা নেই। তবে সৎকারে অংশগ্রহণকারীদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া এই তথ্যের সত্যতা মেলে কোভিড-১৯ (করোনা) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের লাশ সৎকারের সাথে জড়িত অন্যতম বেসরকারি সংস্থা আল-মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশ-এর পরিসংখ্যানে। 

সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামজা শহীদুল ইসলাম জানান, গত বছরের মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের  ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের সংস্থার মাধ্যমে ৪ হাজার ১২৫টি লাশের সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু লাশ সৎকারের সাথে তাদের সংস্থার যেসব স্বেচ্ছাসেবী সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল এমন ২০ জনের কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। 

তিনি বলেন, গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনায় মৃত্যুর ঘটনায় মানুষ যখন স্বজনের লাশ হাসপাতাল, রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যাচ্ছিল তখন ওইসব লাশের সৎকারে এগিয়ে আসে আল মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশ। পরবর্তীসময়ে আরো দুটি সংস্থা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও রহমতে আলম সমাজসেবা সংস্থা এই কাজে যুক্ত হয়। 

মারকাজুলের সবাই বর্তমানে লাশ সৎকারের সাথে জড়িত থাকলেও মাঠপর্যায়ে সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন ২০ জন। যাদের সবাই আলেম ওলামা। গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত প্রথমে খিলগাঁও তালতলা ও পরে রায়েরবাজার কবরস্থানে করোনা আক্রান্তদের লাশ দাফন করা হলেও এরপর হু এর নির্দেশনামতে স্বজনদের কাছে করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের লাশ হস্তান্তর শুরু হয়। 

তিনি জানান, লাশ সৎকরের সাথে জড়িত তাদের সব স্বেচ্ছাসেবীদের তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এইসব স্বেচ্ছাসেবীদের অনেকেই পরিবারের সাথেই থেকেছেন। কিন্তু তারা নিজেরা কিংবা তাদের পরিবারের কেউ এ পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হননি।

এদিকে লাশ সৎকারের সাথে জড়িত আরেকটি বেসরকারি সংস্থা রহমতে আলম সমাজসেবা সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক জারিফ কাবির বলেন, সুরক্ষা পোশাক পিপিই, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমাসহ পুরো পোশাক পরে গরমের মধ্যে কাজ করা যে কতটা কষ্টসাধ্য তা বলে বোঝানো যাবে না। 

তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে কবরস্থানে কবর দেওয়া পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরাও কাছে আসেন না ভয়ে। তবে আমরা ভয় পাই না। গত বছরের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বললেন, এক মৃত ব্যক্তির ছেলে হাসপাতালে এলেও জানাজায় অংশ নিতে চাননি। 

আরেক মৃত ব্যক্তির ছোট ভাই জানিয়ে দেন, তিনি কোনো অবস্থাতেই হাসপাতালে আসবেন না। কয়েকটি ঘটনায় কোনো স্বজনকেই পাওয়া যায়নি। মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামিয়ে দিয়ে দলের সবার পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা পোশাক আগুনে পুড়িয়ে দিয়েই পরে ঘরে ফেরা সম্ভব হয়। 

তবে স্বেচ্ছাসেবীদের অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন না, থাকছেন সংস্থার নির্ধারণ করে দেওয়া জায়গায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে নিজেরা সুরক্ষিত থেকে লাশ সৎকার করছেন এবং এখন পর্যন্ত তাদের কোনো সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে জানান তিনি।

 সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!