• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউনে চরম ভোগান্তি শ্রমিক ও কর্মজীবীদের


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৩, ২০২১, ১১:৩৮ এএম
লকডাউনে চরম ভোগান্তি শ্রমিক ও কর্মজীবীদের

ঢাকা : রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে আশপাশের সাত জেলায় লকডাউনে চরম বিপাকে পড়েছেন কর্মজীবী ও শ্রমিকরা। কারণ পোশাক কারখানাসহ ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় তাদের বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে কর্মস্থলে।

কিন্তু সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করায় শ্রমিক-কর্মী ও অফিসগামী যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর গণপরিবহন না থাকায় বিকল্প উপায়ে অফিস ও কারখানায় যেতে তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এতে ক্ষুব্ধ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ।

মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীতে প্রবেশের সংযুক্ত মহাসড়ক ঢাকা-আরিচা ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক দিয়ে আমিনবাজারে প্রবেশ করতে পারছে না পরিবহন। এতে বৃষ্টিতে ভিজে, পায়ে হেঁটে, দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে ঢুকছে হাজারো মানুষ। কারো কারো কর্মস্থল রাজধানীতে হওয়ায় বাধ্য হয়েই কষ্ট করে যেতে হচ্ছে।

এছাড়া মোটরসাইকেল ও নিজস্ব পরিবহন, যেমন প্রাইভেটকার ছাড়া সব পরিবহনকেই থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে এসব পয়েন্টে। সড়কে যান চলাচল করতে না পারায় দীর্ঘ যানজটও দেখা গেছে ঢাকাগামী লেনে।

শিল্প-অধ্যুষিত গাজীপুরের শিল্পকারখানাগুলো খোলা থাকায় মঙ্গলবার সকালে সড়কে শ্রমিকদের চলাচল দেখা গেছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। আর গণপরিবহন না থাকায় বাধ্য হয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চলাচল করতে হচ্ছে অফিসগামী পোশাক কারাখানার শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীদের। এতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের।

নয়নপুর বাজার এলাকার পোশাক কারাখানার নারী শ্রমিকরা বলেন, করোনা সংক্রমণ কমানোর জন্য লকডাউন দিয়েছে, অন্যদিকে অফিসও খোলা রাখছে। তাই দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই আমাদের অফিসে যেতে হচ্ছে। কাজ না করলে তো অফিস বেতন দেবে না। তাই বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিয়েই অফিসে যাচ্ছি।

এদিকে মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে। সেখানে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপভ্যানসহ রিকশাও চলতে দেখা গেছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আল-আমিন জানান, লকডাউনে আমরা ভাড়া বাড়াইনি। আমাদের ইনকাম কম। এ লকডাউনে আমাদেরও তো খাইয়া-পইরা বাঁচতে হবে।

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, লকডাউনের প্রথম দিনে সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ রেখেছি। তবে জরুরি সেবায় বা ব্যক্তিগত কিছু গাড়ি চলছে। এছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কাছাকাছি দূরত্বের জন্য সড়কে রিকশাও চলছে।

নারায়ণগঞ্জের সর্বাত্মক লকডাউনেও তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা চালু রয়েছে। ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীসহ জেলার সব কারখানা চলছে পুরো দমে। তবে মঙ্গলবার লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রচ্ল বৃষ্টির মধ্যে কাজে যোগ দিতে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।

জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়সহ জেলার প্রবেশ পথের ৩০টি পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের ১৮টি মোবাইল টিম কাজ করছে লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য।

কাঁচপুুরের গার্মেন্টের শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কাজে যোগ দিতে তাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে কারখানায় পৗঁছাতে হয় বলে জানান তারা।

বিকেএমইএ’র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, লকডাউনের কারণে আমাদের শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে আসায় কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ নারায়ণগঞ্জের যেসব গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে এবং সে কারাখানায় কর্মরত শ্রমিকরা ইন্ডাস্ট্রির আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় থাকেন। এ কারণে অনেকেই পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারছেন।

বিকেএমইএ’র আরেক সহসভাপতি (অর্থ) সোহেল সারোয়ার জানান, কোভিড শুরুর পর থেকেই শ্রমিকদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক নিশ্চিত করে তাদের কর্মস্থলে প্রবেশ করানো হচ্ছে। শরীর তাপমাত্রাও মাপা হচ্ছে।

নগরীর চাষাঢ়া পয়েন্টে দায়িত্বপালনরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুরুনবী সোহাগ জানান, লকডাউনের প্রথম দিন হওয়ায় আমরা সকাল থেকে যারা রাস্তায় যানবাহন নিয়ে বের হয়েছেন তাদের বুঝিয়ে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর যারা চিকিৎসাসহ জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন কিংবা আমাদের কাছে বাসা থেকে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ বোঝাতে পারছেন তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, সকাল থেকে পুলিশ কাজ করছে। চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিটি যানবাহনকে থামিয়ে বের হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ জানা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কেউ সড়কে বের হলে তাকে যানবাহনসহ ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে চেকপোস্টগুলোতে তৈরি পোশাক শ্রমিক ও কর্মীদের পরিবহন করা সব গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, লকডাউনের মধ্যেই সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কারখানা পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সকালে অফিসগামী যাত্রী নিয়ে ঢাকায় বাস প্রবেশ করতে দেখা গেছে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরাও তেমন একটা বাধা দিচ্ছেন না। তবে দূরপাল্লার কোনও বাস ছেড়ে যাওয়া বা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সকালে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও শনিরআখড়া এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মানিকগঞ্জ জেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আজ অন্যদিনের মতো সড়কে লোকজনের চলাচল ছিল না। স্বাভাবিক সময়ের মতো হ্যালোবাইক, রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা সড়কে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় সকালে কর্মস্থলে রওনা হয়ে বিপাকে পড়েন শ্রমিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।

লকডাউনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জেলার অভ্যন্তরের কোনো গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। শুধু দক্ষিণাঞ্চলের দূরপাল্লার নৈশকোচগুলো পাটুরিয়া থেকে ঢাকার গাবতলী অভিমুখে চলাচল করতে দেখা গেছে।

সরকারে নির্দেশনার আওতামুক্ত যানবাহন ছাড়া কোনো গণপরিবহন চলাচল করতে দিচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট রুটে পণ্যবাহী ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া ফেরিযোগে কোনো যানবাহন পারাপার হচ্ছে না। পাশাপাশি সকাল থেকে উল্লিখিত দুটি রুটে কোনো লঞ্চ ও স্পিডবোটও চলাচল করছে না।

লকডাউনের মধ্যেও মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরের মুক্তারপুরে ও গজারিয়া উপজেলার প্রায় সব কারখানা খোলা আছে। সদরে টেক্সটাইল মিল ও সিমেন্ট কারখানাসহ প্রায় ২৫-৩০টি কারখানা এবং গজারিয়ায় পেপার মিল, লোহার কারখানাসহ প্রায় ২৫টি কারখানা রয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের মধ্যেও এসব কারখানার অনেক শ্রমিক ও স্টাফদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ কারখানার নিজস্ব পরিবহনে, কেউ মিশুক বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে কর্মস্থলে পৌঁছেছেন। এতে ভোগান্তির শিকার হন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা

প্রসঙ্গত, করোনার ভয়াবহ প্রকোপ থেকে রাজধানী ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে আশপাশের সাত জেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই লকডাউন চলবে।

সোমবার (২১ জুন) বিকালে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম লকডাউনের কথা জানান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!